আর কর্মব্যস্ত শহুরে জীবনে যদি প্রকৃতির একটু সান্নিধ্য পাওয়া যায় তবে জীবনের পিয়ানোটা টুং টাং করে আবার বেজে উঠতেই পারে।
মনের সাধ ও আভিজাত্য বাড়ানোর জন্য ঘরের ভেতর রাখা দামি আর সখের জিনিসগুলো শোভা বাড়ায়।
ইট কাঠের জঙ্গলের মাঝে সেই নিষ্প্রাণ জিনিসগুলো ঘরের মানুষের রুচির পরিচয় বহন করলেও প্রাণের আবেদন কি মেটায়!
এই প্রসঙ্গে কথা বলেন ‘বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি’ কলেজের গৃহব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিমু লতা মৃধা।
বসার ঘর বা ড্রইংরুমে অতিথির আগমন হয়। তাই এখানে রাখা যায় নানান ধরনের দেশি বিদেশি গাছ।
“ফুল দেয় এমন গাছ নির্বাচন না করাই ভালো কারণ ফুল ফোটার জন্য যে আলো ও বাতাস প্রয়োজন তা ঘরের ভেতর পাওয়া যায় না।” পরামর্শ দিলেন শিমু লতা মৃধা।
এই অধ্যাপক আরও জানান, বসার ঘরে গাছ রাখার জন্য কোণাগুলো বেছে নেওয়া যায়। ল্যম্প শেইডের আশপাশে গাছ রাখলে আলো ছায়ার খেলা উপভোগ করা যায়।
ঘরের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য রাখা যায় বনসাই। তবে এর যত্ন বেশি নিতে হয়।
বনসাইয়ের পাত্র চারকোণা বা ডীম্বাকৃতির হলে ভালো। এটি সিরামিকের হলে তা সহজেই ধুয়ে ফেলা যায়। এছাড়াও নিয়মিত বনসাইয়ের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান নিয়ম করে দিতে হবে। ১৫ দিন পরপর একবার রোদে দিতে হবে। আর যে আকারে গাছটি রাখতে চান সে অনুযায়ী কেটে রাখতে হবে।
যারা বনসাই পছন্দ করেন না তারা রাখতে পারেন নানান ধরনের পাতাবাহার উদ্ভিদ। বসার ঘরে এমনভাবে গাছ রাখতে হবে যাতে অতিথিরা ঢুকলেই প্রথমে সেদিকে চোখ যায়।
বসার ঘর থেকে খাবার ঘরের দিকে যাওয়ার জায়গায় মানিপ্ল্যান্ট, পাতাবাহার বা বাটার ফ্লাই গাছ রাখা যায়। এছাড়া বেসিনের উপরে বা জানালার গ্রিলে মানিপ্ল্যান্ট দেখতে বেশ ভালো লাগে বলে মনে করেন শিমু লতা।
তবে যে কেউ তার পছন্দ মতো গাছ ঘরে রাখতে পারেন। যদি ‘ইনডোর প্ল্যান্ট’ও হয় তবে তা দিনের পর দিন ঘরের ভিতরে রেখে দিলে হবে না। সপ্তাহে অন্তত একদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টার পর্যন্ত রোদে রাখার চেষ্টা করতে হবে। অর্থাৎ তিন থেকে চারঘণ্টা যেন গাছ রোদ পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন তাদের উদ্দেশ্য করে শিমু লতা বলেন, “পরিবর্তনই সংসারের নিয়ম। তাই এক ধরনের গাছ নয় বরং বাড়িতে দুতিন রকমের গাছ রাখুন। প্রতি সাতদিন পর পর গাছের অবস্থান বদলে দিন। এতে নতুনত্ব আশার পাশাপাশি মনে প্রফুল্লতাও আসে।”
চাইলে বাথরুমেও গাছ রাখতে পারেন। গোসলখানায় রাখা গাছের সঠিক যত্নের বিষয়ে শিমু লতা কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে বলেন।
- কিছু কিছু মানিপ্ল্যান্ট আছে যা খুব কম রোদে ভালো থাকে অর্থাৎ বেশি দিন টেকে। এই ধরনের গাছ বাথরুমে রাখার জন্য বিশেষ উপযোগী।
- স্নানঘরে ছোট গাছ রাখার পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সিরামিক বা প্লাস্টিক নির্বাচন করা বাঞ্ছনীয়। যেহেতু দিনভরই এই জায়গা আর্দ্র থাকে তাই এখানকার গাছে বেশি পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
গাছ যেইখানেই রাখা হোক না কেনো এর সঠিক পুষ্টির দিকে শিমু লতা বিশেষ গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, “ঘরের গাছের জন্য জৈব সার ব্যবহার করা ভালো। তবে কেউ যদি ফুলের গাছ রাখতে চান তবে টবের আকৃতি অনুযায়ী আধা থেকে এক চামচ পর্যন্ত ইউরিয়া সার দিতে পারেন। মনে রাখতে হবে সার দেওয়ার দুতিন দিন পর পর্যন্ত গাছে পানি দেওয়া যাবে না।
বাড়িতে সার তৈরির নিয়ম
- একটি বালতিতে এক তৃতিয়াংশ মাটি তারপর এর মধ্যে সবজি বা ফলের উচ্ছিষ্ট অংশ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। মাসখানেক পর তৈরি হয়ে যাবে কম্পোস্ট সার। এইভাবে সাধারণ মাটি এবং সার সমপরিমাণ মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দেওয়া যেতে পারে।
- কোনো গাছ যদি নষ্ট হয়ে যায় তবে তা ফেলে দেওয়া ভালো। না হলে অন্যান্যও গাছও ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। মাঝে মাঝে গোড়ার মাটি সামান্য আলগা করে দেওয়া ভালো এতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
গাছ প্রাপ্তি
যাদের বাগান করার শখ অথচ জায়গার অভাবে করতে পারছেন না তারা চাইলে বারান্দা বেছে নিতে পারেন। পছন্দসই ফুলের গাছ বা অর্কিড স্থান করে নিতে পারে আপনার বাগানে।
আসন্ন ফাল্গুন মাসের প্রস্তুতি হিসেবে বাগানে লাগাতে পারেন চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, গোলাপ, ডালিয়া ইত্যাদি। পছন্দসই যে কোনো ফুলের গাছ ছাড়াও বাহারি রংয়ের অর্কিড ঝুলাতে পারেন বারান্দায়।
শিমু লতা জনান, গাছ শুধু ঘরে রাখলেই চলবে না, এদের যত্নও করতে হবে। তাই নিয়মিত গাছে পানি দেওয়ার পাশাপাশি নিয়ম করে রোদের ব্যবস্থা করতে হবে। কয়েকদিন পর পর গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে।
অনেক সময় গাছ ফুলের ভারে বা অন্য অনেক কারণে হেলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে একটি লাঠির সঙ্গে হাল্কা করে বেঁধে দিতে হবে। এতে গাছ হেলে পড়বে না এবং ফুলগুলোও ভালো থাকবে।