মাংস খান অল্প

কোরবানির ঈদের সময় স্বাভাবিকভাবেই বেশি পরিমাণে মাংস খাওয়া হয়ে থাকে। অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে ঈদ পরবর্তী সময়ে শারীরিক অসুবিধা দেখা দেয়। এর থেকে সুস্থ থাকার উপায় নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন মোহনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডক্টরস চেম্বারের চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ কামরুল হাসান, এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন)।

ফজলে আজিমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2013, 01:10 PM
Updated : 19 Oct 2013, 01:10 PM

গরুর মাংসে থাকে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন ও ফ্যাট বা চর্বি। ফাইবার বা আঁশ থাকে পরিমাণে খুবই কম। গরুর চেয়ে মহিষের মাংসে ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। অতিরিক্ত মাংস খেলে হজম করতে সমস্যা হতে পারে। তাই বমি বা পেটে গণ্ডগোল দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

প্রতিবছর কোরবানীর ঈদ পরবর্তী সময়ে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীদের শারীরিক অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়। ঈদের কয়েকটা দিন কোরমা, পোলাও, তৈলাক্ত খাবারের পর রাতে বুকে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। তাই খাবার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে তা মাত্রাতিরিক্ত না হয়।

গরু, মহিষ, ছাগল ও খাসির মাংসে থাকে উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও ফ্যাট। যা ডায়াবেটিস, হৃদরোগী ও যাদের রক্তে কোলেস্টরেলের মাত্রা বেশি তাদের রক্তচাপক আরও বাড়িয়ে দেয়। এতে রক্তনালী চিকন হয়ে রক্তচাপ বা প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

মহিষের মাংসের চেয়ে ছাগল ও খাসির মাংসে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। তাছাড়া মাংসের চেয়ে মগজ ও পায়াতে ফ্যাট থাকে সবচেয়ে বেশি। শিশু ও গর্ভবতীদের জন্য উপযোগী হলেও যাদের বয়স ৪৫ থেকে ৫৫ তাদের এগুলো খাওয়ার সময় সচেতন হতে হবে। 

গরুর মাংসে আছে দেহের প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উচ্চ মাত্রার প্রোটিন, উচ্চমাত্রার ফ্যাট, ক্যালোরি, মিনারেল, আয়রণ ও জিংক থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে। যা শিশুদের বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। তাছাড়া গর্ভবতী মায়েদের জন্য গরুর মাংস খুবই উপকারী। এর থেকে অনাগত শিশু ও মা প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়। এছাড়া গরু বা খাসির মাংসে আছে ‘ভিটামিন এ’, যা শিশুর চোখের রেটিনা সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। ‘ভিটামিন ডি’ হাড় মজবুত করে ও ‘ভিটামিন বি কমপ্লেক্স’ শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মাংস খাওয়ার নিয়ম

ঈদের সময় তৈলাক্ত খাবারের পরিমাণ বেশি খাওয়া হয়। তাই খাবারে পর্যাপ্ত সালাদ ও সবজি রাখুন। এতে হজম প্রক্রিয়া সহজ হবে।

যাদের রক্তে কোলেস্টরেল বেশি বা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ রয়েছে, তাদের জন্য মাংস রান্নার আগে চর্বি আলাদা করে নিন। রান্নায় সবজি মিশিয়ে তৈরি করুন নতুন খাবার। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি কমে আসবে।

মোটাতাজা গরু রান্নার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিন। গরু মোটাতাজা করতে ব্যবহার করা বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশন ও ওষুধ। ভালোভাবে সিদ্ধ না করলে পাকস্থলিতে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

খাওয়ার পরিমাণ

পরিমিত সবকিছুই ভালো। খাদ্যাভাসে এটা মেনে চলা জরুরি। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টরেল ও কিডনি রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ মতো মাংস খেতে পারেন। তেল চর্বিযুক্ত মাংস না খাওয়াই ভালো। এতে বুকে ব্যথা ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

খাওয়ার পর

গরুর মাংস খাওয়ার পর অবশ্যই ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজবেন। নইলে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা মাংস  পঁচে দুর্গন্ধ বের হতে পারে। এছাড়াও দাঁত ও মাড়ির সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাংস খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করলে এ সমস্যা কমে আসবে।

পরিপাক

হজম শক্তি বাড়াতে খাবারে শাকসবজি ও আঁশজাতীয় খাবার প্রয়োজন। গরু, মহিষ, ছাগল, খাঁসির মাংসে ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ অনেক কম। এতে পরিপাকে সমস্যা হতে পারে। যাদের খাবার হজমে সমস্যা তারা খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত সালাদ ও সবজি রাখতে পারেন।

মনে রাখবেন কোমল পানিয় খাবার হজমে কোনো ভূমিকা রাখে না। এ জন্য খাবার তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার রাখুন।

এ সময়ে খাবারজনিত কারণে পেটে গুড়গুড় করলে কী করবেন?- এ সম্পর্কে ডা. কামরুল হাসান জানান, প্রথমেই খাবার তালিকায় আঁশজাতীয় খাবার যুক্ত করুন। ডাবের পানি ও স্যালাইন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। বেশি সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।