বসন্ত দূরে থাক

‘বসন্ত এসে গেছে’ গানের সুরে মন মেতে উঠলেও বসন্ত রোগ মোটেই আনন্দদায়ক নয়।

মামুনুর রশীদ শিশিরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2015, 10:30 AM
Updated : 24 May 2015, 10:32 AM

টিকার কারণে প্রকোপ কমে আসলেও ইদানিং অনেকেরই এই রোগ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

বসন্ত রোগের ধরন, কারণ, প্রতিষেধক এবং চিকিৎসা সম্পর্কে জানালেন ফাস্ট কেয়ার হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ কামরুল হাসান।

বসন্তের ধরন

“বসন্ত দুই ধরনের। ‘চিকেন পক্স’ বা জল বসন্ত এবং ‘স্মল পক্স’ বা গুটি বসন্ত। এরমধ্যে গুটি বসন্তই সবচেয়ে মারাত্বক।

তবে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে আশির দশকেই পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে গুটি বসন্ত।

লক্ষণ

প্রথমদিকে রোগীর শরীরে দুর্বল ভাব, মাথাব্যথা, সর্দি-কাশি, জ্বরভাব ইত্যাদি হয়। কিছুদিনের মধ্যেই শরীরে ঘামাচির মতো দানা দেখা দেয়। পরে সেগুলো বড় হয়ে ভেতরে পানি জমতে থাকে। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে জ্বর ও শারীরিক দুর্বলতা। শরীরে ব্যথা ও সর্দি-কাশিও হতে পারে।

যেভাবে ছড়ায়

এ রোগের আক্রমণে শরীরে পানিবাহি ছোট গোলাকার দানার সৃষ্টি হয় বলেই এর নাম জল বসন্ত।

কারণ সম্পর্কে ডা. হাসান জানান,  জল বসন্ত একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। ভাইরাসটির নাম ‘ভ্যারিসেলা জস্টার ভাইরাস’(ভিজেডভি)। বাতাসের মাধ্যমেই ভাইরাসটি বেশি ছড়ায়। জন্মের পর থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত জল বসন্তের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। বড়দেরও হতে পারে, তবে খুব কম। আর একবার কারও বসন্ত হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার সাধারণত হয় না। কারণ একবার আক্রান্ত হলে শরীরে এই ভাইরাসের ‘অ্যান্টিবডি’ তৈরি হয়ে যায়।

রোগীর শরীর থেকেই এই ভাইরাস সুস্থদের মধ্যে ছড়ায়। এক্ষেত্রে বসন্তে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক অবস্থার চেয়ে সেরে ওঠার সময়টাই বেশি মারাত্বক। কারণ, সেরে ওঠার সময় পানিবাহি দানাগুলো ফেটে গিয়ে ওই স্থানের চামড়া শুকিয়ে যায়। এসময় স্বাভাবিকভাবে কিংবা চুলকানোর কারণে ওই শুকনো চামড়াগুলো ঝরে পড়ে। এই শুকনো চামড়াগুলোই বহন করে ভ্যারিসেলা জস্টার ভাইরাস।

বাতাসের মাধ্যমে ছাড়াও রোগীকে স্পর্শ করা, রোগীর ব্যবহৃত জামা-কাপড়, বিছানার চাদর ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

প্রতিষেধক

কামরুল হাসান বলেন, “জল বসন্তের হাত থেকে বাঁচার প্রধান উপায় প্রতিষেধক টিকা। শিশুর জন্মের ৪৫ দিন পর থেকে যেকোনো বয়সেই এই টিকা দেওয়া যায়। যারা টিকা নিয়েছেন তাদের জল বসন্তের ঝুঁকি থাকে না।”

চিকিৎসা

রোগ মারাত্বক হলেও, ভয় পাওয়া কোনো কারণ নেই। কোনোরকম ওষুধ ছাড়াই সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায় জল বসন্ত। রোগটা শিশুদেরই বেশি হয়।

ছোঁয়াচে রোগ বলে আক্রান্ত শিশুকে সুস্থ ব্যক্তিদের কাছ থেকে একেবারেই আলাদা করে রাখতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কারণ সবার থেকে আলাদা করে রাখলে শিশু মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সুস্থ শিশুদের থেকে দূরে রাখা জরুরি। বিশেষ করে শেষ দুতিন দিন, যখন রোগি সেরে উঠছে।

জল বসন্ত বড়দের খুব কমই হয়, তাই রোগীর সেবা যত্ন করাতে গিয়ে মা-বাবার আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

এসময় রোগীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দেওয়াটা জরুরি। তার ব্যবহার্য জিনিষপত্র আলাদা রাখা এবং নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত। রোগীকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। তবে গোসলের পর গা মোছার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে যাতে দানাগুলো ফেটে না যায়। সময়ের আগেই দানাগুলো ফেটে গেলে ওই স্থানে ঘা হয়ে যেতে পারে।

এছাড়াও ভাইরাসযুক্ত পানি শরীরের অন্যন্য স্থানে লেগে যাওয়ায় পানিবাহি দানা বেড়ে যেতে পারে। দানগুলো শুকিয়ে যাওয়ার সময় চুলকানি হয়। তবে কষ্ট হলেও চুলকানো থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করা উচিত। চুলকানি কমানোর জন্য গরম পানি দিয়ে গোসল করা যেতে পারে।