হৃদরোগের কারণ ও প্রতিরোধের উপায় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন গাজীপুরের আনসার ও ভিডিপি হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মোঃ খালেদ হোসাইন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের দাবি- নারীদের তুলনায় পুরুষদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। মহিলাদের ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর এবং পুরুষের বয়স চল্লিশ পেরোলে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে।
হৃদরোগ সাধারণত দুই ধরনের
১। জন্মগত হৃদরোগ
২। অন্যান্য উপসর্গজনিত হৃদরোগ
করানরি হৃদরোগ হওয়ার কারণ
করানরি হৃদরোগ বা হৃৎপিন্ডে রক্তসরবরাহকারী ধমনীর রোগ সম্পর্কে জানতে আগে জানা দরকার করানরি কী এবং কীভাবে এ রোগ তৈরি হয়। আমাদের বুকের মধ্যে দুই ফুসফুসের মাঝে হৃদপিণ্ডের অবস্থান। হৃৎপিণ্ড সারা দেহে রক্ত সঞ্চালনের কাজ করলেও মজার ব্যাপার হল হৃৎপিণ্ডের নিজের কোষগুলোকেও সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখার জন্য দরকার পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি। হৃৎপিণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ এ কাজটি করে করানরি বা রক্তসরবরাহকারী ধমনী। এই ধমনীর সংকোচনের ফলে করানরি হৃদরোগ হয়। ক্রমাগত ভুল জীবনযাপনের ফলে হৃৎপিণ্ডের ধমনীর ভেতরের দেয়ালে কোলেস্টরাল প্লাক বা হলুদ চর্বির স্তর জন্মে। এতে ধমনীর মাধ্যমে রক্তচলাচল কমে যাওয়ায় সারাদেহে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছানোর প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এ প্রক্রিয়াকে ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ বলে। ফলে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়।
যখন দরকার আরও সচেতনতা
* ডায়াবেটিস হলে
* বংশে কারও হৃদরোগ থাকলে
* ধূমপানের অভ্যাস
* রক্তে কোলেস্টরাল বা চর্বিজাতীয় পদার্থের আধিক্য
* অতিরিক্ত ওজন বা মেদ
* শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
* উচ্চ রক্তচাপ
* বাতজ্বর
কখন যাবেন ডাক্তারের কাছে
- কিছুদূর হাঁটলে, ভারি কাজ করলে বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার করার ফলে বুকে ব্যথা অনুভূত হলে।
- বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট থাকলে।
- অনেকদিন ধরে পিঠে ব্যথা থাকলে।
- বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে।
- পায়ে পানি আসার কারণে পা ফুলে গেলে।
- কোনো কারণে তীব্র মানসিক চাপ থাকলেও এ ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তখনও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে।
যা কিছু করণীয়
সুস্থতার জন্য দরকার সঠিক জীবনদৃষ্টি আর সচেতনতা। খাবার ও জীবনযাপনে সচেতন হলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
১. হৃদরোগের কারণগুলোর মধ্যে মানসিক চাপের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। অত্যাধিক মানসিক চাপের প্রভাব পড়ে হৃদযন্ত্রে। এজন্য দরকার হাসিখুশি থাকা। মুখ ভার করে থাকার চেয়ে হাসিখুশি থাকলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে।
২. হাঁটা সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন।
৩. বৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাস হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে রাতে গুরুপাক খাবার একেবারেই নয়। ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সিগারেট, কোমলপানীয়/কোল্ডড্রিঙ্কস বা কার্বোহাইড্রেড যুক্ত পানীয়, ফাস্টফুড হৃদপিন্ডের জন্য ক্ষতিকর। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। খালি হাতের ব্যায়াম সবচেয়ে ভালো।
৪. উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- খাবারের তালিকায় প্রতিদিন পর্যাপ্ত দেশি ফল ও শাকসবজি রাখুন।
- অতিরিক্ত তেল ও মসলাজাতীয় খাবার যত কম খাওয়া যায় ততোই ভালো।
- কোল্ডড্রিঙ্কস বা কোমল পানীয়, ফাস্টফুড, ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
- প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করুন।
- সময়ানুবর্তী হোন। এতে মানসিক চাপ কম পড়বে।
- প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম মানসিক প্রশান্তির জন্য জরুরি।
- স্নায়বিক উত্তেজনার ফলে হৃদস্পন্দন বা হার্টবিট বেড়ে যায়। এতে হৃদপিন্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। হঠাৎ উত্তেজিত হওয়া হৃদরোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।