প্রতিবেদন মুছতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে চাপ: ‘মানহানির’ অভিযোগের বিষয়ে আদেশ পেছাল

ডা. এইচ বি এম ইকবাল এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে পুরনো প্রতিবেদন মুছে ফেলার জন্য নানাভাবে চাপ দেওয়ার পর বরিশালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ চার সম্পাদকের বিরুদ্ধে ‘মানহানির’ যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সে বিষয়ে আদালতের আদেশ পিছিয়ে গেছে।

বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2021, 02:54 PM
Updated : 25 Feb 2021, 03:01 PM

বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বৃহস্পতিবার মামলাটি আমলে নেওয়ার প্রশ্নে আদেশ হওয়ার কথা ছিল। তবে বিচারক পলি আফরোজ তা পিছিয়ে আদেশের জন্য ১০ মার্চ নতুন তারিখ রেখেছেন বলে আদালতের বেঞ্চ সহকারী রাজিব হাসান জানিয়েছেন।

কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল নামের এক ব্যক্তি বুধবার বরিশালের হাকিম আদালতে ওই মামলার আবেদনটি করেন, যিনি নিজেকে ডা. ইকবালের ‘বন্ধু’ হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, হেড অব ইংলিশ নিউজ অরুণ দেবনাথ, বার্তা সম্পাদক জাহিদুল কবির এবং বার্তা সম্পাদক মুনীরুল ইসলামকে ওই আর্জিতে বিবাদী করা হয়েছে।

প্রিমিয়ার গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এইচ বি এম ইকবাল এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গত দেড় দশকে বিভিন্ন সময়ে যেসব মামলা হয়েছে, তার কার্যক্রম আর আদালতের আদেশ নিয়ে অন্য সব সংবাদমাধ্যমের মতো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেসব মামলা থেকে তারা অব্যাহতিও পেয়েছেন।

কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল তার আর্জিতে দাবি করেছেন, ২০০৭, ২০০৮, ২০১০, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের ওইসব প্রতিবেদন ছিল ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। ডা. ইকবাল ও তার পরিবারের সদস্যরা ওইসব মামলায় খালাস পেয়ে গেলেও মামলার কার্যক্রম নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পুরনো প্রতিবেদনগুলো এখনও অনলাইনে রয়েছে রয়ে গেছে। আর তাতে দেশ-বিদেশে ডা. ইকবাল ও তার পরিবারের ‘সম্মানহানি হচ্ছে’।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী রাজিব হাসান বুধবার বলেন, “বাদী তার আর্জিতে বলেছেন, সংবাদগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিবাদীদের দুটি উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে সন্তোষজনক কোনো জবাব দেননি। এই প্রেক্ষিতে ডা. ইকবালের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী পরিচয়দানকারী নাসির উদ্দিন বাবুল ২০০ কোটি টাকার মানহানি মামলার ওই আবেদন করেছেন।”

প্রথম নোটিস

কাজী নাসির উদ্দিন বাবুলের পক্ষে বরিশালের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান জুয়েলের পাঠানো প্রথম নোটিসটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম হাতে পায় জানুয়ারির শেষে।

সেখানে বলা হয়, “বিগত ইংরেজি ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখ আপনাদের দ্বারা পরিচালিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ডা. এইচ বি এম ইকবালকে নিয়ে একাধিক সংবাদ পরিবেশন করা হইয়াছে, যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা কাল্পনিক ও বানোয়াট বটে।

“উক্ত মিথ্যা সংবাদ আপনি নোটিস গ্রহীতাগণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করিয়া বিভিন্ন ফেইসবুকে শেয়ার এবং বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় শেয়ার করেন। ফলে দেশে এবং বিদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখিতে পাইয়া আমার মোয়াক্কেলের চরিত্র হীন হয়েছে। যাহা শত কোটি টাকার দ্বারাও পরিমাপ করাও সম্ভব নহে।”

ওইসব সংবাদের কারণে ডা. ইকবাল ‘মানসিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন’ হয়েছেন দাবি করে নোটিসে বলা হয়, “যাহা আমাদের দেশে প্রচলিত আইনের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে বটে।

