পেটের মেদ না কমার কারণ

ব্যায়াম করছেন, খাচ্ছেন রয়েসয়ে তারপরও কমছে না চর্বি? কারণ থাকতে পারে অনেক।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2015, 12:51 PM
Updated : 30 Jan 2015, 12:55 PM

স্থাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, পেটের মেদ যা প্রকৃতি অর্থে অন্ত্রে জমে থাকা চর্বি বোঝায়। এর থেকে হৃদরোগ, টাইপ টু ডায়াবেটিস, ইন্সুলিন বৃদ্ধি ছাড়াও কোনও কোনও সময় ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

যদি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন আর ব্যায়াম করেনও স্ফিত পেট না কমে তবে হয়ত নিচের কারণগুলো আপনার ক্ষেত্রে খাটতেও পারে।

আপনি বৃদ্ধ হচ্ছেন

বয়স বাড়ার সঙ্গে ওজন কম বা বেশি হওয়ার সম্পর্ক আছে। এই সময়ে নারী এবং পুরুষের হজম শক্তি কমে। অথবা যে পরিমাণ ক্যালরি সাধারণত খরচ হওয়ার দরকার তা হয় না। তাছাড়া নারীদের ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা তৈরি হয় মেনোপজের সময়।

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিকের এনডোক্রিনলোজি বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল জেনসেন বলেন, “যদি মেনোজপজের পর কোনো মহিলার ওজন বৃদ্ধি পায়, তবে এর অন্যতম কারণ হচ্ছে পেটের মেদ।”

মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের উৎপাদন কমে যেতে থাকে। তাছাড়া টেসটোসটেরনের মাত্রাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। হরমোনের এই পরিবর্তণের কারণে নারীদের পেটে মেদ জমতে থাকে।

তাই এই সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার দরকার হয়।

ভুল ব্যায়াম

প্রতিদিন দৌড়ানো বা লাফানো হৃদপিণ্ডের জন্য ভালো। তবে হৃদপিণ্ডের জন্য ভালো ব্যায়াম, কোমরের ক্ষেত্রে কাজ করে না।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের এনডোক্রিনলোজি বিভাগের অধ্যাপক সঙ্গীতা কাশ্যাপ বলেন, “ওজন কমানো এবং কার্ডিওভাস্কুলার ব্যায়ামের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।”

তিনি আরও জানান, শক্তি খরচ করে ব্যায়াম করলে পেশি গঠন ভালো হয়।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের পুষ্টিবিদ কেইট প্যাটন জানান, চর্বির চাইতে ক্যালরি বেশি পুড়িয়ে পেশি গঠিত হয়। এই কারণে পেশি গঠনের ব্যায়াম বেশি করলে স্বাভাবিকভাবেই বেশি ক্যালরি খরচ হয়।

হালকা হলে সপ্তাহে ২৫০ মিনিট আর কঠিন হলে সপ্তাহে ১২৫ মিনিট ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন প্যাটন।

প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়া

“সাদা আটা, চিপস, বিস্কুটের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত চিনি, মিষ্টি পানীয় ও মিষ্টান্ন শরীরে প্রদাহ বাড়ায়” বলেন প্যাটন।

তিনি আরও বলেন, “আর প্রদাহের সঙ্গে পেটের মেদের সম্পর্ক রয়েছে। যত বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া হবে ততই পেটের চর্বি কমার ক্ষমতা হ্রাস পাবে।”

প্রাকৃতিক খাবার যেমন: ফল, সবজি এবং শষ্যজাতীয় খাবারে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। যা শরীরে প্রদাহ কমিয়ে পেটের মেদ জমতে দেয়না।

ভুল ‘ফ্যাট’ গ্রহণ

শরীরে সব চর্বির প্রভাব একরকম নয়। প্যাটন জানান, গবেষণায় দেখা গেছে ‘স্যাচারেইটেড ফ্যাট’ (মাংস এবং দুগ্ধজাতীয় খাবারে থাকে) অন্ত্রের চর্বি তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

অন্যদিকে ‘মোনোআনস্যাচারেইটেড ফ্যাট’ (অলিভ অয়েল এবং আভোকাডো’তে পাওয়া যায়) এবং নির্দিষ্ট ঘরানার ‘পলিআনস্যাচারেইটেড ফ্যাট’ (বিশেষ করে ওমেগা থ্রিএস পাওয়া যায় আখরোট, সানফ্লাওয়ারের দানা এবং চর্বিযুক্ত মাছে)— এগুলো শরীরের প্রদাহের বিপরীতে প্রভাব ফেলে।

