বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক মনে করেন, এই আইন এখন একটি কালো আইনে পরিণত হয়েছে।
অনলাইন কর্মকাণ্ডকে জবাবদিহির আওতায় আনার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় একের পর একের হয়রানিমূলক মামলা হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন সাংবাদিকরা।
৫৭ ধারায় বলা হয়েছে- ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, এতে যদি কারও মানহানি ঘটে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা।
৫৭ ধারার অপরাধ অজামিনযোগ্য হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংবাদ প্রতিবেদন, ফেইসবুক পোস্টসহ বিভিন্ন কারণে মামলায় অনেক সাংবাদিককে জেলে ঢুকতে হয়।
যুক্তরাজ্যে বাংলা মিডিয়ার শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় এক সাংবাদিক ৫৭ ধারা নিয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সংবাদ প্রকাশক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদকের মতামত জানতে চান।
তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এ ধরনের আইনের সমর্থন করেন, কিন্তু ‘ক্ষমতার লোকেরা’ এর এত বেশি অপব্যবহার করেছেন যে এটি একটি কালো আইনে পরিণত হয়েছে।
“সরকার যখন এই আইনের অপব্যবহার রোধ করতে পারেনি, সে কারণে আমি এই আইন বাতিল হওয়ার পক্ষে।”
আলোচনায় সংবাদমাধ্যমের কাজের নানা দিক এবং বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের হালহকিকত নিয়ে আলোচনা করেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
তিনি বলেন, পাঠক-দর্শকের তৈরি কনটেন্ট মূলধারার মিডিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই যথেষ্ট দায়িত্বশীল আচরণ এখানে দেখা যাচ্ছে না, যা সোশাল মিডিয়ায় ব্যবহারকারীদের কনটেন্টের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। কোনো কোনো দুর্বৃত্ত সোশাল মিডিয়ায় অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বা চরিত্রহননের যে অবাধ সুযোগ পাচ্ছে, তা বন্ধ করতে কঠোর নিয়ম আসবে।
“এর ফলে সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যারা সৌখিন নাগরিক সাংবাদিকতা করছেন, তাদেরও ভুগতে হবে। আপনি যখন অনলাইনে কোনো কনটেন্ট দেবেন, সেখানে সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই, সেটা কোনো নিউজ পোর্টালে হোক বা নিজের ফেইসবুক পেইজে।”
অর্থনৈতিক দিক থেকে বিলেতের বাংলা সংবাদমাধ্যমের মতো বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোও সংকটে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের মিডিয়ার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। ৩০টি টিভি চ্যানেল সম্প্রচারে এবং সম্ভবত আরও কুড়িটি চালুর লাইনে রয়েছে। সবগুলো চ্যানেলেরই রয়েছে নিউজ। অন্য কোনো দেশে এমনটি সচরাচর দেখা যায় না।
“বিজ্ঞাপনের কেকের সমান টুকরোর জন্যে দৌড়ছেন সবাই। কিন্তু কেকের সাইজ বড়ো হচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “সকল টেলিভিশন, সংবাদপত্র, অনলাইন নিউজপেপারের জন্য বিজ্ঞাপনের বাজারে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। এর উপরে রয়েছে দুর্নীতি।
“মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে দুর্নীতিবাজরা রয়েছে। এজন্য যারা সৎ তাদের জন্য বেঁচে থাকা কঠিন।”
লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উদ্যোগে সন্ধ্যায় কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির পিন্টার স্টুডিওতে এই অনুষ্ঠান হয়।
বিলেতে বাংলা সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বিভিন্ন অনলাইন সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুবায়ের, স্বাগত বক্তব্য দেন সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা।
তবে এই পাঁচ দশকের মধ্যে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদপত্র বিগত ২০, ৩০ ও ৪০ বছর ধরে প্রকাশনা চালিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে পুরনো টেলিভিশন স্টেশন ১৮ বছর পার করেছে। আছে বাংলা রেডিও স্টেশনও। সাম্প্রতিককালে যোগ হয়েছে অনেক অনলাইন পত্রিকা।