শিশুর কিডনি রোগ

বৃক্ক বা কিডনি'র সমস্যা যে শুধু বড়দের ক্ষেত্রেই হতে পারে এ ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। মাতৃগর্ভ থেকেই নবজাতক আক্রান্ত হতে পারে বৃক্কের সমস্যায়। আর তিন-চার বছরের শিশুও কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

ইরা ডি. কস্তাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2014, 02:06 PM
Updated : 17 Sept 2014, 02:28 PM

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আ.ন.ম. সাইফুল হাসান বলেন, “শিশু জন্মের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যদি প্রস্রাব না করে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তাকে নিয়ে শিশু কিডনি বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হতে হবে।”

ডা. সাইফুল জানান, শিশুরা বাইরের জুস, কোল্ড ড্রিংকস এগুলো খেতে খুবই পছন্দ করে। তবে এ ধরনের পানীয় বাচ্চাদের কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর। মা-বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশুরা আজেবাজে খাবার না খায়। আর দিনে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করে। পানি এবং পানিজাতীয় খাবার, ফলমূল বেশি খেলে মূত্রাশয়ের রোগের ঝুঁকি কমে আসে। 

ডা. সাইফুল বলেন, “তিন থেকে আট বছর বয়সী বাচ্চাদের মূলত দুই ধরনের কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটি নেফ্রোটিক সিনড্রম এবং অপরটি হলো অ্যাকিউট গ্লোমেরিউলো নেফ্রাইটিস বা এজিএন।”

এই দুটি রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণের কথা জানালেন ডা. সাইফুল।

তিনি বলেন, “নেফ্রোটিক সিনড্রম হলে বাচ্চাদের প্রথমে চোখ ফোলাভাব দেখা যায়, এরপর পা এবং পুরো শরীরই ফুলে ওঠে। আর অ্যাকিউট গ্লোমেরিউলো নেফ্রাইটিস হলে বাচ্চার প্রস্রাব কমে যায় এবং প্রস্রাব হয় গাঢ় লাল রংয়ের। তাই মা-বাবাকে এসব বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।”

এছাড়া কিডনির আরও কিছু সমস্যা দেখা যায়। তবে দেখা গেছে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরাই বেশি কিডনি বা মূত্রতন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। এমনই কিছু রোগের নাম উল্লেখ করা হলো।

পোস্টিরিওর ইউরেথ্রাল ভালব বা পিইউভি: এ সমস্যায় শুধু ছেলে শিশু আক্রান্ত হয়। এতে আক্রান্ত শিশু প্রস্রাব করার সময় কষ্ট অনুভব করে, প্রস্রাবের ধারা দুর্বল ও থেমে থেমে হয়, মাঝে মাঝে জ্বর হতে পারে, কারও কারও তলপেটে নাভির কাছটা ফুলেও যায়, শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায়।

যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে কিডনির বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।

ইউটেরোসিলি: এ রোগে ছেলে শিশুর তুলনায় মেয়ে শিশু বেশি আক্রান্ত হয়। কিডনির সঙ্গে মূত্রথলি ইউরেটর দিয়ে যুক্ত। ইউরেটর বেলুনের মতো ফুলে যায় ফলে প্রস্রাব আটকে যায়। এ অসুখে এন্ডোস্কোপিক সার্জারি করার প্রয়োজন হতে পারে।

হাইপোস্পেডিয়াসিস, মিয়েটাল স্টেনসিস, ফাইমোসিস, হাইড্রোসিলি, আনডিসেন্ডেড টেস্টিস— অসুখগুলোতে ছেলে শিশু আক্রান্ত হয়। আনডিসেন্ডেড টেস্টিসে যথা সময়ে চিকিৎসা না করা হলে সন্তান জন্মদান ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পেলভি-ইউরেটেরিক জাংশন অবস্ট্রাকশন- এতে ছেলে-মেয়ে উভয় শিশুই আক্রান্ত হয়। রোগটি জন্মগত হলেও প্রকাশ পেতে সময় লাগে। তাই যথাসময়ে রোগ নির্ণয় খুব জরুরি।

ডা. সাইফুল জানান, পানি এবং পানিজাতীয় খাবার কম খাওয়ার কারণেই কিডনির সমস্যা বেশি হয়। তাছাড়া আমাদের  দেশে এখনও কবিরাজি চিকিৎসা আর ওষুধের উপর অনেকেই নির্ভর করে থাকেন। আর এ ধরনের  ওষুধে মার্কারির পরিমাণ থাকে বেশি। মার্কারি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করে।

আবার শিশুরা বাগানে বা মাঠে খেলতে গেলে অনেক সময় বোলতা বা মৌমাছি হুল ফুটিয়ে থাকে। পোকা-মাকড়ের হুলে এক ধরনের টক্সিন বা বিষ থাকে যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।

শিশুদের কিডনি বা মূত্রতন্ত্রের সমস্যা প্রথম পর্যায়েই সনাক্ত করা গেলে সাধারণ চিকিৎসার মাধ্যমেই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তাই মা-বাবাকে শিশুর এই ধরনের সমস্যার ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার।

যদি সমস্যা দেখা যায় তাহলে প্রথমেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে জানালেন ডা. সাইফুল।