বর্তমানে ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে বাহারি রং ও বিচিত্র নকশার ছোট বড় ব্যাগের ব্যবহার চোখে পড়ে বেশি।
বাজারে এখন একটু ঘুরলেই চোখে পড়বে বাহারি ডিজাইনের সব ব্যাগ। দোকানগুলোতে বিভিন্ন নকশা এবং রংয়ের আধিক্য দেখলেই বোঝা যায় বর্তমান ফ্যাশনে ব্যাগের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলেন দেশীয় ফ্যাশন ঘর ‘সাদা-কালো’র কর্ণধার তাহসীনা শাহীন।
কিছুদিন আগেও পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যাগ কেনার প্রবণতা বেশি ছিল। তবে এখন মেয়েদের দিকে একটু লক্ষ করলেই দেখা যায় সেই ধারাতেও এসেছে পরিবর্তন। পোশাকের রংয়ের সঙ্গে মানানোর পাশাপাশি এখন কন্ট্রাস্ট স্টাইলেও ব্যাগ নিতে পছন্দ করেন অনেকে। সেক্ষেত্রে জুতো, ঘড়ি বা অন্যকোনো অনুষঙ্গের সঙ্গে মানিয়ে ব্যাগ বাছাই করা যেতে পারে।
শাহীন বলেন, “বর্তমান যুগে ‘শকিং’ রংয়ের ব্যাগের দিকে বেশি ঝুঁকছেন মেয়েরা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পুরো পোশাকের রংয়ের সঙ্গে না মিলিয়ে বরং পোশাকের কোনো একটি প্রিন্ট বা শাড়ির পাড়ের সঙ্গের মিলিয়ে ব্যাগ নিচ্ছেন এখনকার ফ্যাশন সচেতন মেয়েরা।”
তবে বর্তমানে ব্যবহারে আরামদায়ক ও নিজের সঙ্গে মানানসই ব্যাগের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে ক্রেতাদের। বাজারে চামড়া, কাপড়, পাট ও বিভিন্ন উপাদানের ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি পার্টি ব্যাগ ও বটুয়ার জনপ্রিয়তাও অনেক।
সবসময়ই চামড়ার তৈরি জিনিসের কদর কিছুটা বেশি। ব্যাগের ক্ষেত্রেও তাই। এক রঙা হালকা নকশার চামড়ার ব্যাগের দাম তুলনামূলক বেশি। তবে ভালো চামড়ার ব্যাগ অনেকদিন টেকসই থাকে। তাছাড়া চামড়ার ব্যাগ ভিন্ন ধরনের ব্যক্তিত্ব ও রুচিশীলতা প্রকাশ করে।
পার্টি, অফিস বা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব জায়গায় চামড়ার ব্যাগ দারুণ মানিয়ে যায়। বাজারে কালো, বাদামি, লাল, নেভি-ব্লুসহ বিভিন্ন রংয়ের ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে।
দেশীয় ফ্যাশন ঘর আড়ংয়ে চামড়ার ব্যাগের অনেক ডিজাইন পাওয়া যায়। তবে চামড়ার তৈরি পার্টি ব্যাগের বৈচিত্র্যই বেশি।
একটু বড় বেল্টের মাঝারি আকারের ব্যাগের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। ব্যাগগুলো দেখতে ফ্যাশনেইবল এবং ব্যবহার করাও সুবিধাজনক।
হোমিকোনোমিক্স কলেজে পড়ুয়া ফারজানা আশা কি ধরনের ব্যাগ পছন্দ করেন জানতে চাইলে বলেন, “কলেজে যাওয়ার জন্য একটু বড় আকারের এবং আরামদায়ক ব্যাগ বেশি পছন্দ করি। এক্ষেত্রে বেল্টের দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়। কারণ কলেজে যাওয়ার জন্য অনেক বই নিতে হয়, তাই বেল্ট ভালো না হলে কাঁধে বেশি চাপ পড়ে। আবার অনেক সময় বেশি বই নিতে ব্যাগপ্যাকও বেছে নেই।”
আড়ংয়ে মাঝারি আকারের চামড়ার ব্যাগ পাওয়া যাবে ১ হাজার ৬শ’ টাকা থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে।
ঢাকার পান্থপথে অবস্থিত বসুন্ধরা সিটি মার্কেটের ছয়তলায় আছে চামড়ার তৈরি দেশীয় ব্যাগের দোকান। মান ভেদে এখানে ব্যাগের দাম শুরু হয় ১ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে। তবে মাঝারি আকারের ব্যাগই বেশি পাওয়া যায়।
নিউমার্কেট, চাঁদনি চকেও মিলবে বিভিন্ন মানের চামড়ারব্যাগ।
পিংক সিটিতে পাওয়া যাবে কম্বোডিয়া ও হংকং থেকে আমদানি করা গুচি, বারবেরি, ভারসাচে, মাইকেল কোরস ইত্যাদি ব্র্যান্ডের ব্যাগ। ব্রান্ড ও আকার ভেদে এসব ব্যাগের দাম পরবে ৬ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা।
