আবার বিয়ে, বাচ্চা নিয়ে চিন্তা!

একা একা জীবন পার করা যায়। তবে একজন সঙ্গী থাকলে ক্লান্তি ভর করে না। তাই পুনরায় কোনো সম্পর্ক শুরু করার আগে চাই সন্তানের পূর্ণ সমর্থন।

মরিয়ম সেঁজুতিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2013, 02:44 AM
Updated : 4 Nov 2013, 02:44 AM

বেশ কয়েক বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন মাহফুজ। তার স্ত্রী মারা যাওয়ার সময় তাদের ছেলেটির বয়স ছিল ৪ বছর। পারিবারিক চাপে আবার বিয়েতে সম্মতি দেন। যিনি দ্বিতীয় স্ত্রী হয়ে আসেন তারও ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। আগের ঘরে একটি মেয়ে আছে তার।

বাবার বিয়ের কথা অন্যদের মুখে শুনে মাহফুজের ছেলেটি তার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। তিনিও নিজের বিয়ের কথা সন্তানকে সরাসরি বলতে পারেননি।

মাহফুজ বলেন, “ভেবেছিলাম, ও তো ছোট, তেমন কোনো সমস্যা হবে না। সে সময় সবাই এমনটাই বলেছিল। তবে ছেলেটি কেমন চুপচাপ হয়ে গেল। আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো হল না তার। স্ত্রীও তার মেয়েটিকেই বেশি যত্ন করত। বড় হওয়ার পর ছেলেটি আমাকে ছেড়ে চলে যায়। ওকে আসলে বুঝতে পারিনি আমি। ওর অভিমান বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।”

বিচ্ছেদ কিংবা মৃত্যু- প্রিয়জনকে হারিয়ে জীবন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। তবু থেমে থাকে না জীবন। চলে যায় অমোঘ নিয়মে। এ চলার পথেই হয়তো নতুন সঙ্গীর প্রয়োজন পড়ে। অনেকেই এ সময় সন্তানের কথা ভেবে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন— সন্তান নাকি নিজের জীবন কোনটা প্রাধান্য দেবেন? বাবা অথবা মায়ের নতুন সঙ্গীকে সব সময় মেনে নিতে পারে না সন্তান।

এসব পরিস্থিতি অনেকটা এড়ানো সম্ভব, যদি শুরুতেই বিষয়টি সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা যায়। এক্ষেত্রে সন্তানের সিদ্ধান্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। নাট্যব্যক্তিত্ব সারা যাকের বলেন, “মানুষের এসব সম্পর্কের জায়গা বেশ জটিল। মনোজগতে নানান ধরনের আলোড়ন চলতে থাকে। এ সমাজে বাবার আবার বিয়ে যদিও সন্তানদের কাছে নতুন কিছু নয়। তবে মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে এখনও অপ্রত্যাশিতই। একজন মানুষ একা হয়তো তার জীবন পাড়ি দিতে পারে। তবে তার চলার পথে বন্ধু বা একজন সঙ্গী থাকলে ক্লান্তি ভর করে না।”

সমাজকেও এই বিষয়ে উদার হতে হবে। এটি মনে করা অন্যায় যে সঙ্গীবিহীন অবস্থায় মানুষকে থাকতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, স্ত্রী থাকা অবস্থায় বা তাকে না জানিয়ে বিয়ে করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

স্ত্রীর মৃত্যু বা বিবাহ বিচ্ছেদের পর সন্তানকে না জানিয়ে হুট করে সংসারে নতুন সঙ্গী নিয়ে আসেন অনেকে। যা সন্তানের মনোজগতে প্রভাব ফেলে। আকস্মিক এ আঘাত সে মেনে নিতে পারে না। পারিবারিক সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে মা-বাবা যদি আগেই সন্তানের সঙ্গে পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে নেন, তাহলে পরে সমস্যায় পড়তে হবে না।

অভিনয়শিল্পী রোকেয়া প্রাচী বলেন, “একটা ছোট শিশুরও মনস্তাত্বিক ব্যাখ্যা থাকে। তাই সন্তানকে বোঝাতে হবে, এ বিষয়ে সে-ই মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছাই সব। নতুন সঙ্গী নিয়ে সংসার শুরুর সময়ই সন্তানকে সব বুঝিয়ে বলুন। তাকে পরিচয় করিয়ে দিন। সন্তানের সঙ্গে নতুন মানুষের বোঝাপড়া ভালো হলে বা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে।”

প্রাচী আরও বলেন, “মা-বাবার পুনরায় বিয়ের পর সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া উচিত। আগের মতো পারিবারিক আবহ বজায় রাখতে হবে। নতুন বাড়িতে উঠলে সেখানে সন্তান যেন পুরানো পরিবেশ খুঁজে পায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। হুট করেই তার আগের সব অভ্যাস পরিবর্তনের কথা বলা যাবে না। শিশুর হয়তো মা-বাবার সঙ্গে ঘুমানোর অভ্যাস। তাকে যদি আলাদা ঘরে থাকতে বলা হয়, তখন সে ভাববে, নতুন মানুষের কারণে তার সব হারাতে হচ্ছে।”

সন্তানের সীমাবদ্ধতা, পছন্দ-অপছন্দ— সব আগেই নতুন সঙ্গীকে জানিয়ে দিতে হবে। যদি দুই পক্ষেরই আগের ঘরের সন্তান থাকে, তাহলে যথেষ্ট সহনশীল হওয়া উচিত। কোনো ভেদাভেদ করা যাবে না। বাচ্চাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হলে তাদেরই সমাধান করতে দিন। এক্ষেত্রে বিয়ের আগেই দুই পক্ষের সন্তানের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সবচেয়ে ভালো।

এই অভিনয়শিল্পী মতে, “বিয়ের দিনও কৌশলী হতে হবে। সন্তান যাতে মনে করে সেই-ই সবচেয়ে প্রাধান্য পাচ্ছে এবং সে একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আসল কথা হল, সন্তান যারই হোক সে যেন বুঝতে পারে তার জীবনে নানান প্রাপ্তি যোগ হচ্ছে। বিনিময়ে কিছুই হারাতে হচ্ছে না। তাহলে পরিবারে সুখ-শান্তি থাকবে।”

সবচেয়ে বড় কথা হল, সবাইকে নিয়েই পরিবার। দ্বিতীয় বিয়ের পর স্বামী এবং স্ত্রী দুজনকেই সহনশীল হয়ে সংসার করতে হবে। আগের ঘরের সন্তান থাকলে তাকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। যত কারণই হোক, সুখি হওয়ার জন্যই মানুষ পুনরায় জীবন শুরু করে। আর পরিবারের সবাইকে নিয়েই সেটা সম্ভব।

ছবি : অপূর্ব খন্দকার