সুশি নিয়ে মজার তথ্য

সাশিমি চপস্টিকস দিয়ে খেতে হলেও সুশি খেতে হবে হাত দিয়ে।

লাইফস্টাইলে ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2015, 12:42 PM
Updated : 16 June 2015, 02:26 PM

বাঙালির মুখে কাঁচা খাবারও যে তৃপ্তি আনতে পারে তার অন্যতম প্রমাণ বোধ হয় ‘সুশি’। অনেকেই আবার আদিখ্যেতা করে বলেন, জাপানি খাবার খেতে গিয়ে সুশি না খেলে কি হয়!

খাদ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে জানানো হয়, অথচ জাপানেও এই খাবারের প্রচলন একদিনে হয়নি। কালের বিবর্তনে ও নানান জাতীর সংস্পর্শের রূপান্তরিত রূপ হচ্ছে এই ‘সুশি’।

মাছ সংরক্ষণের জন্য ভাত

অষ্টম শতকের দিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মাছ সংরক্ষণের জন্য নতুন পদ্ধতি চালু হয়। পুরো মাছ লবণাক্ত করে গাঁজানো বা ফার্মেন্টেড ভাত দিয়ে মুড়ে রাখা হত। যাতে মাছ নষ্ট না হয়। আর খাওয়ার আগে ভাত ফেলে দেওয়া হত। বেশ কয়েক বছর পর ফার্মেন্টেশনের সময় কমে যেতে থাকে আর মানুষরা ভাতসহই মাছ খাওয়া শুরু করে।

সুশি একটি ফাস্ট ফুড

১৮০০ সালের প্রথম দিকে টোকিও’তে সুশি, ফাস্ট ফুড হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন যে সুশি খাওয়া হয় তা পরিচিত হয় শেফ হানায়া ইয়াহাই’য়ের হাত ধরে। নষ্ট যাতে না হয় এজন্য তিনি মাছ সয়া সসে মেরিনেইট করতেন অথবা অল্প রান্না করে নিতেন। এভাবে সুশি দামে সস্তা হয়ে যাওয়ায় জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তবে খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় সরকার এটা বেআইনি ঘোষণা করে। তখন পাচকরা সুশি নিয়ে আলাদা রেস্তোরাঁ চালু করেন।

ছবি: রয়টার্স।

১৯৮০ সালের আগে স্যামন সুশি ছিল না

কারণ জাপানের মাছ নয় স্যামন। নওরোজিয়ানরা ১৯৮০ সালের প্রথম দিকে জাপানে যায়। আর তারাই প্রথম জাপানে স্যামন মাছ খাওয়ার প্রচলন করেন।

জাপানে ‘ইনসাইড আউট রোলস’ পরিচিত নয়

অনেক রেস্তোরাঁতেই সুশি রোল পাওয়া যায়। বাইরের দিকে ভাত আর ভেতরে থাকে সিউইড বা সমুদ্র-শৈবাল (নোরি)। এটা আসলে পুরাটাই আমেরিকান ঘরানা। এটা আমেরিকনদের জন্য প্রথম তৈরি করেন ইচিরো মাশাহিতা (যিনি ক্যালিফোর্নিয়া রোলের উদ্ভাবক, এটাও এক ধরনের সুশি রোল যা শসা, কাঁকড়ার মাংস ও অ্যাভোকাডো দিয়ে তৈরি হয়), যাতে খাওয়ার সময় শৈবাল দেখতে না হয় বা চিবানোর সময় বোঝা না যায়।

বেশিরভাগ সুশি আসলে নিগিরি বা মাকি

সুশির রয়েছে নানান ধরণ। যেমন: চিরাশি (এক বাটি ভাতের উপর মাছ), টেমাকি (কোণ আকৃতির হাতে ধরা যায় এমন সুশি রোল) এবং ওশি (চারকোণাকৃতি ভাতের স্তরের সঙ্গে রান্না বা প্রক্রিয়াজাত মাছ)।