“আমার বিশ্বাস, আপনারা সংবাদ পরিবেশনায় আমার মোয়াক্কেলের প্রতিপক্ষ দ্বারা অবৈধভাবে প্রভাবিত হইয়াছেন। আপনাদের সদয় অবগতির জন্য আরও জানানো যাইতেছে যে, আমার মোয়াক্কেল হলফ করিয়া বলিতে পারে যে, তাহার বিরুদ্ধে সঠিক দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নাই।”

ডা. ইকবালের দুই ছেলে মঈন ইকবাল ও ইমরান ইকবাল এবং মেয়ে নওরীন ইকবাল ও স্ত্রী মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে দুদকের এক মামলার বিচারিক কার্যক্রমের ভিত্তিতে ২০০৭, ২০০৮, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের বিভিন্ন তারিখে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনও ’মিথ্যা’ বলে দাবি করা হয়েছে ওই নোটিসে।

সেসব সংবাদ যে ‘বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়’ প্রকাশিত হয়েছে, সে কথা উল্লেখ করা হলেও নোটিসে আবার অভিযোগ করা হয়েছে, “উক্ত মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনে একমাত্র উদ্দেশ্যেই হল নোটিশ দাতার বন্ধু ডা. এইচ বি এম ইকবাল এবং তাহার পরিবারের সম্মান হানী করা।”

নোটিসের শেষাংশে বলা হয়, “অতএব আপনাদের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে না অত্র নোটিস প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে আমার বরাবরে কারণ দর্শাইবেন এবং আপনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মাধ্যমে মিথ্যা, ভিত্তিহীন বলে আমার মোয়াক্কেল বরাবর নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করিবেন।

“অন্যথায় আপনাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে আমার মোয়াক্কেল বাধ্য হইবেন।”

নোটিস পাওয়ার পর ২ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সাংবাদিকতার নিয়ম অনুযায়ী নোটিসদাতা আইনজীবী এবং ডা. এইচ বি এম ইকবালের সঙ্গে সে সময় কথাও বলা হয়।

আইনজীবী জুয়েল সে সময় বলেছিলেন, নোটিসদাতা কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল বরিশালের একজন ‘প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, আজকের বার্তা পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক’।

দেশের মূলধারার সব গণমাধ্যমে যেহেতু ওইসব মামলা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সবাইকে উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছে কি-না জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, “হয়ত করবে। অন্যান্য জায়গায় যেগুলো হয়েছে করবে। অন্যগুলো এখন হয়েছে কি-না ইনফর্ম করতে পারব না।”

আর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের উত্তরে সাবেক সাংসদ ইকবাল তখন বলেছিলেন, “আমাদের ওয়ান-ইলেভেনের কেইস আজকে ১২ বছর হয়ে গেছে। এগুলো হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট থেকে কোয়াশ-আউট করে দিছে, আপনারা লোয়ার কোর্টের এটা সারা পৃথিবীতে জানায় রাখতেছেন।”

ডজন ডজন নোটিস

ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন নতুন উকিল নোটিস আসা শুরু হয়। এ পর্যন্ত দুই ডজন জেলা থেকে তিন ডজনের বেশি নোটিস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঠিকানায় পৌঁছেছে।

ভিন্ন ভিন্ন নামে পাঠানো হলেও সবগুলো নোটিসের ভাষা, বক্তব্য ও দাবি একই রকম। সেখানে পুরনো বক্তব্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে ২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নিয়ে তাদের আপত্তির কথা। 

নতুন নোটিসগুলোতে বলা হয় ওই প্রতিবেদনও নাকি ‘ভিত্তিহীন’; অথচ তাদের পাঠানো নোটিস এবং তাদের বক্তব্যের ভিত্তিতেই ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

এর মধ্যে ফরিদপুর থেকে পাঠানো একটি নোটিসে হুমকির সুরও রয়েছে। সেখানে বলা হয়, “অত্র লিগ্যাল নোটিস দ্বারা এই মর্মে আরও সতর্ক করা যাইতেছে যে, এরপর কোনোরূপ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করিলে আমার মোয়াক্কেল, আপনাদের ও আপনাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকিবেন। আপনারা আপনাদের প্রকাশিত সংবাদের ব্যাপারে ভুল স্বীকার পূর্বক বিজ্ঞপ্তি প্রদান করিবেন। অন্যথায় বিরূপ পরিণতির জন্য আপনারা দায়ী থাকিবেন।”

