হঠাৎ একদিন কোনো খাবার খেতে গিয়ে তীব্র ব্যথা বা যন্ত্রণা অনুভূত হল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখের ভিতরে তাকাতেই চোখে পড়লো ঠোঁটের ভেতর ছোট একটি গোটা বা ঘা।
মুখের ভিতরে ঘা বা আলসার খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। আকারে ছোট হলেও এই সমস্যায় বেশ ভুগতে হয়।
এই সমস্যার মূল কারণ পরিষ্কারভাবে জানা না গেলেও মূলত ভিটামিন সি’র অভাব, দুশ্চিন্তা এবং হরমোনের ভারসাম্য ও পরিবর্তনের কারণে মুখের ভিতর এ ধরনের ঘা-এর প্রোকোপ দেখা যেতে পারে।
এ বিষয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, “বিভিন্ন কারণেই এই সমস্যা হতে পারে। অন্যতম কারণ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ার, ভিটামিন ডি বা রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন সি-এর অভাব।”
তাছাড়া জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, চর্ম রোগ ইত্যাদি রোগের কারণেও মুখে আলসার হতে পারে বলে জানান ডা. কামরুল।
তবে দীর্ঘদিন যদি মুখে ঘা হওয়ার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কারণ সম্পর্কে ডা. কামরুল বলেন, “অনেক সময় বাত, এইচআইভি, পাকস্থলিতে প্রদাহ ইত্যাদি কারণ থেকেও ধরনের ঘা হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”
মুখের ভিতরে ঘা বা আলসার হলে ওষুধের পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু সাধারণ টোটকাতেও উপকার পাওয়া যায়।
- হালকা গরম পানিতে খানিকটা লবণ বা বেকিং সোডা গুলিয়ে কুলিকুচি করতে হবে। দিনে দুই বা তিনবার এভাবে কুলিকুচি করলে আরাম পাওয়া যাবে।
ডা. কামরুল বলেন, “গরম পানি মুখে প্রদাহ জনিত ব্যথায় বেশ উপকারি। তাছাড়া ব্যাক্টেরিয়া রোধে গরম পানি এবং লবণ বা সোডা ভালো কাজ করে। তাই মুখে ঘা হলে গরম পানি নিয়ে কুলিকুচি করলে উপকার পাওয়া যায়।”
- কখনও কখনও ভিটামিন সি’র অভাবেও মুখে ঘা হতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল খেতে হবে।
- নারিকেলের দুধ দিয়ে দিনে দু’তিনবার কুলিকুচি করলেও মুখ জীবাণুমুক্ত থাকবে।
- মুখে ঘা হলে বা আলসার হলে চুইংগাম বা চুষে খাওয়ার চকলেট এড়িয়ে চলতে হবে।
- ঘা’য়ের উপর গ্লিসারিন দিলে উপকার পাওয়া যায়।
- মুখে ঘা হলে চা, কফি ইত্যাদি পানীয় পরিহার করতে হবে।
- টক দই খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
- মুখে ঘা হলে কাঁচাপেঁয়াজ খেলে উপকার পাওয়া যায়। কারণ কাঁচা পেঁয়াজে আছে প্রচুর সালফার যা ঘা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- মুখে ঘা হলে শক্ত, গরম, অতিরিক্ত ঝাল এবং এসিডিক খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- এ ধরনের ক্ষত হলে নরম ব্রিসেলসের ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজার অভ্যাস করতে হবে।
এই ঘরোয়া পন্থাগুলো অনুসরণ করলে ঘায়ের ব্যথা কিছুটা কমবে। তাছাড়া অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল মাউথ ওয়াস ও নিকোনাজল-জাতীয় ওষুধ লাগানোর পরামর্শ দেন ডা. কামরুল।
তবে বেশি সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।