মাইগ্রেইন থেকে মুক্তি

মাইগ্রেইন, যা বাংলায় ‘আধকপালি’ ব্যথা নামে পরিচিত। শিশু থেকে শুরু করে যে কোনো বয়সি, যে কারও মাইগ্রেইন দেখা দিতে পারে।

ফজলে আজিমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2014, 02:10 PM
Updated : 15 March 2014, 02:34 PM

ইউএস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ১০ থেকে ৪৫ বছর বয়সিরা মাইগ্রেইনের ব্যথায় বেশি ভুগে থাকেন। কারও ক্ষেত্রে বেশি বয়সেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত পুরুষের ‍তুলনায় নারীরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন।

মাইগ্রেইনের ব্যথা মাথার একপাশে হয়। কারও ক্ষেত্রে বমিও হতে পারে। আলো ও কোলাহল সহ্য হয় না।

গবেষণায় দেখা গেছে পরিবারে বাবা-মা’র কারও মাইগ্রেইন থাকলে সন্তানেরও এই ব্যথা হতে পারে। এছাড়া মাতৃত্বকালীন সময়ে নারীদের মাইগ্রেইন থাকতে পারে, তবে সবার ক্ষেত্রে না-ও দেখা যেতে পারে।

ওই সাইট আরও জানায়, মানসিক চাপ বা কাজের চাপ থেকেও এই ব্যথা হতে পারে। কারণ এই সময়ে মস্তিষ্কে ঠিকভাবে রক্তসঞ্চালন হয় না। ফলে মাথা ঝিমঝিম করে, মাথার ডান অথবা বাম পাশ ব্যথা করে।

তবে ঠিক কোন কারণে মাথাব্যথা হয় তা এখনও স্পষ্ট নয়। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মেডিকেল এক্সপার্টরা বিশ্বাস করেন, মস্তিষ্কের নার্ভগুলো যখন ভালোভাবে রক্তসঞ্চালন করতে পারে না তখনই মাইগ্রেইনের আক্রমন শুরু হয়। এ সময় মস্তিষ্কের টিস্যুগুলোতে রক্তচলাচলে বাধা পড়ে।

এ সম্পর্কে নরসিংদী ডায়াবেটিক হাসপাতলের চিফ কনসালটেন্ট আই স্পেশালিস্ট অ্যান্ড ফ্যাকো সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, “মাইগ্রেইনের কারণে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। সুস্থ জীবন-যাপনের জন্য সবসময় কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে। তবে টেনশন করা যাবে না। কারণ অলসতা টেনশন বাড়ায় যা থেকে মাইগ্রেইন হতে পারে।”

এছাড়া শিক্ষার্থীদের পড়ার পরিবেশ যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাসে পরিপূর্ণ থাকে সেদিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

মাইগ্রেইনের আরও কিছু কারণ

শারীরিক ও মানসিক চাপ। হতাশা বোধ। নির্ধারিত সময়ে খাবার না খাওয়া। অ্যালকোহল সেবন। ধূমপান। পারফিউমের গন্ধ। ঘুমের সময় ঘাড় বাঁকা থাকা, বা যেভাবে ঘুমাতে অভ্যস্ত নন সেভাবে ঘুমানো। মেয়েদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন।

মাইগ্রেইন হলে যে খাবারগুলো কম খেতে হবে

ক্যাফেইনযুক্ত চকলেট ও অতিরিক্ত ক্যাফেইন খাওয়া যাবে না। এছাড়া যাদের মাইগ্রেইন রয়েছে তাদেরকে মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে। 

মাইগ্রেইন থেকে মুক্তির জন্য

প্রথমেই শারীরিক-মানসিক চাপ ও হতাশা মুক্ত হতে হবে। এজন্য রুটিন করে দৈনন্দিন কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট সময়ে সব কাজ করার চেষ্টা করুন। অফিসের কাজ বাসায় নিয়ে আসবেন না। এতে স্নায়বিক চাপ বেড়ে যায়।

প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খান। যারা বাইরে থাকেন তারা অন্তত কিছু হালকা খাবার সঙ্গে রাখতে পারেন।

খোলা জায়গায় ধূমপানের ফলে আশপাশে থাকা অধূমপায়ীর মাইগ্রেইন হতে পারে। তাছাড়া যারা ধূমপান করেন তারা প্রায়ই মাইগ্রেইনে ভোগেন।

কড়া ঝাঁঝের সুগন্ধি থেকেও মাথাব্যথা এমনকি বমি ভাবও হতে পারে। তাই সুগন্ধি ব্যবহারে খেয়াল রাখুন।

ঘুম থেকে উঠে অনেকেই ঘাড় ব্যথার কথা বলেন। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ঘুমের সময় বাঁকা হয়ে শোওয়া বা ঘাড় বাঁকা রেখে ঘুমানো। এছাড়া ঘুম পরিমিত না হলেও মাথাব্যথা হতে পারে।

প্রয়োজনীয় এ বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক থাকুন। যাদের চোখের কারণে মাথাব্যথা হয় তারা দ্রুত চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

মাইগ্রেইনের ৩ স্তরের চিকিৎসা

ঘর অন্ধকার করে নীরব পরিবেশে বিশ্রাম নেওয়াই এর অন্যতম চিকিৎসা।

এই বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন মোহনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডক্টরস চেম্বারের চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ কামরুল হাসান এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন)।

তিনি জানান, মাইগ্রেইন হলে তিন ধাপে চিকিৎসা করা হয়।

প্রথমত: যে কারণে মাইগ্রেইন হয় সেগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। এজন্য কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে। যেমন কেউ যদি রাতে দেরিতে ঘুমান তাকে এ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। ধূমপানের কারণে মাইগ্রেইন হলে তা বর্জন করতে হবে। এভাবে সমস্যার কারণ শনাক্ত করে সে অনুযায়ী চলতে হবে।

দ্বিতীয়ত: কাজের চাপ বা টেনশনজনিত কারণে মাইগ্রেইন হলে আগে কারণগুলো এক এক করে শনাক্ত করতে হবে। মানসিক চাপ ও টেনশন থেকে মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ধরনের মাইগ্রেইন পুরোপুরি ভালো হয় না। তাই টেনশন কমানোর জন্য নিয়ন্ত্রীত জীবন আর সময়মতো কাজ করার অভ্যাস করতে হবে।

তৃতীয়ত: অনেক সময় মাইগ্রেইন হলে সাধারণ ব্যথা নাশক ওষুধ খেলে সেরে যায়। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শে সীমিত মাত্রায় পেইনকিলার খাওয়া যেতে পারে।

ছবির মডেল : চৈতি।

ছবি : ই স্টুডিও।