সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, ৩০ বছর বয়সের পর থেকে শুধু ওজন মেপে আর তা নিয়ন্ত্রণ করে বসে থাকলেই আপনার চলবে না। ওজনের গতিবিধির দিকে লক্ষ রাখার পাশাপাশি এখন প্রয়োজন দেখা দিয়েছে পেট বা কোমরের পরিধির পরিমাপ ও আরও কিছু মাপজোকের। এসব মাপজোক আপনাকে কেবল সঠিক ওজনের হদিসই দেবে না, পাশাপাশি জানিয়ে দেবে আপনার বডি টোনিং বা বডি শেইপের খবরাখবর আর ফিটনেসের অবস্থা। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ আসফিয়া আজিম।
Published : 21 May 2013, 04:06 AM
আপনার বয়স কি ৩০ পেরিয়ে গেছে? নিয়মিত আপনার ওজন মাপছেন। ওজনের মেশিন আপনাকে খুব বেশি বিস্মিত করে না। নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণের গতিবিধি দেখে আপনি মোটামুটি সন্তষ্ট, তাই তো?
প্রথমত, আপনাকে অভিনন্দন নিজের কাঙ্ক্ষিত ওজনটি ধরে রাখার জন্য। তবে ওজনের পাশাপাশি আরও কিছু নতুন তথ্য জেনে নিন।
আপনার ‘বডি শেইপ’ কেমন?
আর যাদের মেদ কোমরের নিচ থেকে হাঁটুর ওপর পর্যন্ত অংশ জুড়ে জমে, তাদের শরীরের গঠনকে বলা হয় ‘পিয়ার্স’ বা ‘নাশপাতি’ ধরনের।
মেয়েদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের শরীরে হরমোনের নানা পরিবর্তন ঘটে। এ সময় নাশপাতি গড়নের মেয়েদের তলপেটে জমতে শুরু করে মেদ।
সে কারণে নিজের শরীর ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে ‘বডি শেইপ’ বুঝে নেওয়া জরুরি। কারণ শরীরের ধরন বুঝে পেট বা কোমরের নিচের অংশের ব্যায়ামের দিকে তখন মনোযোগ দিতে হবে কিছুটা বেশি।
পেটের পরিধির মাপ
সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, পেটের পরিধির পরিমাপ নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিমাপ থেকে বিভিন্ন অসুখবিসুখ, যেমন টাইপ টু ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদির ঝুঁকি আছে কিনা তার প্রাথমিক কিছু আন্দাজ পাওয়া যায়।
নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২৫ বছর বয়সের পর থেকে এশিয়ার নারীদের পেটের পরিধি নিয়মিত মেপে দেখা জরুরি। কোমরের উঁচু হাড় আর পাঁজরের শেষ হাড়ের মাঝামাঝি অংশে ফিতা রেখে কোমরের পরিধি মাপুন। খেয়াল রাখুন, এই মাপ যেন ৮০ সেন্টিমিটার বেশি ছাড়িয়ে না যায়। কোমরের মাপ ৮০ সেন্টিমিটারের বেশি হলেই বিভিন্ন ধরনের অসুখের শঙ্কা বাড়তে থাকে।
আরও একটা সহজ পরিমাপ আছে, যা মেনে চলতে পারলে বাড়তি ওজনের ফলে তৈরি হওয়া অসুখগুলো এড়ানো যায়।
আপনার উচ্চতার অর্ধেকের নিচে রাখতে হবে কোমরের পরিধিকে। যেমন ধরুন, আপনার উচ্চতা পাঁচ ফুট, অর্থাৎ ৬০ ইঞ্চি। সে ক্ষেত্রে আপনার কোমরের পরিধি রাখতে হবে ৩০ ইঞ্চির নিচে।
আরও কয়েকটি পরিমাপ
আপনি যদি অতিমাত্রায় স্বাস্থ্য সচেতন হন এবং নিজের শরীরের ফিটনেসের খোঁজখবর আরেকটু বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে আরও দুটি পরিমাপ জানা থাকলে ভালো। একটি হলো ‘বডি ম্যাস ইনডেক্স’ বা বিএমআই। আরেকটি কোমর ও নিতম্বের অনুপাত।
চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ অথবা ডায়েটেশিয়ানরা সাধারণত বিএমআই মেপে মানুষের পুষ্টির অবস্থা নির্ণয় করে থাকেন। সাধারণ মানুষের জন্য এই পরিমাপ কিছুটা জটিল। বিএমআই জানার জন্য চিকিৎসক বা ডায়েটেশিয়ানের শরণাপন্ন হাওয়াই ভালো।
তবে কোমর ও নিতম্বের অনুপাত ঘরে বসে নির্ণয় করা অপেক্ষাকৃত সহজ।
কোমরের পরিধিকে নিতম্বের পরিধি দিয়ে ভাগ করলে তা .৮৭ এর বেশি হলে ধরে নিতে হবে আপনি ওজনাধিক্যের শিকার হয়েছেন। আপনি ঝুঁকিতে আছেন। আপনার কোমর ও নিতম্বের অনুপাতকে .৮৭ এর নিচে রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা জরুরি।
কোমরের পরিধি মাপা কেন জরুরি
কোমরের মাপ ৮০ সেন্টিমিটারের বেশি হলে তা শুধু বডি শেইপই নষ্ট করে না, গুরুতরভাবে ব্যাহত করে ফিটনেসও। কোমরের মাপ ৮০ সেন্টিমিটারের ওপরে যাওয়া মানেই হূদ্রোগ বা টাইপ টু ডায়াবেটিসকে হাতছানি দিয়ে ডাকা।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ ডায়াবেটিক নারীর কোমরের মাপ ৮০ সেন্টিমিটারের ওপরে। তলপেটের চর্বি শরীরে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেক বেশি।
কোমরের মেদ নিয়ন্ত্রণে করণীয়
বাঙালির খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার ধরনই এমন যে খুব সহজেই কোমরের চারপাশে ও তলপেটে মেদ জমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বাঙালিদের প্রধান খাবার যেহেতু ভাত আর তেল-মসলার রান্না, ফলে নিজেদের অজান্তেই আমরা বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করে ফেলি।
পাশাপাশি কায়িক পরিশ্রমের অভাবও আমাদের শরীরে মেদ বাড়ার অন্যতম কারণ। এ জন্য নিয়মিত ব্যায়াম আর পরিমিত খাদ্যগ্রহণ খুব জরুরি।
কোমরের পরিধি ৮০ সেন্টিমিটারের বেশি হলে এবং বয়স ২৫ বছরের ওপরে গেলে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৪৫ মিনিট করে হাঁটতে শুরু করে দিন। পাশাপাশি খাবারের তালিকায় শর্করা ও তেলের পরিমাণ কমিয়ে আঁশযুক্ত খাবার যেমন ফলমূল, শাকসবজি বাড়িয়ে দিন।
তা ছাড়া আপনার শরীরের গড়ন আপেল নাকি নাশপাতি আকারের, সেটি বুঝে সেই ধরনের ব্যায়ামের দিকে নজর দিন যা তলপেট ও নিতম্বের মেদ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।