দাঁতের ব্যথা

অনেকেই মনে করেন দাঁতে যন্ত্রণা হলে ব্যথানাশক ওষুধ খেলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কিছু সময়ের জন্য ব্যথাটা কমে, পরে বেড়ে যায়। অনেকে আলসেমি করে কিংবা ভয়ে দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। এই অবহেলার ফল হয় ভয়াবহ। দাঁতে ব্যথা হওয়ার কারণ আর প্রতিকার নিয়ে জানাচ্ছেন কনসালটেন্ট কসমেটিক ডেন্টিস্ট ডা. মোহাম্মাদ সাইফুল আলম তালুকদার।

ইশরাত জাহান মৌরিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2013, 08:51 PM
Updated : 12 May 2013, 08:51 PM

দাঁত ব্যথার আসল কারণ হল ক্যারিজ বা দন্তক্ষয়। অনেকের কাছে এই রোগটি দাঁতেরপোকা নামে পরিচিত। দাঁতের সব রোগের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি হয়।

চারটা কারণে এই রোগ হতে পারে :

১. দাঁতে বা দাঁতের ফাঁকে খাবার জমতে পারে এমন জায়গা।

২. ক্যারিজ তৈরিকারী জীবাণু।

৩. রিফাইন্‌ড কার্বোহাইড্রেট বা চিনিজাতীয় খাবার

৪. বেশিদিন ধরে যদি উপরের তিনটা কারণ একইসঙ্গে চলতে থাকে।

আমাদের দাঁতে অনেক খাঁজ (Pits and Fissure) আছে, যেগুলোতে বেশি ক্যারিজ হয়। ক্যারিজ বেশি হয় দুই দাঁতের মাঝে। তবে সত্যি কথা হচ্ছে ডেন্টাল ক্যারিজ দাঁতের যে কোনো জায়গায় হতে পারে।

ক্যারিজ বা দন্তক্ষয়ের শুরুতে তেমন কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। তবে গর্ত আস্তে আস্তে বড় হলে দাঁতে শিরশির করা, কিছু খেলে গর্তে ঢুকে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।

একসময় দাঁতের গর্ত আরও বড় হয়। আর তা মজ্জার কাছাকাছি চলে যায়। ফলে মাঝেমধ্যে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে এই ব্যথাটা থেমে থেমে হয়। কান, মাথা ও চোখসহ ব্যথা করতে পারে। ডেন্টাল ক্যারিজের এই পর্যায় পর্যন্ত সাধারণ ফিলিং করেই ক্যারিজের পরিসমাপ্তি টানা যায়। এতে খরচও কম লাগে, সময়ও কম নষ্ট হয়। আর রোগীর কষ্টও কম হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী এই সময় ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে কিছুদিন নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে থাকেন।

এরপরই শুরু হয় প্রচণ্ড ব্যথা। কোনো একদিন রাতে, যখন বাইরে গিয়ে ওষুধ কেনা প্রায় অসম্ভব তখনই এটা শুরু হয়।

পরদিন সকালে ওষুধ খাওয়ার পর ব্যথা কমে। আর ঠিক বিকেলে আবার ব্যথা শুরু হয়। তখনই বেশিরভাগ রোগীর বোধোদয় হয়। তারা ডেন্টিস্টের কাছে যান। তবে অনেকেরই বোধোদয় হয় না। কেউ কেউ এই অবস্থায়ও অ্যান্টিবায়োটিক আর ব্যথার ওষুধ একসঙ্গে চালাতে থাকেন।

ইতিমধ্যে দাঁতের যতটুকু ক্ষতি হয়, সেখান থেকে দাঁতটি জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব না। তবে মৃতভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ এই সময় রুট ক্যানেল চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ উপশম করা যায়।

যারা এই অবস্থাতেও ডাক্তারের কাছে যান না, তারা মাঝেমধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক আর ব্যথানাশক ওষুধ খান। এতে তীব্র ব্যথার অনুভূতি একসময় কমে গেলেও ডেন্টাল ক্যারিজ কিন্তু থেমে থাকে না।

কিছুদিনের মধ্যে জীবাণুর সংক্রামণে দাঁতের মজ্জা পুরোপুরি পচে যায়। পচা অংশগুলো দাঁতের গোড়া দিয়ে হাঁড়ের মধ্যে চলে যায়। সেখানে পুঁজ তৈরি করে। এই অবস্থায় যে ব্যথাটা হয় তা কোনো ওষুধেই কমে না। 

দেখা গেছে রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই অবস্থাতেই ডেন্টিস্টের কাছে আসেন। এ ক্ষেত্রে অনেকের দাঁত রুট ক্যানেল চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। আর অনেকের দাঁত ফেলে দিতে হয়।

কেউ কেউ আছেন এই অবস্থাতেও ব্যথা সহ্য করতে থাকেন। ডেন্টিস্টের কাছে না আসার জন্য মনস্থির করেন। তাদের দাঁত আস্তে আস্তে মাড়ির সঙ্গে মিশে যায়। এ সময় মাঝেমধ্যে ব্যাথা হয়। তখন তারা আবার ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খান।

এই পর্যায় থেকে দুই রকম ব্যাপার ঘটতে পারে:

১. ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সেলুলাইটিস, লাডউইগ্‌স অ্যান্‌জাইনা ইত্যাদি। লাডউইগ্‌স অ্যান্‌জাইনা হলে পুঁজ জমে রোগীর গলা ফুলে যায়। চিকিৎসা না করালে রোগী নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে।

২. সিস্ট, টিউমার ও ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে।

সামান্য দাঁতের ব্যথা থেকে কত কিছু হতে পারে। তাই দাঁত ব্যথা হলে সামান্য দেরি না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অন্তত ৬ মাস পর পর দন্ত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁত পরীক্ষা করানো উচিত। তাহলে দাঁতে যদি সামান্য কোনো সমস্যাও থাকে, সেগুলো নিমিষেই দূর করা সম্ভব হয়। আর ভবিষ্যতে দাঁতের বড় রকমের সমস্যায় পড়তে হয় না।

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক