বন্ধই হয়ে গেল ইংরেজি দৈনিক দ্য ইনডিপেনডেন্ট

মহামারী সঙ্কটের শুরুতে ‘সাময়িকভাবে’ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মুদ্রণ; অনলাইন সংস্করণটি শুধু চলছিল; এবার স্থায়ীভাবেই বন্ধ হয়ে গেল ইংরেজি দৈনিক দ্য ইনডিপেনডেন্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2022, 05:25 PM
Updated : 30 Jan 2022, 05:25 PM

রোববার পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের উপস্থিতিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে মালিকপক্ষ।

পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক শামীম এ জাহেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ থেকে স্থায়ীভাবে ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকা বন্ধ করা হল। এটা আমাদের মালিকপক্ষের সিদ্ধান্ত। আমাদের প্রধান সম্পাদক এম শামসুর রহমান আজ বৈঠক করে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন।”

পত্রিকার ‘নিয়ম অনুযায়ী’ সকলের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দেওয়া হবে বলে জানান নির্বাহী সম্পাদক।

কিন্তু ওই প্রতিশ্রুতিতে এ পত্রিকার দীর্ঘদিনের কর্মীদের হতাশা আর কষ্ট সারার নয়।

একেবারে শুরু থেকে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে ইনডিপেনডেন্টে কাজ করে আসছিলেন মঞ্জুরুল হক মঞ্জু। ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে এ পত্রিকার খেলার পাতা তার হাত দিয়েই বের হত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রায় দুই বছর ছাপা বন্ধ হলেও অনলাইন চালু ছিল। আজ যখন মিটিং ডাকল, আশা করেছিলাম হয়ত আবার ছাপা শুরু হবে। কিন্তু প্রধান সম্পাদক যখন বললেন, আজ থেকে আমরা লে অফে যাচ্ছি, তখন খুব শকড হয়েছি।”

দ্য ইনডিপেনডেন্টের যাত্রা শুরু ১৯৯৫ সালে ২৬ মার্চ। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানি ইনডিপেনডেন্ট পাবলিকেশন্স লিমিটেড যে কটি সংবাদমাধ্যমের সূচনা করেছিল, ইনডিপেনডেন্ট তার একটি।

ওই বছরই ইনডিপেনডেন্টের পাশাপাশি শৈলী ও আনন্দভূবন নামে দুটি ম্যাগাজিন এবং বাংলা দৈনিক মুক্তকণ্ঠ প্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রকাশনা জগতে প্রবেশ করে বেক্সিমকো গ্রুপ।

কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে পিছিয়ে পড়তে থাকা পত্রিকাগুলো এক সময় বেক্সিমকোর জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। বন্ধ হয়ে যায় দৈনিক মুক্তকণ্ঠ ও শৈলী। পরে একই পথ ধরে আনন্দভূবন।

অনেক পরে, ২০১০ সালে যাত্রী শুরু করা এ কোম্পানির টেলিভিশন স্টেশন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনই এখন টিকে থাকল। 

ইনডিপেনডেন্টের সূচনা লগ্নে ডেইলি অবজারভারের থেকে এসে সম্পাদক হিসেবে এ পত্রিকার হাল ধরেছিলেন সাংবাদিক মাহবুব উল আলম চৌধুরী (বেবী ভাই)

তবে পত্রিকার শুরুতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন মাহবুবুল আলম। পরে তিনিই সম্পাদক হন।

দেশের সংবাদপত্র জগতে ব্যবহৃত কাগজের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ফর্সা, আমদানি করা নিউজপ্রিন্টে চাররঙা ঝকঝকে ছাপায় ১৬ পৃষ্ঠার ইনডিপেনডেন্ট শুরুতেই পাঠকদের নজর কাড়তে পেরেছিল।

দুই বছরের মাথায় ইনডিপেনডেন্টই প্রথম বাংলাদেশে ৩২ পৃষ্ঠার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন চালু করে আলোচনার জন্ম দেয়। পরে অন্য প্রায় সব পত্রিকাই সে ধারা অনুসরণ করে।

অবশ্য সেই সুদিন বেশিদিন টেকেনি, মন্দার বাজারে পত্রিকাটি শুধু টিকে থাকার কৌশল নেয়।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবার যখন গণমাধ্যমের বাজারে জোয়ার এল, ২০১০ সালে চালু হল ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন। একইসঙ্গে ইনডিপেনডেন্টও প্রকাশিত হতে থাকল নতুন আঙ্গিকে। 

সম্পাদক মাহবুবুল আলম সে সময় বলেছিলেন, "১৫ বছর পর আবারো নতুন ধারা সৃষ্টি করাই আমাদের উদ্দেশ্য।"

১৮ বছর ইনডিপেনডেন্টের সম্পাদক ছিলেন মাহবুবুল আলম। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথ্য উপদেষ্টা হয়েছিলেন তিনি।

তার মৃত্যুর পরে দায়িত্ব নেওয়া এম শামসুর রহমানই ইনডিপেনডেন্টের সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার সময়ে ২০২০ সালের এপ্রিলে পত্রিকাটি সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায়।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অফিস-আদালত বন্ধ করে দিয়ে তখন শুরু হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় হকারের মাধ্যমে আসা ছাপানো সংবাদপত্র রাখা বন্ধ করে দিলেন অনেকে।

সে সময় ঢাকায় সংবাদপত্রের বিক্রি এক ধাক্কায় অর্ধেকে নেমে আসে। ওই পরিস্থিতিতে লোকসান এড়াতে কয়েকটি পত্রিকা ছাপানো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। ৬ এপ্রিলে সেই তালিকায় নাম লেখায় ইনডিপেনডেন্ট।

ছাপাখানায় যাওয়া বন্ধ হলেও অনলাইন সংস্করণ চালু থাকায় কর্মীদের আশা বেঁচে ছিল। রোববার মালিকপক্ষের ঘোষণায় তাও নিভে গেল।

ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবু জাকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পড়ালেখা শেষ করে সোনালী ব্যাংক আর ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকায় এক সঙ্গে চাকরি হয়েছিল। সাংবাদিকতা ভালোবাসি বলে এখানেই থেকে গেলাম।

“২০১০ সাল থেকে এখানে কাজ করে যাচ্ছি, কিন্তু আজ সেই পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেল। এই পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাবে এটা কখনও ভাবিনি।”

ক্রীড়া সম্পাদক মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, “আমাদের বলেছে বকেয়া পাওনা খুব অল্প সময়ের মধ্যে দিয়ে দিবে। কয়েক বছর আগে আমাদের বলা হয়েছিল ওয়েজ বোর্ড থেকে বের হয়ে চুক্তিভিক্তিক বেতনে গেলে পত্রিকার জন্য ভালো হবে। তখন পত্রিকার স্বার্থেই আমরা রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু আগে যতদিন ওয়েজ বোর্ডে ছিলাম, সেই হিসাবটাও করা হয়নি। অনেকে হয়ত প্রতিবাদ করেনি, কিন্তু তাদেরও মনোকষ্ট আছে। এভাবে পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাবে, সেটা তো আমরা কেউ চাইনি।”