আর সঠিক প্রোটিন গ্রহণ করলে শরীরও ভালো হয়।

তবে প্যাটন সাবধান করে দিয়ে জানান, যে কোনো প্রকার চর্বি শরীরে বেশি গেলে সেখান থেকে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বা চর্বিও অতিরিক্ত খাবেন না।

ঠিকমতো ব্যায়াম না করা

মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত স্পোর্টস অ্যান্ড এক্সারসাইজ উপর করা এক গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, যারা হালকা ব্যায়াম করেন তাদের চাইতে কঠিন ব্যায়াম করা মানুষদের পেটের মেদ বেশি কমে।

ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যায়াম প্রশিক্ষক নাটালি জিল বলেন, “পূর্ণোদমে ব্যায়াম করতে হবে। আপনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্যালরি পোড়ানো। আর কঠিন ব্যায়াম করেই তা সম্ভব।”

কঠিন ব্যায়াম করতে কষ্ট হলেও এভাবে ভাবুন— কম সময়ে বেশি ক্যালরি পোড়ানো যাচ্ছে।

ভুল ব্যায়াম করা

ঠিকমতো ব্যায়াম না করলে যেমন কাজ হয় না তেমনি ভুল ব্যায়ামও কোনো উপকারে আসে না।

জিল বলেন, “শুধু পেটের ব্যায়াম করলেই হবে না, সঙ্গে পিঠ, নিতম্বসহ শরীরের সব অঙ্গের ব্যায়াম করতে হবে। যত বেশি মাংশপেশির ব্যবহার হবে ততবেশি ক্যালরি পুড়বে।”

মানসিক চাপ

পারিবারিক জীবন, অফিসের কাজ, বিল জমা দেওয়ার জন্য টাকা জোগাড়— ইত্যাদি কারণে মানসিক চাপে থাকে মানুষ। আর এ থেকে শরীরের বাড়তি ওজন কমানো কঠিন হয়ে যায়। বিশেষ করে শরীরের মধ্যবর্তী অঞ্চলের মেদ।

মানসিক চাপে থাকলে উচ্চমাত্রার চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার আকর্ষণ বাড়ে। তবে শুধু এই কারণেই নয়, স্ট্রেস হরমোন করটিজোল শরীরে লেগে থাকা চর্বি প্রসারিত করতে সাহায্য করে। আর শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় অন্ত্রে বেশি চর্বি থাকে।

কম ঘুম

পর্যাপ্ত ঘুম না হলেও ওজন বাড়তে পারে।

১৬ বছর ধরে প্রায় ৭০ হাজার নারীর উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে যারা সাত ঘণ্টা ঘুমায় তাদের চাইতে যারা পাঁচ ঘণ্টা বা এর চেয়ে কম ঘুমাচ্ছেন, এদের মধ্যে শতকরা ৩০ভাগেরই ওজন বেড়েছে।

ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অফ হেল্থ’য়ের পরামর্শ হচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।

আপেলাকৃতি

যদি নিতম্ব এবং উরুর চাইতে পেটের মাপ গোলাকার হয় তবে আপনার আকার আপেলের মতো।

ডা. কাশ্যাপ বলেন, “এই বংশগত প্রবণতার কারণে হয়ত পেটের মেদ কমানো কষ্ঠকর। তবে অসম্ভব কিছু নয়।”

আপনি হয়ত অসুস্থ

যদি টেসটোসটেরনের মাত্রা বেশি থাকে তবে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রম (পিসিওএস) হতে পারে। এর কারণে পেটের মেদ কমানো কষ্ঠকর হয়।

ডা. কাশ্যাপ বলেন, “দেহের আকার আপেলের মতো হওয়ার পাশাপাশি যদি অতিরিক্ত ওজন থাকে তবে ডাক্তার দেখানো উচিত।”

সেই সঙ্গে হয়ত আপনি প্রিডায়াবেটিক বা ডায়াবেটিক রুগিও হতে পারেন।

তবে আপনার কি পেটের মেদ কমানোর ইচ্ছা আছে?

ডা. কাশ্যাপ বলেন, “স্বল্প ক্যালরি যুক্ত খাবারের সঙ্গে প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার, স্বল্প কার্বোহাইড্রেইট ও চিনি সঙ্গে কার্ডিওভাস্কুলার এবং ওজন কমানোর ব্যায়ামের সমন্বয়ের মাধ্যমে পেটের মেদ কমানো সম্ভব।”