পনির স্বাস্থ্যের জন্য যারপরনাই উপকারী। মোটে একশ গ্রাম পনিরের অনেকটাই প্রোটিন ও দরকারী ফ্যাট– যাকে গুড কোলেস্টরেল বলে।
পনির ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়; উপরন্তু পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের জন্য জরুরি।
পনির ঘরে সহজেই বানানো যায় বলেই মনে হয় একে ‘কটেজ চিজ’ বলে। তবে আজকাল দেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কটেজ চিজ মিলছে দোকানে।
তরল দুধ ফুটিয়ে নিয়ে চুলার আঁচ কম করে, লেবুর রস অথবা ভিনিগার মিশিয়ে নাড়লে পানি ও ছানা আলাদা হয়ে যাবে সাথে সাথেই।
এরপর পরিষ্কার ও পাতলা রুমালে ওই মিশ্রণ ঢেলে দিয়ে ছানা থেকে পানি ছেঁকে নেওয়া যায়।
বাকি পানি ঝরে যাওয়ার জন্য জমাট ছানা বাঁধা রুমাল কোনো পাত্রে বা ঝুলিয়ে রাখতে হবে। মোটামুটি চার থেকে পাঁচ ঘন্টা অথবা সারারাত রেখে দিলে পনির ঠিক মতো জমাট বেঁধে যাবে।
যারা পুরোপুরি ‘ভেগান’ নন, মানে ‘ভেজিটেরিয়ান’- তারা প্রোটিনের চাহিদা পূরণে রোজ পনির খেতে পারেন।
বাটার পনির
পদ্ধতি: চুলায় প্যান বসিয়ে আগে একটু গরম করে নিয়ে তারপর জ্বাল কমিয়ে দিতে হবে। এখন বাটার দিতে হবে দুই টেবিল-চামচ। বাটার সহজেই পুড়ে যায় বলে জ্বালটা চড়া থাকা যাবে না শুরুতে।
লবঙ্গ, এলাচ দিতে হবে। তারপর পেঁয়াজ (২টি পরিমাণ) দিয়ে নাড়তে হবে। এরপর তাতে রসুন-আদা দিয়ে নাড়তে হবে। পেঁয়াজ নরম হয়ে আসলে এতে টমেটো মেশাতে হবে। একটু নেড়ে নিয়ে কাজু বাদাম দিতে হবে। এরপর ঢেকে দিতে হবে টমেটো সেদ্ধ হওয়ার জন্য।
মসলা যোগে পেঁয়াজ-টমেটোর মিশ্রণ সেদ্ধ হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে একটি ব্লেন্ডার জারে ঢেলে নিতে হবে। পুরো মিশ্রণটি ভালো করে ব্লেন্ড করতে হবে।
যদি মনে হয় একটু দানা দানা আছে, তবে এই ব্লেন্ড করা মিশ্রণ আবার ছাকনিতে ছেঁকে নেওয়া যেতে পারে।
পনির বেশি বড় না করে ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে। পনির দোকান থেকে কিনে আনলে ২০০ গ্রামের একটা চারকোনা ব্লক থেকে ৩০-৩২টি ছোট ছোট টুকরা হতে পারে।
এখন গরম প্যানে আরেকটু বাটার দিয়ে পনিরের টুকরা সামান্য লাল করে ভেজে তুলে নিতে হবে।
প্যানে আরেকটু বাটার যোগ করে এবার তেজপাতা দিতে হবে। পেঁয়াজ (১টি পরিমাণ) কুচি দিয়ে নাড়তে হবে। পেঁয়াজ নরম হয়ে এলে এবার হলুদ, লাল মরিচ, জিরা ও ধনে গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নাড়তে হবে।
সামান্য লবণ দিতে হবে। যেহেতু বাটার দিয়ে রান্না হচ্ছে তাই বাটারের নোনতা এবং মোলায়েম স্বাদ ও গন্ধের কারণে লবণের পরিমাণ খুব বেশি লাগবে না।
মসলা নেড়ে নিয়ে এবার তাতে ব্লেন্ড করে রাখা পেঁয়াজ-টমেটোর মিশ্রণ ঢেলে দিতে হবে। পুরো মিশ্রণ মসলার সাথে ভালো করে নেড়ে নেড়ে মিশিয়ে নিতে হবে।
কাঁচামরিচ হাতে ভেঙে অথবা ফালি করে কেটে ছেড়ে দিন। সেই সঙ্গে দিতে হবে ভেজে রাখা পনির টুকরা।
আবার নাড়তে হবে এবং কিছুক্ষণ ঢেকে রাখতে হবে চার-পাঁচ মিনিট। যদি রান্নাঘরে কসুরি মেথি থাকে তো আধা চামচ দিতে হবে। আর যদি কসুরি মেথি না থাকে তবে না দিলেও হবে।
