তনু মন

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। এখন পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারীরাও সমানতালে এগিয়ে চলছেন। তাই দেখা যায়, দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে কর্মক্ষেত্রে। অনেকক্ষণ একই জায়গায় থাকার জন্য একঘেয়ে লাগে। ফলে বেশিরভাগ মানুষই কাজের স্পৃহা হারিয়ে ফেলেন। এমনকি শারীরিক ও মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

মরিয়ম মনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2013, 08:25 PM
Updated : 5 June 2013, 08:25 PM

এ জন্যই দেখা যায় প্রায়ই পথেঘাটে মানুষ বিরক্তি প্রকাশ করছেন অন্যের উপর। কখনও সৃষ্টি হচ্ছে নানান বিপত্তি। এ ধরনের অশান্তি এড়াতে ছোট ছোট কিছু নিয়ম মেনে চলা যেতে পারে। এতে একটানা কাজের চাপ ও ক্লান্তি থেকেও কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়।

অবশ্য যারা নিয়ম মেনে চলাফেরা করেন তাদের কথা ভিন্ন। তবে এদের সংখ্যাও কম। তাই সবার আগে প্রয়োজন নিয়মের মধ্যে থাকতে চেষ্টা করা।

খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পাশাপাশি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাতে বিছানায় যাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ ছোটবেলা থেকেই আমরা জেনে এসেছি তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং তাড়াতাড়ি জেগে উঠলে শরীর-মন এবং স্বাস্থ্য সবই ভালো থাকে।

সকালের নাস্তায় অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার রাখার চেষ্টা করুন। ভালো এবং পর্যাপ্ত প্রাতরাশ সারাদিনের কাজে ক্লান্তি কমায়।

ব্যস্ত নগরজীবনে অসহনীয় যানজট, ধুলোবালির মধ্য থেকে অফিসে গিয়েই কাজে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত দশ মিনিট আগে কর্মস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। দশ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে তবেই কাজ শুরু করুন।

কর্মস্থলে যে পোশাকটি পরে এসেছেন তা যেন অবশ্যই রুচিসম্মত ও আরামদায়ক হয়। কারণ আঁটসাঁট ও রুচিহীন পোশাক মনের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

প্রতিদিন কাজের জায়গা থেকে চলে আসার আগে ব্যবহৃত টেবিল, চেয়ার এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। যেন পরের দিন সকালে এসে এলোমেলো জিনিসপত্র দেখে মন খারাপ না হয়।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। সারাদিনের কর্মব্যস্ততায় শরীরে প্রচুর পানির ঘাটতি দেখা যায়। অতিরিক্ত কাজের চাপ কিংবা গরম অনুভূত হলে এক প্যাকেট স্যালাইন খেতে পারেন। উপকার পাওয়া যাবে।

সময় থাকলে কাজের মধ্যে মাঝে মাঝে কিছুটা বিরতি নিন। পাঁচ কিংবা দশ মিনিট আরামের জন্য চোখ বন্ধ রাখুন। অথবা নিজের টেবিল রেখে একটু বারান্দায় বা খোলা জায়গায় কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করুন।

শরীরের বাড়তি ওজন এড়াতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। সময়মতো দুপুরের খাবার খান। প্রতিবেলার খাদ্য তালিকায় অন্তত একটি তাজা ফল রাখুন।

কাজের ফাঁকে অনেকেই চা-কফি খান। এতে কিছু সময়ের জন্য হলেও নিজেকে তাজা লাগে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের চা-কফি না খাওয়াই ভালো। এই পানীয় অতিরিক্ত খেলে যে কারও জন্যই ক্ষতিকর। তাই পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়া ভালো।

সহকর্মীদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে মতবিনিময় করতে পারেন। এতে করে মনও প্রফুল্ল হবে। আবার কাজের চাপে ক্লান্তিও দূর হয়।