এছাড়াও বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের রেপ্লিকা ব্যাগও পাওয়া যাবে পিংক সিটিতে।
এই ধরনের ব্যাগ পাওয়া যায় বসুন্ধরা শপিং মল, বাটা, এপেক্স, চাঁদনি চক, নিউমার্কেট ও পিংক সিটিতে। দাম ৬শ’ থেকে ৭ হাজার টাকা।
নীলক্ষেতের পাইকারি ব্যাগের দোকান রাফিনা এন্টারপ্রাইস’য়ের মালিক মো. আব্দুর রহিম জানান, এখান থেকে সর্বনিম্ন এক ডজন থেকে শুরু করে শত পিস ব্যাগ সরবারহ করা হয়।
তার কথায়, “আমাদের দোকানে ব্যাগের দাম সর্বনিম্ন ৩২০ টাকা থেকে ৭শ’ টাকার মধ্যে। ব্যাগগুলো প্রধানত রেক্সিন ও অন্যান্য উপাদানে তৈরি। ব্যাগের কাঁচামাল ভারত ও চীন থেকে আনা হয় এবং আমাদের নিজস্ব কারখানায় কামরাঙ্গির চরে এসব ব্যাগ তৈরি করা হয়।”
গাউসিয়া মার্কেটের পারভিন ব্যাগ হাউস ও উদয়ন ব্যাগ হাউস এর বিক্রেতা কামাল ও আজাদ জানান, এই মার্কেটের দোকানে সাড়ে ৩শ’ থেকে শুরু করে ৯শ’ টাকার মধ্যে ব্যাগ পাওয়া যায়।
বিক্রেতারা জানান, এসব দোকানের অধিকাংশ ব্যাগ কামরাঙ্গির চর থেকে আনা হয়। রংয়ের ক্ষেত্রে সাদা, কালো, হলুদ, গোলাপি, সবুজ, লাল, নীল ইত্যাদি ব্যাগের চাহিদা বেশি।
তাছাড়া অ্যানিমেল প্রিন্ট, পোলকা ডট, মাল্টি কালার— ইত্যাদি ব্যাগের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এবং তরুণীদের আগ্রহ বেশি।
বিক্রেতারা জানান, তাদের ক্রেতাদের তালিকার শীর্ষে আছেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীরাই।
ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটের পুষ্পিতা ব্যাগ হাউসের বিক্রেতা মোবারক বলেন, “এসব দোকানে অধিকাংশই বাইরের ব্যাগ পাওয়া যায়। সাইড ব্যাগের দাম ৪শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। ক্লাচের দাম শুরু ৫শ’ টাকা থেকে। এছাড়াও পাওয়া যাবে নানান রকম বটুয়া, পার্টস ইত্যাদি।”
মোবারক জানান রঙিন ব্যাগ বিশেষ করে হলুদ, কমলা, সবুজ, সোনালি ও সাদা ব্যাগের চাহিদা বেশি।
বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে একটু বড় আকারের পার্টি ব্যাগ এবং ক্লাচ বেশ জনপ্রিয়। আড়ং’য়ে রয়েছে বিভিন্ন নকশায় চামড়ার উপর পাথর ও মখমলের কাজ করা পার্টি ব্যাগ। এছাড়া হাতে এমব্রয়ডারি করা পুতি বসানো, কাপড়ের উপর পুতির কাজ করা, শীতল পাটি, পাট ও জুয়েলারি স্টোনের পার্টি ক্লাচও পাওয়া যাচ্ছে।
নকশা ও মান ভেদে মোটামোটি ৬শ’ টাকা থেকে এসব ব্যাগের দাম শুরু।
দামে সস্তা ও অনুষ্ঠানে নেওয়ার উপযোগী বলে ডট পাঞ্চ পার্টি ব্যাগগুলোর চাহিদা বাড়ছে ক্রেতাদের কাছে।
পাশাপাশি ফার ও লেদারের পার্টি ব্যাগ মিলবে ৭শ’ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে।
এছাড়া বসুন্ধরা, চাঁদনি চক, নিউমার্কেট ও পিংক সিটির বিভিন্ন ব্যাগের দোকানে জুয়েলারি স্টোনের কাজ করা পার্টি ও ক্লাচ ব্যাগের দাম শুরু ৫শ’ টাকা থেকে। হাতে রাখার পাশাপাশি কাঁধে ঝোলানোর জন্য সঙ্গে থাকছে চিকন চেইন। পছন্দমতো চেইন খোলা বা লাগানো যাবে।
শাড়ি, স্কার্ট বা লেহেঙ্গার সঙ্গে সহজেই মানিয়ে যায় বটুয়া। কাপড়ের উপর লেইস বসানো বা ভেলভেটের বটুয়া পাওয়া যাবে আড়ং’য়ে ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকার মধ্যে। এছাড়া পিংক সিটিতে জয়পুরি বটুয়া পাওয়া যাবে, দাম শুরু ২ হাজার টাকা থেকে।
বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও আজিজ সুপার মার্কেটেও পাওয়া যাবে বটুয়া।
ছবি: ঋত্বিকা আলী।