এ ঈদে হয়তো আপনার ফ্রিজ কেনা হল না।তবে মাংসতো সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম বাতলিয়েছেনগৃহিনী তানজিন চৌধুরী।
মাংস সংরক্ষণের পদ্ধতি
১. মাংস কেটে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এরপর আদা বাটা, রসুন বাটা, পেঁয়াজ বাটাবেশি করে দিয়ে ডুবানো তেলে মাংস ছেড়ে দিন। ভালোভাবে সেদ্ধ করুন,যাতে মসলা মাংসের ভেতরে ঢোকে। তবে খেয়াল রাখবেন, মাংস যাতে নরমহয়ে না যায়। একদিন অন্তর মাংসগুলো গরম করুন।এতে ১৫-২০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।
২. মাংস লম্বা লম্বা করে টুকরো করুন। এরপর লবণ, হলুদ মেখে রোদেশুকিয়ে নিন। এটি তেলে ভেজেও খেতে পারেন। তবে রান্নার আগে মাংসগুলো ভিজিয়েনিন।
৩. এ পদ্ধতিতে মাংসের টুকরোগুলো কাঁটাচামচ বা ছুরি দিয়ে কেঁচে নিন। এরপর লবণ ওলেবুর রসে ডুবিয়ে নিন, যাতেভালোভাবে এ মিশ্রণ মাংসের ভেতরে ঢোকে। এভাবে রাখলেও মাংস অনেক দিন ভালো থাকে।
এ তো গেল ফ্রিজ না থাকলে কী করবেন তার সমাধান। ফ্রিজথাকলেও অনেকে সঠিকভাবে মাংস রাখতে পারেন না। ফলেজায়গার সংকুলান হয় না, সেক্ষেত্রে আলাদা করে ডিপ ফ্রিজ কেনার কথা ভাবতে হয়। সাধ থাকলেও সামর্থ্য থাকে না।তাই তো এই ফ্রিজের যত্নটাই প্রথমে নেওয়া উচিত বলে মনে করেন গার্হস্থঅর্থনীতি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফিরোজা সুলতানা।
ফ্রিজের যত্ন
ঈদের আগে সময় করে ফ্রিজ পরিষ্কার করে ফেলা উচিত। ফ্রিজ বন্ধকরে তরল সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন। এরপর দরজা খুলে রাখুন যাতেভ্যাপসা গন্ধ দূর হয়ে যায়। আবার ফ্রিজ চালু করে দিন, যাতে সংরক্ষণের উপযোগী শীতল হয়।পরিষ্কার পাত্রে খাবার রাখুন।
ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ
যদি মাংস পরিমাণে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে মাছ-মুরগিসহ অন্যান্য খাবার আগেইসরিয়ে ফেলুন। সবাইকে মাংস বিলিয়ে দেওয়ার পর বাকিগুলো আলাদা করুন। ঠিককরুন কতটুকু করে রান্না করবেন। সেভাবেই ছোট ছোট মোড়কে মুড়িয়েফ্রিজে রাখুন। এ ছাড়া বড় আকারের মাংস না কেটে ভালোভাবে পলিথিনে মুড়িয় ফ্রিজেরাখুন। তবে খেয়াল রাখবেন,ব্যবহৃত পলিথিনটি যেন যেখানে-সেখানে না খোলা হয়। মাংসগুলোবেটে কিমা করেও রাখতে পারেন। এতে জায়গা কম লাগবে। আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরকাছ থেকে পাওয়া মাংসগুলো একসঙ্গে রান্না করুন।স্বাদটাও ভিন্ন হবে।
রান্নাঘরের যত্নে
এ ঈদে রান্নাঘরের প্রতি বাড়তি যত্নশীল হতে হয়। খেয়াল রাখুন, মাংসের রক্ত ওচর্বি যেন মেঝে বা তাকে লেগে না থাকে।এসব থেকেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। মাংস কাটা ও রাখার স্থান তরলসাবান ও জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। এরপর এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করুন, যাতে ভ্যাপসাগন্ধ দূর হয়।
গোছানো রসুই ঘর
সাজানো-গোছানো হেঁশেলে কাজ করতে সবারই ভালো লাগে। নাগালের মধ্যে জিনিস পেলেঅল্প সময়ে কাজ করা যায়। কোরবানির ঈদে রান্নাঘরের কাজই বেশি। সে জন্য ঈদের আগেই এটিগুছিয়ে ফেলুন। যেসব জিনিসের ব্যবহার বেশি হবে, তা হাতের কাছেই রাখুন। মসলার বাক্সগুলো পরিষ্কার করেফেলুন। বড় হাঁড়ি-পাতিল,সসপ্যানগুলো ওপরের তাক থেকে নামিয়ে পরিষ্কার করে রাখুন। প্রেসার কুকারটি ঠিকআছে কি না পরীক্ষা করে নিন। চাপাতি, বঁটি, ছুরি, শিলপাটায় আগেই ধার দিয়ে নিন। আগত অতিথির সম্ভাব্যসংখ্যা ভেবে রাখুন। সে অনুযায়ী তৈজসপত্র পরিষ্কার করে রাখুন। পরে তাড়াহুড়োয় ভেঙেযাওয়ার আশঙ্কা থাকে। রন্ধনপ্রণালি এখনই ঠিক করে ফেলুন। এরপর তালিকা অনুযায়ীজিনিসপত্র কিনে রান্নাঘরে গুছিয়ে রাখুন। দেখবেন, সব কাজ কত সহজেই হয়ে যাবে। ঝক্কি-ঝামেলাছাড়াই কেটে যাবে ঈদের দিনটি। আপনার মুখের হাসি অন্যদের মনেও প্রশান্তি বয়েআনবে।
লক্ষ রাখবেন
গ্যাসের চুলা ও ফ্রিজের কোনো সমস্যা আছে কি না তা এখনই পরীক্ষা করে নিন।
যে কাজই করুন না কেন, তা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়।
কোরবানির পশুর বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলবেন না। আলাদাভাবে তা ফেলার ব্যবস্থা করুন।