ধুলা, ময়লা, রোদ— এ রকম নানান কারণে চুল সহজেই খারাপ হয়ে যায়। গরমের কারণে চুলের গোড়া বসে যায়। মাথার ত্বকে রোগসংক্রমণ হতে পারে। ফলে চুল পড়া শুরু হয়। রোদে বেশিক্ষণ থাকলে চুল সানবার্ন হয়ে ভঙ্গুর হয়ে যায়। চকচকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যেতে থাকে। আবার বেশিক্ষণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জায়গায় থাকার জন্য চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে।
Published : 02 Oct 2013, 08:27 AM
চুলের সমস্যা ও তার সমাধান দিয়েছেন হেয়ারোবিক্স ব্রাইডালের রূপ বিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন মিউনি।
চুলের নিয়মিত যত্ন
সপ্তাহে একদিন ‘হট অয়েল ট্রিটমেন্ট’ করুন। তেল উষ্ণ গরম করে মাথার ত্বকে আঙ্গুলের ডগার সাহায্যে ম্যাসাজ করুন। গরম পানিতে তোয়ালে ডুবিয়ে নিংড়ে নিন। তারপর ভেজা তোয়ালে মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। সহজেই তেল চুলের গোড়ায় ঢুকে যাবে। পরের দিন শ্যাম্পু করে নিন।
শ্যাম্পু
চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু নির্ধারণ করুন। শুষ্ক, তৈলাক্ত, স্বাভাবিক এবং কালার্ড বা রং করা চুলের জন্য আলাদা আলাদা শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত।
শ্যাম্পু করার আগে চুল ভালোভাবে আঁচড়ে নিন। চুলের জটতো ছাড়বেই, সঙ্গে ময়লাও পরিষ্কার হবে। মরা কোষ ঝরে পড়বে। শ্যাম্পু করার জন্য গরম পানি ব্যবহার করবেন না। মাথার ত্বক ও চুলের গোড়ার জন্য গরম পানি ক্ষতিকর। ঠাণ্ডা এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করুন। বাজারে নানান রকমের কেমিক্যালসমৃদ্ধ শ্যাম্পু পাওয়া যায়। কোনটা ব্যবহার করবেন বুঝতে না পারলে মাইল্ড হার্বাল শ্যাম্পু বেছে নিন। নিজের চুলের ধরন অনুযায়ী অল্প পরিমাণে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে পানি মিশিয়ে শ্যাম্পু হালকা করে নিন। মাঝে মাঝে ব্র্যান্ড পরিবর্তন করুন। শ্যাম্পু করার পর ভালোভাবে পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুলে যেন একেবারেই ফেনা লেগে না থাকে। যদি মনে হয়, চুল ভালোভাবে পরিষ্কার হয়নি তাহলে আবার শ্যাম্পু করুন। তবে দ্বিতীয়বার শ্যাম্পু কম পরিমাণে ব্যবহার করবেন।
কন্ডিশনার
চুল ধোয়ার পর তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। তারপর মাথার ত্বক বাদে চুলে কন্ডিশনার লাগান। ৫ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ভিজা চুল আঁচড়ালে চুল ছিঁড়ে যায়। শুকালে হয়ে যায় আরও সেনসিটিভ বা স্পর্শকাতর। তাই ধীরে ধীরে চুল আঁচড়ান। খুব জোরে বা টেনে টেনে আঁচড়াবেন না। চুল লম্বা হলে রাতে বেঁধে শোবেন।
গরমের সময় চুল শুকানোর জন্য ব্লো-ড্রাই ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ শুষ্ক আবহাওয়ায় ব্লো-ড্রাই করলে চুলের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চুল ভেঙে যায়। তোয়ালে দিয়ে চুল ভালোভাবে মুছে নিন। সম্ভব হলে শুকাতে সময় দিন।
চিরুনি বা হেয়ার-ব্রাশ সবসময় পরিষ্কার রাখুন। চিরুনির দাড়া ভেঙে গেলে বা ধারালো হয়ে গেলে সেই চিরুনি বদলে ফেলুন। কারণ ভাঙা ও ধারালো দাড়া থেকে মাথার ত্বকে ক্ষতি হতে পারে। অন্যের চিরুনি ও হেয়ার-ব্রাশ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
সানবার্ন ও চুলের সমস্যা
কারোটিন, জোজোবা অয়েল, প্রোটিনসমৃদ্ধ ডিপ কন্ডিশনার রোদে পোড়া চুল রক্ষায় আদর্শ। ইউ-ভি প্রটেকটিভ কন্ডিশনার গরমের সময় ব্যবহার করুন। এই ধরনের কন্ডিশনার এলোমেলো চুলের জন্য ভালো। সহজে চুলের মধ্যে কন্ডিশনারের উপকরণগুলো প্রবেশ করে।
