বিড়াল পোষার আদ্যপ্রান্ত

সারাদিনের কাজ শেষে ঘরে ফেরার পর আপনাকে স্বাগত জানাতে আর একটু একটু আদর পাওয়ার জন্য পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়াবে একটি ছোট্ট লোমশ প্রাণী।

জেনিফার ডি প্যারিসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2014, 01:15 PM
Updated : 17 Nov 2014, 01:20 PM

তাছাড়া ইঁদুর এবং তেলাপোকার উপদ্রব থেকে বাঁচিয়ে ঘর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব পালন করবে ঘরের ছোট্ট ওই চারপেয়ে সদস্য।

পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়ালের জনপ্রিয়তা আছে বেশ। উঁচু দালানের ফ্ল্যাটবাড়িতে পোষার জন্য বিড়ালের রয়েছে আলাদা কদর।

তবে বিড়াল পালার সঠিক নিয়মগুলো অনেকেই জানেন না। ঘরে একজন বাড়তি সদস্য আনতে চাইলে তার দেখাশুনাও করতে হবে যথেষ্ট সচেতনতার সঙ্গে।

তাই বিড়ার পোষার নানান খুঁটিনাটি তথ্য নিয়েই এই প্রতিবেদন।

ছবি: রয়টার্স।

পরিবারের সবাই বিড়াল পছন্দ করে তো?

পোষা প্রাণীর ব্যাপারে আপনার আগ্রহ থাকলেও, হয়তো বিড়ালের নাম শুনলেই নাক সিটকান পরিবারেরই একজন। তাই একটি বিড়াল ঘরে আনার আগে ভেবে দেখুন, সবার সঙ্গে কথা বলুন। সব থেকে বড় বিষয়, বিড়াল পালা ও এর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ মনে রাখতে হবে, একটি পোষা প্রাণী নিজের ঘরে আনার অর্থ এর সব ধরনের দায়িত্ব বহন করতে হবে আপনাকে।

বাসায় ছোট শিশু থাকলে অনেকেই বিড়াল পালতে চান না সন্তানের অসুখ হওয়ার কথা ভেবে।

তবে একটি ভ্রান্ত ধারণা, জানালেন দুই সন্তানের মা মাহাবুবা ইশরাত।

তিনি বলেন, “পোষা বিড়াল নিয়মিত গোসল করিয়ে পরিষ্কার রাখলেই চলবে। তাহলে আর অসুখ ছড়ানোর ভয় থাকবে না।”

বিড়ালের খাবার

বিভিন্ন রকম বিড়াল বিভিন্ন খাবার খেতে পছন্দ করে। বাজারে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের ‘ক্যাট ফুড’। তবে এই খাবার বিড়ালের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

এমনটাই জানালেন আটটি বিড়ালের মালিক এমি অপর্ণা বাড়ই।

“মুরগির মাংস কিংবা মাছ সেদ্ধ, সঙ্গে একটু ভাত বিড়ালের জন্য সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার”—বললেন এমি।

তিনি আরও বলেন, “এক্ষেত্রে মাংস কিংবা মাছ শুধুমাত্র লবণ দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে, বিড়ালের খাবার তৈরি করতে হবে সম্পূর্ণ মসলা ছাড়া।”

মানুষের কিছু খাবার হতে পারে বিড়ালের জন্য বিষাক্ত। অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইট ‘ক্যাট ওয়ার্ল্ড’য়েল দেওয়া তথ্য অনুসারে, বিড়ালের জন্য নিষিদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে চকোলেট, কাঁচাডিম, আঙুর ফল, আদা-রসুন-পেঁয়াজ, এমনকি দুধ।

বিড়ালকে দুধ খাওয়ানোর প্রচলন অনেক পুরানো হলেও, গবেষণায় দেখা গেছে দুধের কিছু উপাদানের কারণে বিড়ালের ডায়রিয়া হতে পারে।

মৌসুমের খেলার সাথি পোষা বেড়াল।

বিড়ালের পরিচর্যা  

পেশায় ছাত্রী মেহজাবিন বাঁধন বিড়াল পালেন দশ বছর ধরে।

তিনি জানান, তার চারটি বিড়াল প্রতি বছর শীত আসার আগে আগেই গোসল করান। শীতের পুরো সময় গোসল দেওয়া উচিত নয় বলেই মতামত বাঁধনের।

তিনি আরও পরামর্শ দিতে গিয়ে জানান, এমনিতে সারা বছর বিড়ালকে গোসল করাতে হবে প্রতি মাসে অন্তত দুই বার। গোসলের সময় মেডিকেইটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। বাজারে বিড়ালের জন্য আলাদা শ্যাম্পু পাওয়া যায়।

এছাড়া সাধারণ উকুন-নাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে। শ্যাম্পু ব্যবহার করলেও উকুন এবং পোকা হতে পারে বিড়ালের গায়ে, এক্ষেত্রে গোসল করানোর পর বিড়ালের জন্য বিশেষ ধরনের স্প্রে পাওয়া যায়, যা ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যাবে। 

বিড়ালের উকুন নাশক এই বিশেষ স্প্রে পাওয়া যাবে প্রাইভেট পশু চিকিৎসকদের চেম্বারে। প্রতিদিন একবার বিড়ালের লোম আঁচড়ে দিতে হবে।