উকিল নোটিস পাওয়ার পর তার জবাব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। প্রথমে বরিশাল থেকে কাজী নাসির উদ্দিন বাবুলের আইনজীবী জুয়েলের পাঠানো নোটিসের জবাব দেওয়া হয় আইনজীবীর মাধ্যমে।

এরপর আইনজীবী জুয়েলের পাঠানো দ্বিতীয় নোটিসটি বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কার্যালয়ে পৌঁছায়, যেখানে ১৮ ফেব্রুয়ারির তারিখ দেওয়া ছিল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে জবাব পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে সেখানে বলা হয়, “আপনারা নোটিশ জবাব গ্রহীতাগণ ইচ্ছাকৃত ভাবে আপনাদের প্রকাশিত সংবাদ ডিলেট বা মুছে ফেলেন নাই। যাহা ‍খুবই লজ্জাজনক ও দুঃখজনক।

“অতএব আগামী ০৩ (তিন) কার্যদিবসের দিনের মধ্যে নিউজ পোর্টাল থেকে প্রত্যাহার পূর্বক ডা. এইচ বি এম ইকবাল ও তাহার পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করিলে আপনাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।”

তাদের দাবি অনুযায়ী কাজ না করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং ‘সম্মান নষ্ট করার জন্য’ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় ওই নোটিসে।

দ্বিতীয় ওই নোটিস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যেদিন হাতে পেয়েছে, সেদিনই বরিশালের আদালতে মামলার আবেদন করেন ডা. ইকবালের বন্ধু হিসেবে পরিচয়দাতা কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল।

পুরনো যেসব খবর সরিয়ে ফেলার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে

Dulal remanded in 2001 Malibagh shooting  

Published: 22 Oct 2007 03:54 PM BdST

HBM Iqbal jailed for 13 years  

Published: 11 Mar 2008 12:00 PM BdST

Ex-AL MP Iqbal sent to jail in wealth case  

Published: 28 Feb 2010 11:18 AM BdST

Banker, ex-AL MP Iqbal sent to jail in wealth case  

Published: 28 Feb 2010 03:57 PM BdST

AL leaders relieved from 2001 murder case  

Published: 26 Aug 2010 07:10 AM BdST

Four injured in reckless driving by ex-Awami League MP HBM Iqbal’s underage nephew at Gulshan  

Published: 14 Oct 2015 12:30 AM BdST

Top court upholds conviction of former MP Iqbal's wife, children for corruption  

Published: 27 Nov 2016 02:51 PM BdST

Former AL lawmaker Iqbal's wife, two sons and daughter land in jail  

Published: 08 Mar 2017 04:30 PM BdST

Ex-MP Iqbal's wife, three children appeal against conviction in ACC case  

Published: 09 Mar 2017 09:57 PM BdST

Arrest warrant out for Premier Bank Chairman HBM Iqbal  

Published: 02 Jul 2017 10:42 PM BdST

 

‘আইনিভাবেই মোকাবেলা’

পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ওই চাপের বিষয়গুলো জানাতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

সেখানে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে কোথাও ভুল হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তা স্বীকার করব, সংশোধন করার প্রয়োজন হলে সাংবাদিকতার নিয়ম মেনে তাও করবে। কিন্তু চাপের কাছে নতি স্বীকার করে কোনো খবর তুলে নেওয়া হবে না।

“বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব কোনো অনুসন্ধান এসব প্রতিবেদনে নেই; সম্পূর্ণভাবে মামলার কার্যক্রম ও আদালতের আদেশই সেখানে বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তাহলে কোন যুক্তিতে একটি সংবাদমাধ্যম এসব প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলবে?”