চুলার আঁচ বন্ধ করে দুয়েক মিনিট ঢাকা দিয়ে রাখুন। তাতে ভেতরের সুবাস পনিরে ভালো মতো ঢুকবে।
এবার সুন্দর দেখে একটি পাত্রে বাটার পনির ভুনা ঢেলে নিন।
সুগন্ধি চালের ভাত অথবা রুটি-পরটা দিয়ে বাটার পনির খেতে খেতে মনে হবে যেন মুখে দিতেই গলে যাচ্ছে।
পালং পনির
পালং শাক ব্লাঞ্চিং করে নিতে হবে, অর্থাৎ ভাপে সামান্য সেদ্ধ। ব্লাঞ্চিং করতে আগে সামান্য লবণ যোগে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। চুলার আঁচ বন্ধ করে ওই গরম পানিতে পালং শাক ছেড়ে দিতে হবে। এক মিনিট রেখে তারপর তুলে নিয়ে ঠাণ্ডা পানিতে দিতে হবে।
এতে করে শাকের সবুজ রং সুন্দর থাকে। ঠাণ্ডা পানিতে কিছুক্ষণ রেখে পালং শাক তুলে নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
পনির আগের রেসিপির মতো টুকরো করে কেটে নিতে হবে এবং সামান্য বাটার দিতে সোনালি রং করে ভেজে নিতে হবে।
ঘরে বানানো পনির হলে অথবা যারা পনিরের বিভিন্ন রেসিপি খেয়ে অভ্যস্ত তারা না ভেজে নিয়েও রান্না করতে পারেন।
চুলায় প্যান বসিয়ে তাতে একটু বাটার দিন। গোটা জিরা দিন। পেঁয়াজ দিন। রসুন দিয়ে নাড়ুন। পেঁয়াজ-রসুন লালচে রং আসা পর্যন্ত নাড়তে হবে। এবার টমেটো কুচি দিন। একটু লবণ দিতে হবে।
ধনে ও লাল মরিচ গুঁড়া দিয়ে নাড়তে হবে। টমেটো নরম হওয়া পর্যন্ত এই মসলা ভুনা করতে হবে।
এবার চুলা থেকে নামিয়ে মসলা ভুনা ঠাণ্ডা করে ব্লেন্ডার জারে ঢেলে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
চুলায় আবারও প্যান বসিয়ে আঁচ কমিয়ে সামান্য বাটার দিতে হবে। প্রথমে ব্লেন্ড করা পালং ঢেলে নাড়তে হবে আধা মিনিট। এরপর এতে ব্লেন্ড করা মসলা ভুনা ঢেলে দিতে হবে। ব্লেন্ডার জার ধুয়ে ওই পানি প্যানে ঢেলে দেওয়া যায়।
লবণ চেখে দেখুন। বাটার দিয়ে রান্নাতে লবণ কমই লাগে, তবু যার যার স্বাদ মতো লবণ যোগ করা যেতে পারে।
এবার গরম মসলা গুঁড়া যোগ করতে হবে। তারপর ভেজে রাখা পনির টুকরা মিশিয়ে দিতে হবে।
এই পালং ভুনা খুব বেশি পাতলা হবে না। নিজ নিজ পছন্দ মতো কম অথবা বেশি ঘন ভুনা করা যেতে পারে। তাই বাড়তি পানি যোগ না করলেও হবে।
পালং পনির রান্না মূলত শেষ। কিন্তু ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’ এর মতো এবার একটা বাগাড় বা তরকা দিতে হবে। এতে করে পালং পনিরে ধাবা স্টাইল স্বাদ ও সুগন্ধ আসবে।
যে প্যানে পালং পনির আছে তার আঁচ কমিয়ে রাখুন। অন্য চুলায় প্যান বসিয়ে ৪ চামচ বাটার দিন। তাতে আধা চামচ গোটা জিরা, একটি গোটা শুকনা মরিচ ছেড়ে দিন। এরপর দিন এক চামচ ঝিরি করে কাটা পেঁয়াজ, এক চামচ রসুন কুচি।
বাটারে পেঁয়াজ-রসুন ভাজা ভাজা রং ধরলে দিতে হবে আধা চামচ লাল মরিচ গুঁড়া। নেড়েচেড়ে নিতে হবে ভালো মতো। এরপর এই মসলার বাগাড় ঢেলে দিন পালং পনিরে মিশিয়ে নিন।
চুলা বন্ধ করে পালং পনির একটি সুন্দর বাটিতে ঢেলে পরিবেশন করুন। সুগন্ধি চালের ভাত অথবা রুটির সাথে পালং পনির খেতে অমৃত মনে হবে।
সাদামাটা পালং শাক ভাজা অনেকেই খেতে চান না এই শাকের তীক্ষ্ণ স্বাদের কারণে। কিন্তু বাজি ধরে বলা যায়, তারা কেউ–ই এক বাটি পালং পনির ফিরিয়ে দেবেন না।
আরও রেসিপি