তবে যখনই সুশির কথা আসবে তখনই বুঝতে হবে নিগিরি’র কথা, যা আসলে এক টুকরা কাঁচামাছ দিয়ে নোরি ও ভাতসহ রোল করা থাকে। অথবা মাকি’র সঙ্গে এই পরিবেশন চলতে পারে। মাকি হচ্ছে সবজি ও সামুদ্রিক শৈবাল দিয়ে জড়ানো সুশি।

আর সাশিমি’র অর্থ হচ্ছে কাঁচামাছ বা শেলফিশ যা পাতলা টুকরা করে পরিবেশন করা হয়।

নিগিরি ভাত তৈরি করা এত সহজ নয়

কাঠের প্যাডেল দিয়ে এই ভাত ভিনিগারের মিশিয়ে তৈরি করতে হয়। দরকার সঠিক তাপমাত্রায় সিদ্ধ করা, যাতে ভাতের মধ্যে একটা আঠালো ভাব থাকে। যখন মুখে তুলে নেওয়া হবে তখন খুলে পড়বে না আবার মুখে দিলে ভাতের প্রতিটি দানা আলাদা হয়ে আসবে। সঠিক তাপমাত্রায় তৈরির ফলে ভাতের ভিতরের স্তরের থেকে উপরের স্তর হবে আঠালো।

ছবি: রয়টার্স।

আঙুল দিয়ে খেতে হয়

সাশিমি চপস্টিকস দিয়ে খেতে হলেও, সব সুশির খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে আঙুল দিয়ে ধরে মুখে পুরে এক কামড়ে গিলে ফেলা।

দামি টুনার পরিবর্তে অ্যাভোকাডো

লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘টোকিও কাইকান’য়ের সুশি শেফ ইচিরো মাশাহিতা সুশিতে দামি তৈলাক্ত টুনা মাছের (ও-টোরো) পরিবর্তে অ্যাভোকাডো ব্যবহারের পরীক্ষা শুরু করেন। আমেরিকায় অ্যাভোকাডো সহজলভ্যতা আর টুনা মাছের মতোই তৈলাক্ত। সঙ্গে দেওয়া হয় শসা এবং কাঁকড়া। তারপর আবিষ্কৃত হয় ক্যালিফোর্নিয়া রোল, যা প্রথম আমেরিকান সুশি নামে পরিচিত।

কাঁচা হলেও হিমায়িত হতে হবে

সুশির অন্যতম উপাদান মাছ থাকে কাঁচা। এতে পরজীবী থাকতেই পারে। তাই আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রে সকল সুশি ফিশ পরিবেশনের আগে হিমায়িত করে রাখতে হবে। এর ফলে কাঁচা মাছে থাকা নেমাটোড কৃমি ছাড়াও অন্যান্য পরজীবী ধ্বংস হয়।

বর্তমানে জাপানের অনেক সুশি-বারে মাছ হিমায়িত করে রাখা হয়। তাই এদেশে খাওয়ার আগে খোঁজ নিন সুশিতে দেওয়া মাছটা কী অবস্থায় ছিল।

মাছ ভিনিগার বা লবণে প্রক্রিয়াজাত করা

ভাতের মতোই সুশিতে ব্যবহৃত মাছ কেটে প্রক্রিয়াজাত করে পরিবেশন করা হয়। সুশিতে ব্যবহৃত যে কোনো মাছের উপর ভিনিগার ছিটিয়ে রাখা হয় সকালেই। এই পদ্ধতিকে বলা হয় সু-হিমি। যদি মাছ বেশি ভেজা থাকে তবে লবণ যুক্ত করে ভেজাভাব কমানো হয়, যাকে বলে শিও-হিমি)। ফলাফল হিসেবে পাওয়া যায় উজ্জ্বল, অটল, চকচকে তবে ভেজা বা তেলতেলে নয় এবং পরিষ্কার আসল স্বাদের মাছ।