পাতলা এবং নেতিয়ে থাকা চুলের জন্য ‘ওয়াটার বেইসড’ কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। গরমে চুলের ডগা ফেটে যাওয়া বা রোদে পোড়ার হাত থেকে রেহাই পেতে চুল ট্রিম করিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন চুলের মধ্যে যেন বাতাস চলাচল করতে পারে। কোনোভাবে রোদে চুল পুড়ে গেলে ‘হেয়ার রিপেয়ারিং মাস্ক’ ব্যবহার করুন।
সাঁতার ও চুলের যত্ন
সাঁতার কাটার আগে চুল ভালো করে ভিজিয়ে নিন। চুলে ময়েশ্চার বেশি থাকলে পানির ক্লোরিন ও লবণপানি চুলের বেশি ক্ষতি করবে না। সাঁতারের পর চুল ভালো করে ধুয়ে ভালো কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন।
রঙিন চুল
গরমে, ঘামে, কড়া রোদে রং করা চুল সহজেই খারাপ হয়ে যায়। রং হাল্কা হয়ে যায়। আল্ট্রাভায়োলেট ফিল্টারসমৃদ্ধ হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। রোদের হাত থেকে এটি চুলকে রক্ষা করবে। কালারড হেয়ারের জন্য আলাদা শ্যাম্পু পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করুন। তারপর বিশেষ কন্ডিশনার লাগান। হালকাভাবে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে নিন। জোরে ঘষবেন না। এতে চুলের গোড়া নষ্ট হয়ে যাবে, চুলের রং হালকা হয়ে যাবে এবং ভঙ্গুর দেখাবে। মাসে অন্তত একবার কন্ডিশনার ট্রিটমেন্ট করান।
ঘাম, ধুলা-ময়লা ও খুশকির হাত থেকে রক্ষা
গরমে তাপমাত্রা বাড়লে শরীর নিজেকে ঠাণ্ডা রাখতে ঘাম নিঃসরণ করে। ফলে মাথার ত্বকও ঘামে। তাই রাতে চুল শুকিয়ে, তারপর বড় দাড়ার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন। এতে মাথার ত্বকের ঘাম কমে আসবে। সপ্তাহে দু’দিন হারবাল শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। চুল শুকিয়ে বাইরে যাবেন। মাঝে মাঝেই চুল আঁচড়াবেন। তাহলে বেশি ধুলা চুলে আটকাবে না। মাথায় ময়লা কম আর চুল পরিষ্কার থাকলে খুশকির সমস্যাও কমবে।
হারবাল তেল দিয়েও ম্যাসাজ করতে পারেন। তারপর ন্যাচারাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। তেলের সঙ্গে আমলকী মিশিয়ে লাগান। খুশকির সঙ্গে সঙ্গে মাথাও ঠাণ্ডা হবে। বেশি কেমিক্যালসমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। হেনা, লেবুর রস মিশিয়ে চুলে এক ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে একবার এই পদ্ধতি চালাতে পারেন।
চুল উজ্জ্বল রাখার জন্য ভিনিগার, ডিমের সাদা অংশ, কলা ব্যবহার করতে পারেন। তবে এই উপকরণগুলো সহজে চুলের গভীরে প্রবেশ করে না। রেডিমেইড হেয়ারকেয়ার সামগ্রীতে এই উপাদানগুলো এমনভাবে থাকে, যা সহজে মাথার ত্বকে প্রবেশ করে চুলের গোড়া মজবুত করতে পারে।
মাথার ত্বক ম্যাসাজের উপকারিতা
* চুল পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখার জন্য স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বক ম্যাসাজ জরুরি। এতে ফলিকলস বা চুলের গোড়া সক্রিয় থাকে, চুল মজবুত হয়।
* স্কাল্প ম্যাসাজে টেনশন কমে। রক্তসঞ্চালন ভালো হয়।
* চুলের ময়েশ্চার বজায় থাকে। রোদের হাত থেকে চুলকে রক্ষা করে।
* ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে।
বেশি চা-কফি খেলে নার্ভ সিস্টেম উত্তেজিত হয়ে পড়ে। শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এ সময় বেরিয়ে যায়। তাই দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি অবশ্যই খাবেন। গ্রিন-টি, চিনি ছাড়া টাটকা ফলের রস খাবেন। চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখার জন্য কারোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ন্যাচারাল অয়েলসমৃদ্ধ খাবার খান। এতে ভিটামিন ও মিনারেল প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। প্রচুর মৌসুমি ফল খাবেন। ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ ফল চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
বেশিরভাগ সময় হেয়ার স্টাইলের ক্ষেত্রে সিম্পল পনিটেইল-ই ভালো।
ছবি কৃতজ্ঞতায় : সামিন