গণমাধ্যমকে ভাষার ব্যবহারে সংবেদনশীল হওয়ার পরামর্শ

সংবাদ পরিবেশনে ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হওয়ার পরামর্শ এসেছে একটি বৈঠক থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2021, 07:25 PM
Updated : 30 Nov 2021, 07:25 PM

মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টটিউটে সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মিডিয়া ইন ডেভেলপমেন্ট (সাকমিড) আয়োজিত ‘সংবাদে জেন্ডার ভিত্তিক উপস্থাপনা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠক হয়।

এতে ওয়ার্ল্ড ভিশনের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড জাস্টিস বিভাগের উপপরিচালক নিশাত সুলতানা বলেন, “ভাষার মাধ্যমে ক্ষমতার চর্চা করা হয়। আমরা ছোটবেলা থেকেই একটি পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বড় হয়েছি। অনেক সময় অবচেতন মনে কিছু শব্দ ব্যবহার করে ফেলি, যা উচিৎনয়।

“সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভাষার ব্যবহার। ভাষা ব্যবহারে গণমাধ্যমকে আরও বেশি সংবেদনশীল হতে হবে, দায়িত্বশীল হতে হবে।”

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম শামীম রেজা বলেন, “অনেকদিন থেকেই গণমাধ্যমে নারীর উপস্থাপন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, তারপরও গত দুই দশকে অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। গবষেণায়ও নতুনত্ব আনা প্রয়োজন।

জেন্ডার ও গণমাধ্যমের ওপর গবেষণার বিষয়ে প্রশিক্ষণ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, “গণমাধ্যমে নারীর উপস্থাপন বা অংশগ্রহণে অনেক পরিবর্তন এসেছে, আরও পরিবর্তন আসবে।

“শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু যেভাবে কমে এসেছে, নারীর প্রতি বৈষম্য, নির্যাতনও ঠিক সেভাবে কমে আসবে। সেক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ভাষার ব্যবহারে সংবেদনশীল হতে হবে।”

সংলাপ অনুষ্ঠানে চলতি বছরে সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মিডিয়া ইন ডেভেলপমেন্ট (সাকমিড) প্রাইমড (প্রটেক্টিং ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিডিয়া ফর ইফেক্টিভ ডেভেলপমেন্ট) প্রকল্পের ’ইনক্লুশন’ থিমের আওতায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম সংবাদের বিষয়বস্তুতে কীভাবে জেন্ডারকে উপস্থাপন করা হয় তার পর্যবেক্ষণ ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ছয়টি নির্বাচিত সংবাদ মাধ্যমের ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

সাকমিডের প্রকল্প সমন্বয়ক আফিয়া সুলতানা পিনা গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “তিন মাসে ১ হাজার ৪২৩টি সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে আমরা দেখেছি, শতকরা ৯০ দশমিক ৩ ভাগ বাইলাইন সংবাদে সাংবাদিক ছিলেন পুরুষ। অপরদিকে মাত্র ৯ দশমিক ৭ শতাংশ সংবাদে সাংবাদিক ছিলেন নারী।

“তবে টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে নারীদেরকেই বেশি দেখা গেছে। টেলিভিশনের পর্যবেক্ষণকৃত মোট ৪৯৩টি সংবাদের মধ্যে ৩১৫টি সংবাদেই উপস্থাপক ছিলেন নারী।”

অন্যদিকে নারীদেরকে সংবাদে ঘটনার ভুক্তভোগী হিসেবেই বেশি দেখানো হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মোট ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ ক্ষেত্রে নারীদের ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, খুন ইত্যাদির ভুক্তভোগী দেখানো হয়েছে।

“অপরদিকে নারীদেরকে বিশেষজ্ঞ বা মুখপাত্র হিসেবে তেমন একটা দেখা যায় নি। মাত্র ১২ দশমিক ৬১ শতাংশ ক্ষেত্রে তাদেরকে মুখপাত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীর নিজের পরিচয় সংবাদে তেমন উঠে আসে না। মোট ৩০ দশমিক ২ শতাংশ ক্ষেত্রে নারীরা পরিবারের পুরুষ সদস্যের পরিচয়ে পরিচিত হয়েছেন।

এছাড়া সংবাদে নারীদের মতামত গ্রহণের হারও কম বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সংবাদগুলোতে পুরুষের উদ্ধৃতি এসেছে মোট ৬০ শতাংশ। অপরদিকে নারীদের উদ্ধৃতি এসেছে ৩৩ শতাংশ। আবার টেলিভিশনের ক্ষেত্রে পুরুষের ভক্সপপ এসেছে ৭৮ দশমিক ৫ শতাংশ।