স্কাই কিনতে ফক্সের প্রস্তাব খতিয়ে দেখার নির্দেশ

ইউরোপভিত্তিক খবর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্কাই নিউজ এজেন্সির ৬১ শতাংশ শেয়ার কিনে নেওয়ার যে প্রস্তাব রুপার্ট মারডকের টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্স দিয়েছে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2017, 08:44 AM
Updated : 17 March 2017, 09:50 AM

দেশটির সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী কারেন ব্র্যাডলি দুদিন আগে পার্লামেন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান, যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকম এবং প্রতিযোগিতা ও বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিএমএকে স্কাই-ফক্স চুক্তির বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে বলা হয়েছে।

রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্স ১১ দশমিক ৭ বিলিয়ন পাউন্ডে স্কাই নিউজ এজেন্সির ৬১ শতাংশ শেয়ার কিনে নিতে চায়। এ কোম্পানির ৩৯ শতাংশ শেয়ার আগে থেকেই ফক্সের হাতে রয়েছে। এবার তারা বাকি শেয়ার কিনে ইউরোপজুড়ে বিস্তৃত স্কাইয়ের উপর ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

তা সম্ভব হলে দুই মহাদেশজুড়ে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপরীতে রুপার্ট মারডকের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। 

এর আগে ২০১১ সালেও ফক্স একইরকম প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীর ফোন হ্যাক ও সরকারি তদন্তে ফক্স নিয়ন্ত্রণাধীন নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের হস্তক্ষেপের কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সে সময় প্রস্তাবটি ধোপে টেকেনি।

ফক্স বলছে, তাদের এবারের প্রস্তাব অনুমোদন পাবে বলেই তাদের বিশ্বাস।

বিবিসি লিখেছে, দুই প্রতিষ্ঠান এক হলে ইউরোপজুড়ে স্কাই নিউজের ২২ মিলিয়ন দর্শক পাবে ফক্স। তাতে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ অনেকখানি রুপার্ট মারডকের হাতে চলে যাবে বলে সমালোচকদের আশঙ্কা।

এ বিষয়ে একটি তদন্ত শুরুর কথা ভাবছেন বলে এর আগেও জানিয়েছিলেন কারেন ব্র্যাডলি। এরপর তিনি আগ্রহী পক্ষগুলোর বক্তব্যও শুনেছেন। কিন্তু কোনো পক্ষই তার ‘উদ্বেগ’ দূর করতে পারেনি।

সে কারণেই ফক্স ও স্কাইয়ের চুক্তি পরীক্ষা করে দেখতে অফকম ও সিএমএকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে পার্লামেন্টে দেওয়া বিবৃতিতে জানিয়েছেন তিনি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফক্স-স্কাই চুক্তি নিয়ে প্রধানত দুটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এক. একাধিক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকা সংবাদ ও গণমাধ্যমগুলো যুক্তরাজ্যের দর্শকদের যেভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে, ওই চুক্তির পরও পরিস্থিতি সেরকম থাকবে কী না। দুই. সম্প্রচার মান নিশ্চিত করতে চুক্তির পক্ষগুলোর সত্যিই আন্তরিক হবে কি না।

ব্রিটিশ সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, “আমার কাছে মনে হচ্ছে, দুটি বিষয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ, আমি এগুলোকে সমর্থন করছি। এ কারণেই জনস্বার্থ বিষয়ে অফকমের কাছ থেকে এবং আইনি বিষয়ে সিএমএ’র বিস্তৃত পরামর্শ চেয়েছি।”

স্কাইয়ের পুরো স্বত্ব ফক্সের কাছে বেচে দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন লেবার এমপি ডেভিড উইনিকও। তিনি বলেছেন, এটা মোটেও রুপার্ট মারডকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা নয়।

“তিনি গণমাধ্যম জগতের যে পরিমাণ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছেন, তা আরও বাড়ানোর চিন্তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”

রুপার্ট মারডক ২০১৩ সালে তার কোম্পানিকে দুই ভাগ করার পর থেকে টেলিভিশন ও বিনোদন ব্যবসা দেখভাল করছে টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্স। অন্যদিকে পত্রিকা ও প্রকাশনা ব্যবসা রয়েছে নিউজ করপোরেশনের হাতে।

এর মধ্যে রুপার্ট মারডক ও তার বড় ছেলে লাকলেম টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্স ও নিউজ করপোরেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে জেমস মারডক আছেন ফক্সের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে।

স্কাইয়ের ‘সম্ভাব্য এই মালিকরা যোগ্য ও উপযুক্ত’ কী না তাও অফকমকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে।

চুক্তিটি খতিয়ে দেখতে ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর প্রয়োজন পড়বে কীনা তা জানাবে সিএমএ। দুটি সংস্থাকেই আগামী ১৬ মের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে।

গত বছর ফক্সের সাবেক সংবাদ উপস্থাপক গ্রেচেন কার্লসন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান নির্বাহী রজার এলিসের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। ফক্স কর্তৃপক্ষ পরে এ ঘটনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায় এবং মামলা প্রত্যাহারে গ্রেচেনকে ২০ মিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়।