বাসায় ফিরে বিশ্রাম নিন। সংসারের কাজ সেরে নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করুন। ১৫-২০ মিনিট ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করা ভালো। এরপর একটু বিশ্রাম নিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল সারুন। সম্ভব হলে পানির মধ্যে গোলাপ জল দিয়ে নিন।

এরপর যখন ঘুমাতে যাবেন, দেখবেন অনেক ভালো এবং আরামদায়ক একটি ঘুম হবে। যা আপনার পরবর্তী দিনের কাজে স্পৃহা বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। ঘুমানোর আধা ঘণ্টা আগে সামান্য হাঁটাহাঁটি, মেডিটেশন বা গল্পের বই পড়াও ভালো ঘুমের জন্য উপযোগী। সবসময়ের জন্য শোবার ঘরটি রাখুন পরিপাটি, আরামদায়ক ও বাতাস চলাচলের উপযোগী।

খাদ্য হচ্ছে দেহের জ্বালানির উৎস। এর থেকেই আসে দেহের পুষ্টি এবং প্রয়োজনীয় শক্তি। শরীরকে সতেজ ও কর্মচঞ্চল রাখতে তাই খাবারের গুরুত্বও অনেক।

সিম, বরবটি, ছোলার ডালজাতীয় শস্য শরীরে প্রোটিন জোগায়। দৈহিক ক্লান্তি আর অবসন্ন ভাব দূর করতে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খুবই জরুরি।

মাংসপেশি মজবুত, দৃঢ় ও কর্মক্ষম রাখতে সবুজ বা ঘন সবুজ রংয়ের শাকসবজি খুবই সহায়ক। মস্তিষ্কের একাগ্রতা, মনসংযোগ ক্ষমতা, মানসিক দৃঢ়তা ও মাংসপেশির কর্মক্ষমতা বাড়াতে মাছের প্রয়োজনীয়তা অনেক। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কমবেশি মাছ থাকা প্রয়োজন।

ভাত, গ্লুকোজ বা চিনিসমৃদ্ধ আঁশবিহীন খাবার রক্তে দ্রুত শর্করা বৃদ্ধি করে। আবার গম, যব, ভুট্টা ইত্যাদি আঁশসমৃদ্ধ খাবার অব্যাহত গতিতে শরীরে শক্তির জোগান দেয়।

ক্লান্তি ও অবসাদ রোধে প্রতিদিন অন্তত একটি কলা খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো। অন্যান্য ফলমূলও শরীরকে সতেজ রাখে। পাশাপাশি দেহের পুষ্টি বৃদ্ধিকারী বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের জোগান দেয়।

অধিকাংশ মহিলাই মাসিক শুরুর সময়ে বা মাসিক চলাকালীন অবসন্ন থাকেন, অস্বস্তিতে ভোগেন। তারা কর্মক্ষেত্রে গেলেও কোনোভাবেই কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না।

এ ধরনের সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের জন্য দি বারাকা জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নাজনীন কবির বলেন, “মাসিক চলাকালীন বেশিরভাগ মহিলাই অবসন্নতায় ভোগেন। চেহারা দেখেই মানুষ বলে দেয় তারা খুব ক্লান্ত। এই সময়ে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত একটা কলা খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। কারণ কলাতে রয়েছে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম, যা পেশি ও স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্রম রক্ষা করে।”

ব্যস্ত জীবনে চলার পথে একেকজনের কাজের ধরন একেক রকম। তবে যাই বলুন না কেন পরিকল্পিত এবং নিয়মমাফিকভাবে কাজ করলে সব কাজই সাধারণত সাধ্যের মধ্যে এসে ধরা দেয়। তাই নিজের কাজের ধরন ও সময় বুঝে দিনের যাবতীয় কাজের একটি রুটিন তৈরি করে নিন।

মনে রাখবেন, নিজের শরীর ও মন সুস্থ না থাকলে কখনও ভালো কোনো কাজ করা সম্ভব নয়।