মহামারীর মধ্যেই ছাঁটাই শুরু করল ডেইলি স্টার

করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে বিক্রি কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের আয়ে ধস নামার পর কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে ইংরেজি ভাষার দৈনিক ডেইলি স্টার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2020, 07:51 PM
Updated : 17 August 2020, 08:03 PM

প্রথম ধাক্কায় চাকরি হারাচ্ছেন প্রায় ৩৫ জন কর্মী। এই তালিকায় থাকা তিনজন কর্মী সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, মানবসম্পদ বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে তারা ফোন পেয়েছেন। তাদের বলা হয়েছে, ১৯ অগাস্টের মধ্যে নিজে থেকে ইস্তফা না দিলে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে।

যাই ঘটুক, ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের আট মাসের মূল বেতন দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ডেইলি স্টারের এই কর্মীদের। তবে পাওনা বুঝে পাওয়ার বিষয়টি যেহেতু এখনও বাকি, সেহেতু নিজেদের নাম এখন প্রকাশ হোক, তা তারা চাননি।

তাদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ দুপুর ১টার দিকে এইচআর থেকে ওই ফোন পেয়ে তো আমি হতভম্ব। আমাকে বলা হল, অপশন আছে দুইটা। হয় আমি পদত্যাগ করব, আর না হলে ছাঁটাই। এতগুলো বছর কোম্পানির জন্য এত কাজ করলাম, এখন আমাকে চলে যেতে হবে!”

প্রাথমিকভাবে ছাঁটাইয়ের এই তালিকায় আছেন মূলত বার্তা কক্ষের বাইরের কর্মীরা। ডেইলি স্টারের আইটি ও প্রডাকশন ইউনিটের ডজন তিনেক কর্মী রয়েছেন এর মধ্যে। সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের বড় ছাঁটাই এটি।

কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পত্রিকাটির পরিচালনা পর্ষদ রোববার ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করার পর সোমবার থেকে তা কার্যকর করা শুরু হয়। অবশ্য এর পরিকল্পনা চলছিল বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। পত্রিকাটির অন্যতম মালিক ট্রান্সকম চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর বিষয়টি গতি পায়। 

সোমবার যে ১০ জন কম্পিউটার অপারেটরকে (কম্পোজিটর ও মেইকআপ ম্যান) পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে, তাদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লতিফুর রহমান বেঁচে থাকলে আজ এটা হত না।”

স্টারের ওই কম্পিউটার অপারেটরের অবসরে যাওয়ার কথা ছিল আরও নয় বছর পর। চাকরি হারিয়ে এখন তিনি গভীর দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন।

“দেশে একটা মহামারী চলছে, এর মধ্যে আমাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বললো, এটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে।”

পত্রিকার পেইজ মেইকআপ জন্য কোরেল ড্র সফটওয়্যারের বদলে দুই বছর আগে ডেইলি স্টার যখন ইনডিজাইন নামের নতুন একটি সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করল, কম্পোজিটর ও মেইকআপ ম্যানদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছিল তখন থেকেই।

ইনডিজাইন ব্যবহার করে কী করে অপারেটরের সাহায্য ছাড়াই পত্রিকার পেইজ মেইকআপ করা যায়, তখন থেকেই সেই প্রশিক্ষণ বার্তাকক্ষের কর্মীদের দেওয়া হচ্ছিল।

ছাঁটাই শুরুর পর অপারেটরদের মধ্যে কেবল সাতজন এখনও ফোন না পওয়ায় টিকে যাওয়ার আশা করছেন। 

ডেইলি স্টার যে আর্থিকভাবে সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে, সে বিষয়ে ছাঁটাই শুরুর আগেই সতর্ক করেছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম।

গত রোজার ঈদে ডেইলি স্টার এক মাসের মূল বেতনের অর্ধেক টাকা কর্মীদের উৎসব ভাতা হিসেবে দিয়েছিল, যেখানে তারা এমনিতে দুই মাসের মূল বেতন বোনাস হিসেবে দেয়।   

গত ১৩ মে কর্মীদের উদ্দেশে লেখা একটি নোটে বোনাস কমানোর কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন মাহফুজ আনাম।

সেখানে তিনি বলেছিলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মার্চের শেষ দিক থেকেই পত্রিকার ব্যবসায় বড় ধরনের ধস নেমেছে। পত্রিকা বিক্রি কমে গেছে ৭৫ শতাংশ; আয় কমেছে ৮০ শতাংশ। সব মিলিয়ে এপ্রিল-মে দুই মাসে ৮ কোটি টাকার আয় হারিয়েছে স্টার। 

ওই নোটে মাহফুজ আনাম লিখেছিলেন, “যখন বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশন চ্যানেল মাসের বেতন দিতে পারছে না, এ অঞ্চলের এবং বিশ্বের অনেক বড় বড় পত্রিকা যখন বেতন কমিয়ে দিচ্ছে, তখনও আমরা পুরো বেতন দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।”

কিন্তু মহামারীর মধ্যে আর্থিক অবস্থার বিশেষ উন্নতি না ঘটায় জুলাই মাসে কোরবানির ঈদের সময়ও কর্মীদের অর্ধেক বোনাস দিতে হয়েছে ডেইলি স্টারকে।

ছাঁটাইয়ের বিষয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বক্তব্য জানতে তাকে ফোন করা হয়েছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে। কিন্ত মধ্যরাতে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।