শ্বাসক্রিয়া জীবন সচল রাখে। যদিও ৯৫ ভাগ মানুষই সঠিক প্রক্রিয়ায় এর ব্যবহার জানেন না। এতে খাবার হজমে সমস্যা ও বিভিন্ন রোগব্যাধির সৃষ্টি হয়। সঠিক নিয়মে গভীর দম চর্চায় শরীর ও মনের ব্যায়াম হয়।
Published : 22 Dec 2013, 07:33 AM
যাপিত জীবনে টেনশন বা মানসিক চাপ হয়। এর প্রভাব শুধু মনের উপরই নয়, শরীরে উপরেও পড়ে। ফলে একসময় শরীরের কোষগুলো প্রাণবন্ততা হারিয়ে ফেলে। নিজেকে চাঙ্গা রাখতে প্রাচীনকাল থেকেই গভীর দম চর্চার রীতি চলে আসছে।
গভীর দম চর্চা প্রাণায়াম বা প্রাণা নামেও পরিচিত। প্রাণা চর্চা করে দেহকে সহজেই সুস্থ ও প্রাণবন্ত করে তোলা যায়। সঠিক নিয়মে নিয়মিত চর্চা করলে দেহ থাকবে সতেজ, মন হবে প্রফুল্ল।
এ সম্পর্কে কোয়ান্টাম হার্টক্লাব ও কোয়ান্টাম ব্যায়ামের মেডিকেল কাউন্সিলর ডা. আতাউর রহমান বলেন, “দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ফুসফুসে গভীর দম চর্চার প্রভাব পড়ে। দম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি থেকে অক্সিজেন বা জীবনীশক্তি ফুসফুসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। এ সময় ফুসফুসের প্রসারণ ঘটে, আর দম ছাড়তে ছাড়তে শরীর থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেরিয়ে যায়। এভাবে ফুসফুসের প্রসারণ ও সংকোচন হয়।”
“প্রতিটি মানুষের শরীরে ফুসফুস এই কাজটি জন্ম থেকেই করে যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবে জীবন চলে। শরীরে রক্তসঞ্চালন সবসময় ভালো রাখতে দরকার নিয়মিত সঠিকভাবে দম চর্চা।” বললেন ডা. আতাউর।
এ জন্য বুক ভরে দম নেওয়ার চর্চা করতে হবে। এতে পেট ও পাকস্থলির ব্যায়াম হয়। যখন গভীরভাবে দম চর্চা করা হয় তখন ফুসফুস ভালোভাবে কাজ করে। পেট ও পাকস্থলিতে রক্তচলাচল স্বাভাবিক হয়। খাবার হজমজনিত সমস্যাও দ্রুত কমে আসবে। এর থেকে পেতে পারেন সহজ স্বতঃস্ফূর্ততায় প্রাকৃতিক নিরাময়।
গভীর দম চর্চার উপকারিতা
* শরীর সহজেই রিলাক্সড হয়।
* হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।
* মানসিক চাপ ও টেনশন দূর হয়।
* শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখে।
* মেজাজ থাকে ফুরফুরে।
* রক্ত দূষণমুক্ত করে ও চলাচল স্বাভাবিক রাখে।
* ফুসফুসের জটিল ব্যাধির ঝুঁকি কমে।
* দেহের বাড়তি ওজন কমায়।
এছাড়া গভীর দম চর্চা ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। অক্সিজেন হচ্ছে প্রাণশক্তির উৎস। যখন বুক ভরে দম নেওয়া হয় তখন প্রাণশক্তিতে দেহ প্রাণবন্ত হয়ে উঠে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
নিয়মিত গভীর দম চর্চায় মেধা হয় শাণিত। কেন্দ্রীয় নার্ভাস সিস্টেম হবে আরও সক্রিয়। খাবার হজম হবে স্বাভাবিক।
যেভাবে চর্চা করবেন
গভীর দম চর্চার সময় দম নেওয়া আর ছাড়ার দিকে পুরো মনোযোগ দিতে হয়। এটা করতে নাক দিয়ে গভীরভাবে দম নিয়ে ছাড়তে হয় মুখ দিয়ে। প্রতিটি দম নিতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ সেকেন্ড। ছাড়তে সময় লাগবে কিছুটা বেশি।
দম চর্চার মাধ্যমে মাথা, কাঁধ থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত ‘রিল্যাক্স’ করে তোলা যায়। এটি চর্চা করতে পছন্দের আরামদায়ক কোনো জায়গায় বসুন। হাত দুটো রাখুন হাঁটুতে। ঘাঁড় ও মেরুদণ্ড থাকবে সোজা।
এবার নাক দিয়ে গভীরভাবে দম নিন। ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। প্রতিবার দম ছাড়ার পর সেকেন্ড দু’এক অপেক্ষা করুন। আবার ধীরে ধীরে গভীরভাবে দম নিন।
দম নেওয়ার সময় ১ থেকে ৫ পর্যন্ত গণনা করুন। দম ছাড়ার সময় ১ থেকে ৭ পর্যন্ত গণনা করুন। এভাবে ১০ বার করলে হবে এক রাউন্ড। এতে ফুসফুসের মাধ্যমে প্রকৃতির অফুরন্ত প্রাণশক্তি সারাশরীরে ছড়িয়ে পড়বে।
নিয়মিত দম চর্চায় ক্লান্তি ও অবসাদমুক্ত হয়ে উপভোগ্য হয়ে উঠবে জীবন।
ঘুমের সমস্যা থাকলে বিছানায় শুয়েও একই নিয়মে দম চর্চার ব্যায়াম করতে পারেন। শরীর রিলাক্স হয়ে কখন যে আপনি ঘুমিয়ে পড়বেন, তা টেরই পাবেন না।