দুশ্চিন্তার ক্ষতিকারক প্রভাব

কমবেশি সবাই দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে ভুগে থাকেন। তবে একারণে স্বাস্থ্যের উপর কী ধরণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে তা অনেকেরই অজানা। আর এ বিষয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণাও প্রচলিত আছে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2015, 08:49 AM
Updated : 14 May 2015, 08:54 AM

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে জানানো হয়, মানসিক চাপ কেনো হয় তা জানার আগে, মানসিক চাপ কী, তা জানা আগে দরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেল্থে’র মতে, কোনো ধরনের চাহিদার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের সাড়া দেওয়ার পদ্ধতি হল মানসিক চাপ। মস্তিষ্ক যখন সমস্যার আশঙ্কায় অতিরিক্ত সাড়া দেয় তখনই মানুষ মূলত দুশ্চিন্তায় ভোগে।

দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ নিয়ে প্রচলিত কয়েকটি সঠিক ও ভুল ধারনার তথ্য দেয় এই সংস্থা।

যে ধারণাগুলো ঠিক

চুল পড়া: চুল পড়ার জন্য অনেকেই দুশ্চিন্তাকে দায়ী করে চুল পড়ার এমনই একটি রোগ অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়াটা (এএ)। দুশিন্তা বা মানসিক চাপ থেকেও এই রোগ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। তবে এই রোগের উপর দুশ্চিন্তার প্রভাব কিছুটা জটিল। দুশ্চিন্তা এই রোগের সরাসরি কারণ নয়। দুশ্চিন্তার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যক্ষমতা ব্যহত করে, যা চুলের গোড়ার ক্ষতি করে।

দীর্ঘস্থায়ী রোগ পর্যবেক্ষণ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘সালুসিটি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিওও ডা. স্টেসি ব্যানার্জির মতে, “দুশ্চিন্তার কারণে বিভিন্ন রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও এর কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় যেসব পরিবর্তন আসে তা শরীরের বিভিন্ন কোষের ক্ষতিপূরণ করার ক্ষমতার উপরও প্রভাব ফেলে, যা ক্যান্সারের সম্ভাবনাও বাড়াতে পারে।”

ব্রণ: বয়ঃসন্ধির সময়ে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারণে দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। আর এই সময়ের আরেকটি সাধারণ সমস্যা দেখা দেয়, তাহল ব্রণ।

ব্রণের জন্য দায়ী মূলত ত্বকের স্বক্রিয় তেলগ্রন্থি। এই গ্রন্থিগুলো থেকে বের হওয়া অতিরিক্ত তেল ত্বকের কোষের সঙ্গে মিশে গিয়ে লোপকূপ বন্ধ করে দেয়। লোপকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়, ফলে ব্রণ হয়।

ডা. স্টেসি ব্যানর্জির মতে, “দুশ্চিন্তার কারণে বিনা কারণেই স্বক্রিয় হয়ে যেতে পারে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। মানুষভেদে শরীরের যেসব কোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে, সেসব স্থানেই অস্বস্তি বা ব্রণ হয়।”

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক: বিপজ্জনক পরিস্থিতে ধমনী ও হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়, শরীরের মাংসপেশী টান-টান হয়ে যায় এবং মাস্তিষ্ক তার কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশি অক্সিজেন ব্যবহার করে।

দীর্ঘস্থায়ী দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপের কারণে শরীরের এসব কর্মকাণ্ড চলতে থাকে বিরতিহীনভাবে। ফলে হজম প্রক্রিয়া, প্রজনন প্রক্রিয়া, অন্যান্য সঞ্চালন প্রক্রিয়াসহ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ বিষয়ে ব্যানার্জি বলেন, “শারীরিক চাপ মাংসপেশীর অক্সিজেন চাহিদা বাড়িয়ে দিয়ে হৃদপিণ্ডকে দ্রুত কাজ করতে বাধ্য করে। একইভাবে মানসিক চাপও মস্তিষ্কের অক্সিজেন চাহিদা বাড়িয়ে দিয়ে হৃদপিণ্ডের উপর চাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই দুশ্চিন্তার কারণে হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিশেষত, মানসিক চাপের কারণে টাকোটসুবো কার্ডিওমেয়োগ্রাফির লক্ষণ দেখা দেয়, যে কারণে হৃদপিণ্ডের পেশীগুলো সাময়িকভাবে দুর্বল হয়ে যায়।”

যে ধারণাগুলো ভুল

চুল পেকে যাওয়া: চুল পেকে যাওয়া বা রং পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে মানসিক চাপের কারণে শরীরে বার্ধক্য দেখা দিতে পারে, যা থেকে চুল আধাপাকা হয়ে যেতে পারে। চুল পেকে যাওয়ার উপর মানসিক চাপের প্রভাব নিয়ে করা গবেষণা অনুযায়ী, বয়স বেড়ে যাওয়াই চুল পাকার প্রধান কারণ।

ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, “শতকরা ৫০ ভাগ মানুষেরই ৫০ বছর বয়সে ৫০ ভাগ চুল পেকে যায়।”

আলসার: ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক চাপ দায়ী করা হলেও গবেষকরা এদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাননি।

আলসার দুই ধরনের। গ্যাস্ট্রিক আলসার ও ডুয়োডেনাল আলসার। পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশের মধ্যকার সংযোগ নালী ‘ডুয়োডেনাম’য়ে এই আলসার হয়ে থাকে। আর এই দু’ধরনের আলসার হওয়ার মূল কারণ ব্যাক্টেরিয়া।

আলসারের সঙ্গে দুশ্চিন্তার গবেষণাভিত্তিক কোনো সম্পর্ক পাওয়া না গেলেও, দুশ্চিন্তার কারণে আলসারের ব্যথা বেড়ে যায়, এমনটাই দাবি করেন আলসার রোগীরা।