“আমাদের বার বার বলা হয়েছে, অন্যরাও নাকি এ বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলেছে। বিভিন্নভাবে তদবির করানো হয়েছে প্রভাবশালীদের দিয়ে, যাদের মধ্যে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিও আছেন। বলা হয়েছে, তারা সরিয়ে ফেলেছেন, আমরা কেন তা করছি না। দীর্ঘদিন নানাভাবে চেষ্টার পরও প্রতিবেদন সরাতে রাজি করাতে না পেরে এখন তারা চাপ দেওয়ার অদ্ভুত এক কৌশল নিয়েছেন।”

যেসব খবর সরিয়ে ফেলার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর একটি তালিকাও সেদিন সাংবাদিকদের সরবরাহ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

যেসব উকিল নোটিস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে পাঠানো হয়েছে, সেগুলোর মোদ্দা কথা হল, যেহেতু তারা আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, সেহেতু, তাদের দাবি অনুযায়ী, ওইসব মামলা নিয়ে পুরনো প্রতিবেদনও আর রাখা যাবে না।

তাদের এমন দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ হিসেবে বর্ণনা করে তৌফিক খালিদী বলেন, “মামলার কার্যক্রম ও আদালতের আদেশ নিয়ে যেসব খবর বাংলাদেশের মূল ধারার সব সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ করেছে, সেই একই খবর প্রকাশের জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিরুদ্ধে ‘উদ্দেশ্যমূলক সম্মানহানী’ ঘটানোর অভিযোগ করা হচ্ছে।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের লিখিত বিবৃতিতে সেদিন বলা হয়, “এসব নোটিস পাঠাচ্ছেন কারা? যার সংক্ষুব্ধ হওয়ার কথা তিনি নন, অন্য কেউ। এর উদ্দেশ্য আমাদের হয়রানি করা; ভয় দেখানো, যাতে আমরা প্রতিবেদনগুলো সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবি। এবং তাদের বিষয়ে ভবিষ্যতে খবর প্রকাশের ক্ষেত্রেও আমরা যেন ভয়ে থাকি।”

এ ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার প্রত্যয় জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক বলেন, “আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমি কোন যুক্তিতে তুলব। কোন নীতির ভিত্তিতে করব, কোন প্রিন্সিপল ফলো করব, কোন ক্রাইটেরিয়া ফলো করব, কিসের ভিত্তিতে? তাহলেতো আমাদের সব তুলে ফেলত হবে, কিছুই থাকবে না।

“আর্কাইভে এই সব তথ্য থাকবে। তরুণ সহকর্মীদের জন্য থাকবে, ভবিষ্যতে গবেষণার জন্য থাকবে। তারা যখন ভবিষ্যতে প্রতিবেদন করবে, সেটার পটভূমি জানার জন্য থাকবে। এই জিনিসগুলো থাকবে।”

হুমকিদাতারা মামলা করলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আইনি পথেই লড়বে জানিয়ে প্রধান সম্পাদক বলেন, “বিচারকতো অন্ধ নন। বিচারকতো জানেন, বিচারকতো দেখবেন যে, আসলে এটা গ্রহণযোগ্য মামলা কি-না।”

সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নিন্দা

পুরনো প্রতিবেদন মুছে ফেলার জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এভাবে চাপ দেওয়ার বিষয়টিকে ‘অনৈতিক’ হিসেবে বর্ণনা করে ইতোমধ্যে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সারা দেশের সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।  

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে চাপ প্রয়োগকারীদের চিহ্নিত করে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার’ দাবি জানিয়েছে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে বলেছে, “বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরসহ গণমাধ্যমের ওপর অনৈতিক চাপ প্রয়োগ উদ্বেগজনক।”

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে), বাগেরহাট প্রেসক্লাব, চাঁদপুর প্রেস ক্লাব, নেত্রকোণা জেলা প্রেস ক্লাব, গাজীপুর প্রেসক্লাব, দিনাজপুর প্রেস ক্লাব, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন, রংপুর ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, যশোরের শার্শা প্রেসক্লাব, শার্শা উপজেলা রিপোর্টার্স ক্লাব বিবৃতি দিয়ে বলেছে, এ ধরনের চাপ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস), সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (জাবিসাস), স্ট্যামকোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরাম, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বেরোবিসাস), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (নোবিপ্রবিসাস), সরকারি তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতি (সতিকসাস) এবং সারাদেশে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন বাংলাদেশ জার্নালিজম স্টুডেন্টস কাউন্সিলও (বিজেএসসি) আলাদা বিবৃতিতে এ ধরনের চাপের নিন্দা জানিয়ে সেইসব প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

আরও পড়ুন