রম্যের ফাঁদে ‘সুবোধ’ সাংবাদিকতা

ছুটির দিনের দুপুরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আলোচনা শুরু হল- ঢাকার দেয়ালে আলোচিত সেই ‘সুবোধ’ গ্রাফিতির শিল্পী গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, এক রম্য লেখার ফাঁদে পা দিয়েছে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2017, 01:45 PM
Updated : 4 Nov 2017, 04:41 AM

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার তাদের শুক্রবারের ম্যাগাজিন স্টার উইকএন্ডে একটি লেখা প্রকাশ করে, যার শিরোনাম- “‘সুবোধ’ আর্টিস্ট অ্যারেস্টেড”। শিরোনামের ওপরে ছোট হরফে লেখা ছিল- ‘স্যাটায়ার’।

রম্য লেখাটির মূল বিষয়বস্তু হল তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা। ওই আইন নিয়ে স্যাটায়ার করতে গিয়েই লেখক ‘সুবোধের’ আশ্রয় নিয়েছেন। 

কিন্তু ওই রম্যের মর্ম যে কোনো কোনো সাংবাদিক বুঝতে পারেননি, তা বোঝা গেল শুক্রবার দুপুরে। জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে বিষয়টি এল শীর্ষ খবর হয়ে, যার শিরোনাম- “‘সুবোধ’ গ্রাফিতির শিল্পীসহ গ্রেফতার ৩”।

বাংলাদেশ প্রতিদিন তাদের অনলাইন সংস্করণে শিরোনাম করল- আলোচিত গ্রাফিতি সিরিজের ‘সুবোধ’ গ্রেপ্তার। ফেইসবুকে ঢু মেরে দেখা গেল, আরও বেশ কিছু পরিচিত অপরিচিত পোর্টাল একই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

কখনও অনলাইন ডেস্ক, কখনও নিজস্ব প্রতিবেদকের বাইলাইনে প্রতিবেদনগুলো আসলে পুরোপুরি অথবা অনেকখানি যুগান্তরের প্রতিবেদনের ‘কপি-পেস্ট’। সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন দেয়ালে সেই শিল্পীর আঁকা গ্রাফিতির ছবি।      

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে ফোন করে যুগান্তরের কাছে ওই খবরের উৎস জানতে চাওয়া হয়েছিল। এর কিছুক্ষণ পর কোনো ঘোষণা না দিয়েই তারা প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে নেয়।

এরপর বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ অন্যরাও ধীরে ধীরে তাদের ‘সুবোধ’ প্রতিবেদন সরিয়ে নেয়। 

কিন্তু ফেইসবুকে থাকা অনেক পাঠক ততক্ষণে প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছেন। সুবোধের পক্ষে দাঁড়িয়ে তারা পুলিশ আর ৫৭ ধারার কঠোর সমালোচনা করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে দুপুর থেকে অসংখ্য ফোন পেয়েছেন বলেও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা।

ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের এই আগ্রহে সাড়া দিয়েই হয়ত ডেইলি স্টার বিকালে কিছুটা সময়ের জন্য তাদের ম্যাগাজিনের ওই লেখা অনলাইন সংস্করণের হোম পেইজে শীর্ষ খবর হিসেবে দেখায় ‘স্যাটায়ার’ ট্যাগ না দিয়েই।

ওই লেখা কেন হঠাৎ শীর্ষে আনা হয়েছিল জানতে চাইলে ইংরেজি পত্রিকাটির একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শুধু বলেন, “হয়ত ভুল হয়েছে।”

দুপুর ২টা পর্যন্ত ডেইলি স্টারের লেখাটি ফেইসবুকে শেয়ার হয়েছিল ২৬৩ বার। বিকালে হোম পেইজে ঘুরিয়ে নেওয়ার পর শেয়ার বেড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যায়।

ডেইলি স্টারের ইন্টারনেট সংস্করণে ওই রম্য লেখা যেভাবে এসেছে, তারও সমালোচনা করেন কেউ কেউ।

কলামনিস্ট আফসান চৌধুরী ফেইসবুকে লেখেন, স্যাটায়ার আর ফেইক নিউজের পার্থক্য যে বোঝে না, তার তা লিখতে যাওয়া উচিৎ না।

পরে ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে লেখাটির শিরোনামের ওপরে (শোল্ডার) একবার ‘স্যাটায়ার’ এবং হেডলাইনের সঙ্গে ব্র্যাকেটের ভেতরে দ্বিতীয়বার ‘স্যাটায়ার’ লিখে দেওয়া হয়।