সাংবাদিকতার প্রথম দিনই অনুসন্ধিৎসু শিশু মন

কেউ সবে স্কুল পেরিয়েছে, কারও এখনো সেই সময় হয়নি, বয়সে তারা শিশু। সংবাদে নিজেদের কথা নিজেদের দৃষ্টিকোণ তুলে আনতে তারা নাম লিখিয়েছে সাংবাদিকতায়।

সুলাইমান নিলয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2017, 04:32 PM
Updated : 29 Nov 2018, 04:55 AM

বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শত শত অভিজ্ঞ সাংবাদিক যে ঘটনার সংবাদ তুলে আনতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলাতে ভিড় করেছেন, স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে এই শিশুরাও সেসব জায়গা চষে বেড়িয়েছে সংবাদের খোঁজে। 

২০ জন শিশু সাংবাদিকের এই দল রোববার কক্সবাজারে এক আলোচনায় তুলে ধরেছে তাদের অভিজ্ঞতা। সুযোগ পেলে নিজের চোখে দেখা ঘাটতি আর অব্যবস্থাপনাগুলো তারা কীভাবে দূর করত, সে কথাও তারা বলেছে।

বিশ্ব শিশু দিবস সামনে রেখে কক্সবাজারের রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্টে এই আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশে শিশু সাংবাদিকতার প্রথম ওয়েবসাইট ‘হ্যালো’ এবং জাতিসংঘের শিশু তহবিল-ইউনিসেফ।

এই ২০ শিশু সাংবাদিককে বাছাই করা হয়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাড়ে তিনশ শিশুর মধ্যে থেকে। হ্যালোর ব্যবস্থাপনায় সাংবাদিকতা ও ভিডিওগ্রাফির ওপর প্রশিক্ষণ শেষে শনিবার তারা জীবনের প্রথম ‘অ্যাসাইনমেন্টে’ গেছে কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

রোববারের আলোচনার সঞ্চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর এক প্রশ্নে শিশু সাংবাদিক জান্নাতুন নাঈম জেরিন জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নির্ধারিত বিষয়ের কাজ শেষে ঘুরতে ঘুরতে ১৪ বছরের এক রোহিঙ্গা কিশোরের সঙ্গে তার দেখা হয়, যে শুক্রবারই আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে।

“কথায় কথায় সে জানায়, মা-বাবাকে নিয়ে সে মিয়ানমারেই ছিল। আগেই চলে এসেছিল আপা-দুলাভাই। তার আপু-দুলাভাই ফোন করে তাদেরকে আসতে বলে; তারা জানায় বাংলাদেশে ত্রাণের খুব ভালো ব্যবস্থা আছে, সুযোগ সুবিধা আছে।”

কক্সবাজারের রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্টে শুক্রবার দিনভর চলে শিশু সাংবাদিকদের কর্মশালা

শনিবার প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশু সাংবাদিকরা

বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে রাখাইনে তাদের বন্ধু-স্বজনদের মোবাইলে যোগাযোগ থাকার বিষয়টিও উঠে আসে এই শিশু সাংবাদিকের কথায়। 

“ওর বোনই ওদেরকে এখানে চলে আসতে বলেছে। যদিও তাদের অবস্থা চলে আসার মত খারাপ ছিল না,” বলে জেরিন।

নতুন আসা এক রোহিঙ্গা শিশুর সঙ্গে দেখা হয় আশিকুর রহমান নামে আরেক শিশু সাংবাদিকের। সে জানতে পারে, সেই রোহিঙ্গা শিশুটি এখন আড়াই হাজার টাকা বেতনে চায়ের দোকানে কাজ করছে।

“কোন দেশ ভালো-জানতে চাইলে সে (রোহিঙ্গা শিশু) বলে, বাংলাদেশের মানুষ ভালো। সবাই চলে (মিয়ানমারে ফেরত) গেলেও সে যাবে না। এখানে বাংলাদেশের মানুষ খেতে দিচ্ছে, মারছে না। তাই সে এখানে থাকতে চায়।”

তবে শিশু সাংবাদিক মরিয়ম আক্তার নূপুরের অভিজ্ঞতা একটু অন্য রকম। বেশ কয়েকটি পরিবার তাকে বলেছে, পরিস্থিতি বদলালে তারা মিয়ানমারে চলে যেতে চায়।

সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পড়ুয়া এই শিশু সাংবাদিকদের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে সবার কাজের বিষয় ছিল আলাদা আলাদা। তবে পরিণত বয়সের সাংবাদিকদের মতই তাদের অনুসন্ধিৎসু মন ছুটে গেছে বিভিন্ন দিকে।

রোববারের আলোচনায় বিপুল উৎসাহে সাংবাদিকতার প্রথম অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছে শিশুরা

সুযোগ পেলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘাটতি পূরণে কী করত- সে কথাও বলেছে শিশু সাংবাদিকরা

রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে, আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা ঘুরে দেখে ত্রাণ বিতরণ পরিস্থিতি, জরুরি স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্যতা, পানি আর পয়নিষ্কাশন সঙ্কট, সংক্রামক রোগের বিস্তারের চিত্র যেমন তারা দেখেছে, তেমনি আলোচনায় তারা তুলে ধরেছে কক্সবাজারে বন উজাড় করে বসতি স্থাপন, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা, এইডস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা, কিশোরী মায়েদের কষ্ট, কঠিন মানসিক আঘাত পাওয়া শিশুদের জন্য মনো চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকার কথা।

জীবনের নতুন এই অধ্যায়ের বর্ণনা তারা দিয়েছে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায়।

তাদের সঙ্গে ইউনিসেফের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন সংস্থার মুখপাত্র শাকিল ফয়জুল্লাহ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী ও ইউনিসেফের মুখপাত্র শাকিল ফয়জুল্লাহর সঙ্গে শিশু সাংবাদিকদের দল

শিশুদের সংগ্রহ করা খবর নিয়ে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত ওয়েবসাইট  হ্যালোর যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ। সংবাদ সংগ্রহ থেকে পরিবেশন পর্যন্ত এর সব কাজেই যুক্ত রয়েছে শিশু ও কিশোর সাংবাদিকরা।

সংবাদভিত্তিক এই ওয়েবসাইটটি পরিচালনা করছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। প্রশিক্ষিত শিশু সাংবাদিকরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের তত্ত্বাবধানে মূলধারার গণমাধ্যমেও ভূমিকা রাখছে।