দশ মিনিটে মেইকআপ

যারা অফিস বাসা দুটোই সামাল দেন তাদের থাকতে হয় সবসময় ফিট। তবে বললেই তো সব সময় ফিট থাকা বেশিরভাগের জন্যই সম্ভব হয় না।

ইয়াছিন মনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2015, 12:09 PM
Updated : 12 Feb 2015, 12:11 PM

অনেক সময় অফিসের মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে হয়। আবার অফিস থেকেই কোনো অনুষ্ঠানে যেতে হচ্ছে। এক্ষেকে মেইকআপ এক বিশাল ঝক্কি ঝামেলার ব্যাপার।

আবার অনুষ্ঠানে নিজেকে সবার মাঝে সুন্দর দেখাতে একটু মেইকআপ তো করতেই হয়। ভাবছেন কীভাবে অল্প সময়ে এটা সম্ভব!

এ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন আকাঙ্ক্ষা’স গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড’য়ের অ্যারোমা থেরাপিস্ট জুলিয়া আজাদ।

যাদের হাতে সময় একেবারেই নেই। তাদের জন্য বলছি, মেইকআপ করার জন্য বা অল্প সময়ে ‘পিকচার পারফেক্ট’ হতে মাত্র ১০ মিনিটই যথেষ্ট। এরমধ্যেই নিজেকে আরও সুন্দর করে তোলা যায়।

ফাউন্ডেশন, আইলাইনার, ব্লাশন, লিপলাইনারের মতো শুধু ছোট ছোট কয়েকটা জিনিসের ব্যবহারের সঠিক কায়দাই খুব কম সময়েই চেহারায় যোগ করতে পারে নতুন মাত্রা। এজন্য দরকার অভ্যস্ততা।

একবার আয়ত্ব করে নিতে পারলেই দেখবেন শত ব্যস্ততার মাঝেও অনায়াসেই আপনিও কম সময়ে নিজেকে সবার মাঝে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারছেন। এজন্য জানতে হবে মৌলিক কয়েকটি ধাপ।

ক্লেনজার-টোনার-ময়েশ্চারাইজার

স্বাভাবিক, শুষ্ক বা তৈলাক্ত যে ধরনের ত্বকই হোক না কোনো মেইকআপ শুরু করার আগে ক্লেনজিং করতেই হবে।

ফেইসওয়াশ বা ক্লেনজিং মিল্ক দিয়ে ভালো করে মুখ ধোয়ার পর তুলোয় টোনার লাগিয়ে মুখ, গলা ও ঘাড় ভালো করে মুছে নিন। এরপর কোনো ভালো ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। দেখবেন এতে ত্বকে আপনা থেকেই একটা ‘গ্লো’ চলে আসবে। আর ভালো করে মেইকআপও বসবে। ক্লেনজিং-টোনিং-ময়েশ্চাইজিংয়ের জন্য সব মিলিয়ে সময় লাগবে দুমিনিট।

কনসিলার

ডার্ক সার্কেল, ব্রণ, অ্যাকনে বা ত্বকে যদি কোনো দাগ থাকে তাহলে কনসিলার ব্যবহার করুন। রিং ফিঙ্গার বা অনামিকার আগায় সামান্য কনসিলার নিয়ে হালকা হাতে দাগের উপর লাগিয়ে নিন।

যদি কনসিলার লাগানোর অভ্যাস না থাকে তাহলে কটনবাডের মুখে সামান্য কনসিলার নিয়ে দাগের উপর লাগান। এতে আঙুলের ছাপ পড়বে না। ডার্ক সার্কেলের সমস্যা থাকলে চোখের নিচে কনসিলার লাগানোর পর উপরে সামান্য আইক্রিম লাগাতে পারেন।

কনসিলার কেনার সময় নিজের স্কিনটোনের থেকে এক শেইড হালকা শেইডের কনসিলার কিনবেন। স্টিক, ক্রিম ও টিউব আকারে কনসিলার পাওয়া যায়। আপনার ত্বকের ধরন ও পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন। কনসিলার লাগাতে আপনার সময় লাগবে মাত্র একমিনিট।

ফাউন্ডেশন

কনসিলার লাগানোর পর ফাউন্ডেশন লাগান। মুখে, কপালে, নাকে ও থুতনিতে ফাউন্ডেশন ফোঁটা ফোঁটা করে লাগিয়ে নিন। এবার ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে ফাউন্ডেশন ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন।

মুখ ও গলার সঙ্গে চোখের পাতার উপরের অংশেও অবশ্যই ফাউন্ডেশন লাগাবেন। ঘাড়েও ফাউন্ডেশন লাগাতে ভুলবেন না। তারপর ভালো করে ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এসময় তাড়াহুড়া করবেন না। একটু সময় নিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করুন।

ত্বক যদি তৈলাক্ত প্রকৃতির হয় তাহলে ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা পানি মিশিয়ে নিন। এতে ত্বকে ফাউন্ডেশন ভালো করে বসবে। মেইকআপ সহজে ঘেঁটে যাবে না। ওয়াটার বেইসড ফাউন্ডেশনের বদলে প্যানস্টিক বা কেক ফাউন্ডেশনও ব্যবহার করতে পারেন।

