নঈম নিজামের বক্তব্য ‘শুনতে চায়’ সম্পাদক পরিষদ

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে সরাসরি নঈম নিজামের বক্তব্য জানতে চায় দেশের মুদ্রিত সংবাদপত্রগুলোর একটি অংশের সম্পাদকদের এই সংগঠন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2021, 07:39 PM
Updated : 29 July 2021, 07:39 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে পরিষদের এক ভার্চুয়াল সভা থেকে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্য রিয়াজ উদ্দীন আহমেদকে এ বিষয়ে নঈম নিজামের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সম্পাদক পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “২৭ জুলাই সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে নঈম নিজামের পদত্যাগের একতরফা সিদ্ধান্তের প্রকাশ্য ঘোষণায় সম্পাদক পরিষদে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। পরিষদের সভাপতির সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে দেশের বাইরে থেকে ঘোষণা দিয়েছেন।”

এ প্রেক্ষাপটেই সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে ওই জরুরি ভার্চুয়াল সভা হয় জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় “সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়- সংগঠনের ঐক্যের বৃহত্তর স্বার্থে নঈম নিজামের কাছ থেকে সরাসরি তার অভিযোগ শুনতে চায় সম্পাদক পরিষদ।”

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজামের আগামী ৩১ জুলাই দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পরিষদের সিনিয়র সদস্য রিয়াজ উদ্দীন আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত নঈম নিজামকে ব্যক্তিগতভাবে জানাবেন এবং পরবর্তী সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ করবেন।”

রিয়াজ উদ্দীন আহমেদকে আগামী সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে অনুরোধ করেছে সম্পাদক পরিষদ।

সম্পাদক পরিষদের কমিটি পুনর্গঠনে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে মাহফুজ আনাম সভাপতি ও নঈম নিজাম সাধারণ সম্পাদক হন।

সভাপতির ‘গঠনতন্ত্রবিরোধী এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদেই’ নঈম নিজাম সাধারণ সম্পাদকের পদ ছেড়েছেন বলে মঙ্গলবার তার সম্পাদিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে দাবি করা হয়।

বাংলাদেশে প্রতিদিনের মতো বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন অন্য সংবাদমাধ্যমগুলোতেও এই খবর আসে।

তাকে উদ্ধৃত করে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “উদ্ভূত কিছু পরিস্থিতির কারণে সম্পাদক পরিষদের সভাপতির সঙ্গে নীতিগত মনোভঙ্গি একমত না থাকার কারণে আমি সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

সেই সঙ্গে অনামা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, “সভাপতি মাহফুজ আনাম সংগঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে সংবাদপত্র মালিকদের কারও কারও বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ এনে ব্যক্তিগত কুৎসাচারে লিপ্ত হন। এ বিষয়টি নিয়ে সভাপতি মাহফুজ আনামের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নঈম নিজামের তীব্র মতভেদ দেখা দেয়।”

বসুন্ধরা গ্রুপের অনলাইন সংবাদপত্র বাংলানিউজ নঈম নিজামের একটি বিবৃতিও প্রকাশ করে, তাতে বলা হয়, “আমরা পরস্পর ঐক্য ধরে রেখে একটি ইতিবাচক অবস্থান নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু কঠিন বাস্তবতা হলো, সরকারের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে বিবৃতি প্রদান ছাড়া সম্পাদক পরিষদ আর কোনো কিছু নিয়ে কাজ করছে না। সম্পাদকদের একটি প্রতিষ্ঠান শুধু সরকারবিরোধী ভাব নিয়ে চলতে পারে না।

“পরিষদ পেশার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছে না। শুধু সভাপতির ব্যক্তিগত ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠান চলছে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের স্বার্থ রক্ষা সম্পাদক পর্ষদের কাজ হতে পারে না। এই সব তৎপরতা মিডিয়ার জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। কোনো অপরাধ প্রমাণের আগে কোনো মিডিয়া মালিকের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।”

বিষয়টি নিয়ে নঈম নিজামের সঙ্গে কথা বলতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে নানা মাধ্যমে চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

নঈম নিজাম বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদকের পাশাপাশি বসুন্ধর গ্রুপের টেলিভিশন স্টেশন নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের স্বামী।

নঈম নিজামের পদত্যাগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বুধবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি একটা স্টেটমেন্ট ইস্যু করেছি। এর বাইরে এ মুহূর্তে আমি আর কিছু বলছি না। স্টেটমেন্টে সব আছে।”

‘নঈম নিজামের পদত্যাগ বিষয়ে মাহফুজ আনামের বক্তব্য’ শিরোনামে সম্পাদক পরিষদের প্যাডে বুধবার পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে নঈম নিজামের পদত্যাগের সংবাদে আমি বিস্মিত ও মর্মাহত।

“গতকাল মঙ্গলবার রাতে তিনি নিউ ইয়র্ক থেকে টেলিফোনে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু, তার পদত্যাগপত্র আমি এখনও পাইনি। সম্পাদক পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরিষদের অবস্থান জানানো হবে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “সম্পাদক পরিষদের যে কোনো সিদ্ধান্ত সদস্যদের মধ্যে আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতেই নেওয়া হয়। কখনই এর ব্যত্যয় ঘটেনি।

“আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, তার সঙ্গে আমার কর্মক্ষেত্রের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার এবং পরিষদ পরিচালনার বিষয়ে তার সঙ্গে আমার কখনই কোনো মতানৈক্য হয়নি।”