বিড়ালের পায়খানা-প্রস্রাবের ব্যবস্থা বাড়িতেই করা যেতে পারে। ছোট কোন বোলের মধ্যে বালু দিয়ে রাখতে পারেন ঘরের এক কোণায়। বালু না পেলে ব্যবহার করতে পারেন ছাই, কিংবা খবরের কাগজ।

তবে সিমেন্ট ব্যবহার না করার পরামর্শ দিলেন বিড়াল পালক দীপান্বিতা হৃদি।

এছাড়াও সুপারশপগুলোতে পাবেন ‘লিটার বক্স’, সরাসরি বিদেশ থেকে আমদানি করার কারণে এগুলোর দাম পড়বে বেশি।

বিড়ালের সুস্থতা

বিড়ালের বয়স দুই সপ্তাহ হওয়ার পর থেকে নিয়মিত কৃমির ওষুধ দিতে হয়, জানালেন শের-এ-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের পাবলিক হেলথ’য়ের বিভাগীয় প্রধান ডাক্তার কেবিএম সাইফুল ইসলাম।

ডাক্তার সাইফুল বলেন, “বিড়ালের ওজনের উপর ভিত্তি করে ওষুধের পরিমাণে পার্থক্য হতে পারে। এছাড়া বিড়ালটি কোন এলাকায় এবং কী পরিবেশে থাকে, তার উপর নির্ভর করে কৃমির ওষুধ দেওয়ার হয়। তাই ওষুধ দেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”

ডাক্তার সাইফুল আরও জানান, এমনিতে বছরে একবার বিড়ালকে ভ্যাকসিন দিতে হয়। তবে এক্ষেত্রেও বিড়ালের বয়স এবং আশপাশের পরিবেশের উপর নির্ভর করে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

মরণঘাতী বেশ কয়েকটি রোগ থেকে বিড়ালকে বাঁচাতে ভ্যাকসিন দেওয়া জরুরি। ভ্যাকসিন না দেওয়া হলে বিড়ালের কিছু রোগ মানুষের মাঝেও ছড়াতে পারে।

পরিণত বয়সে নির্দিষ্ট সময় পরপর বাচ্চা দিতে পারে মেয়ে বিড়াল, এক্ষেত্রে বন্ধ্যাকরণ জরুরি। যেকোনো পশু চিকিৎসকের চেম্বারে এই অস্ত্রোপচার করানো হয়।

শুধু মেয়ে বিড়ালই নয়, ছেলে বিড়ালকেও খোজা বা নিউটার করা প্রয়োজন। ছোট্ট এই অস্ত্রোপচার বিড়ালকে রোগমুক্ত করার পাশাপাশি প্রাণীটির আয়ুও বাড়িয়ে দেয়। বিড়ালের বয়স চার থেকে ছয় মাস হলেই বন্ধ্যা কিংবা খোজাকরণ করে ফেলা উচিত বলে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এতে অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সেরে উঠবে বিড়াল।

জাকিয়া উর্মির প্রিয় পোষা বিড়াল।

বিড়াল নিয়ে নানা উদ্যোগ

প্রাণীদের নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এখন আয়োজিত হচ্ছে নানান ধরনের অনুষ্ঠান। সম্প্রতি পশুপ্রেমী সংগঠন ‘ক্যাট কনসার্ন অ্যাসোসিয়েশন’য়ের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যাতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান ‘ক্যাট শো’। এতে অংশ নিয়েছিল দেশি-বিদেশিসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৩০টি বিড়াল।

এছাড়া কম খরচে বিড়ালের ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে ফেইসবুক গ্রুপ ‘ক্যাট সোসাইটি বাংলাদেশ’।

গ্রুপের অ্যাডমিন সায়মা ফিরোজ বলেন, “এ বছরই প্রথম এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছি আমরা। এরইমধ্যে দুটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে অনেকের পোষা বিড়ালকে, ২২ নভেম্বর শের-এ-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে আরেক দফা ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম। বিড়ালদের ভ্যাকসিন দেওয়ার দায়িত্বে থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পশু চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম।”

প্রিয় বিড়ালের অসুস্থতা কিংবা যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য এখন সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেইসবুকেই পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় সাহায্য ও তথ্য। ‘ক্যাট সোসাইটি বাংলাদেশ’ ছাড়াও রয়েছে ‘অ্যানিম্যাল লাভারস অফ বাংলাদেশ’য়ের মতো বেশ কয়েকটি গ্রুপ, যেখানে পাওয়া যাবে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পশু চিকিৎসকদের ফোন নম্বর এবং ঠিকানা।

অনলাইন শপিং এখন বহুল জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। ঘরে বসে অর্ডার দেওয়া যাবে বিড়ালের জন্য খেলনা, খাবার কিংবা পোশাক।

এক্ষেত্রে লগইন করতে হবে http://kukurbiral.org/ সাইটে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং খুলনাতে ফ্রি হোম ডেলিভারি দিয়ে থাকে এই অনলাইন শপ।

বেড়ালের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়াও ওয়েবসাইটে পাবেন ডাক্তার এবং বিড়াল বিষয়ক পরামর্শদাতাদের তথ্য।