আর শুষ্ক প্রকৃতির ত্বক হলে ক্রিমযুক্ত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করাই ভালো। ফাউন্ডেশন লাগানোর সময় নিজের ‘স্কিন টোন’ ম্যাচ করে লাগাবেন। এতে ন্যাচারাল লুক বজায় থাকবে।

আর দিনের মেইকআপের জন্য ফাউন্ডেশন লাগানোর দরকার নেই। পরিবর্তে মুখে ও গলায় ভালো করে উচ্চ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন লোশন লাগিয়ে নিন।

কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে কমপ্যাক্ট লাগান। বিশেষ করে মুখের যেসব জায়গায় বেশি ঘাম হয় যেমন নাক, কপাল ও থুতনির মতো তেলতেলে জায়গায় ভালো করে কম্প্যাক্ট লাগান। এতে ত্বকের মধ্যে মেইকআপ ভালো করে সেট করবে ও বেশিক্ষণ ভালো থাকবে।

কম্প্যাক্ট না থাকলে চিন্তার কিছু নেই। ট্রান্সলুসেন্ট বা বেবি পাউডারও ব্যবহার করতে পারেন। ফাউন্ডেশন ও কম্প্যাক্ট লাগাতে সময় লাগবে মোটামুটি তিন মিনিট।

চোখের মেক-আপ

চোখের মেক-আপ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চোখের মেইকআপের উপর অনেকটাই নির্ভর করবে আপনাকে কতটা সুন্দর দেখাবে।

প্রথমে চোখের উপরের পাতায় আইশ্যাডো লাগিয়ে নিন। নিজের স্কিনটোন ও পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে আইশ্যাডোর রং বাছাই করুন।

চোখের উপরের পাতাকে দুভাগে ভাগ করে নিন। উপরের ভাগে অপেক্ষাকৃত হালকা শেইডের আইশ্যাডো লাগান। নিচের ভাগে এক শেইড গাঢ় রংয়ের আইশ্যাডো লাগান। এবার চোখের উপরের পাতায় মোটা করে আইলাইনার লাগিয়ে নিন।

যারা লিকুইড আইলাইনার ব্যবহার করতে অতটা অভ্যস্থ নন তারা আইপেন্সিল ব্যবহার করুন।

এবার পেন্সিল কাজল দিয়ে নিচের আইলিডে একটু সরু করে আইলাইনার করে নিন। দেখতে ভালো লাগবে। যদি আইলাইনার লাগাতে ভালো না লাগে তাহলে নিচের আইলিডে শুধু একটু মোটা করে কাজল লাগিয়ে নিন। চোখ উজ্জ্বল দেখাবে, তবে খুব চড়া মেইকআপ মনে হবে না।

সবশেষে মাসকারা লাগিয়ে নিন। প্রথমে এককোট মাসকারা লাগান। তারপর শুকিয়ে গেলে আরও এককোট লাগান। তারপর চোখের পাতা আইল্যাশ-কোম দিয়ে আঁচড়ে নিন। চোখের মেইকআপ সময় লাগবে মাত্র দুমিনিট।

ঠোঁটের মেইকআপ

সুন্দর দেখাতে চোখের মেইকআপ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ঠোঁটের মেইকআপও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ঠোঁট সুন্দর করে আঁকতে পারলে সৌন্দর্য এক অন্য মাত্রা পাবে।

এজন্য প্রথমে লিপলাইনার দিয়ে ঠোঁট আউটলাইন করে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন, লিপলাইনার যেন বেশি বোঝা না যায়। তারপর আউটলাইনে যে রং ব্যবহার করেছেন, তার থেকে একশেইড হালকা রংয়ের লিপস্টিক লাগিয়ে দিন।

ব্রাউন, পিচ, গোলাপি রংয়ের লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন লিপস্টিকের রং যেন পোশাক ও স্কিনটোনের সঙ্গে মানানসই হয়। সবশেষে ঠোঁটের ঠিক মাঝখানে সামান্য গ্লস লাগিয়ে নিলেই সমাপ্ত ঠোঁটের মেইকআপ। সময় লাগবে এক মিনিট।

ব্লাশন

সবশেষে ব্লাশন দিয়ে মুখের সুন্দর অংশটুকু (চিকবোনস, থুতনি বা নোজ লাইন) হাইলাইট করুন। হালকা গ্লো পাবেন।

যারা মেইকআপ করতে অতটা অভ্যস্থ নন তারা পাউডার ব্লাশন লাগাতে পারেন। এটি সহজে লাগাতেও পারবেন, আবার দেখতেও ভালো লাগবে। চিকবোন ও এর নিচের অংশে আঙুলের ডগা দিয়ে ব্লাশন লাগান। তারপর ব্রাশ দিয়ে আউটওয়ার্ড ও আপওয়ার্ড স্ট্রোকে ব্লেন্ড করে নিন। প্রয়োজনে আঙুলের ডগা দিয়ে হালকা করে ঘষুন। এতে মেইকআপ ভালো করে মিশবে। ব্লাশন লাগাতে সময় লাগবে মাত্র এক মিনিট।

ব্যাস, অনুষ্ঠানের জন্য ১০ মিনিটেই আপনি তৈরি। সবশেষে পারফিউম লাগাতে ভুলবেন না।