পাহাড়ে খয়রামাথা শুমচা

সুদর্শন পাখি শুমচা। শরীরজুড়ে রংয়ের বাহার। বাংলাদেশে চার ধরনের শুমচা পাখি দেখা যায়। এর মধ্যে খয়রা মাথা অন্যতম।

সমির মল্লিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2022, 07:05 AM
Updated : 26 June 2022, 07:05 AM

এটি দুর্লভ পরিযায়ী পাখি। কমই দেখা মিলে। তবে পরিযায়ী পাখিটির দেখা মিলল পার্বত্য চট্টগ্রামে। 

সম্প্রতি খাগড়াছড়ির পাহাড়ি বনে পাখিটির দেখা মিলল। পাহাড়ি বনে এটি বংশ বৃদ্ধি করেছে। বাচ্চারা উড়তে শেখার পর শুমচারা এখানে স্থায়ী আবাস গড়ে না। অন্যত্র চলে যায়।

খাগড়াছড়ির পাহাড়ি বনে বিচরণ করছে খয়রা মাথা শুমচা। এক জোড়া শুমচা ‘হুই -হুই’বনে নীরবতা ভাঙে। যেমন সুন্দর সুর, পাখিটিও তেমন সুন্দর। ঘন ঝোপের ভেতরে উড়ে বেড়াচ্ছে  পাখিটি।

পরিযায়ী পাখিটি পাহাড়ি বনে বাচ্চা ফুটিয়েছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছানা মায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওড়ার চেষ্টা করছে। কখনও গাছের ডালে কখনও ঘন সবুজ ঘাসে বিচরণ করছে বাচ্চা জোড়া। মায়ের কাছ থেকে কিছু দূরে দূরে থাকতে ভালোবাসে এরা। একা একা ঘুরে বেড়ায় এক জোড়া শুমচার  ছানা।

ঝুম বৃষ্টির মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রী খয়রা মাথা শুমচা ফুটফুটে ছানাদের জন্য খাবার সংগ্রহ করছে। স্যাঁতস্যাঁতে মাটি থেকে কেঁচো সংগ্রহ করে তারা। সেই খাবার তুলে দেয় বাচ্চাদের মুখে। দুই-তিন দিন বয়সি মায়ের মুখ থেকে খাবার নেয়।

বন থেকে খাবার সংগ্রহ করছে খয়রামাথা শুমচা। ছবি: সমির মল্লিক।

খয়রা মাথা শুমচে শালিকের চেয়ে ছোট। এরা লম্বায় ১৯ সে.মি। এদের দেহ সবুজ। মাথার চাঁদি খয়েরি। ঘাড় কালচে খয়েরি। গলা ও গাল কালো। চোখ কালচে বাদামি। এদের ঠোঁট কালো। ডানায় উজ্জ্বল নীল। পা কালচে। শুমচার বাচ্চাদের রং অনেকটা বির্বণ। পেট বাদামি।

চোখের রং বাদামি। খয়রামাথা শুমচার ইংরেজি নাম Hooded pitta এবং বৈজ্ঞানিক নাম Sordida।

খয়রা শুমচা সাধারণত চিরসবুজ বনের তলদেশে পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। এরা বনের মধ্যে বাসা বাঁধে। সর্বোচ্চ দুই থেকে পাঁচটি ডিম দেয়।

বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ভুটান, মালেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, মিয়ানমারসহ পৃথিবীর জুড়েই এদের আবাস। বাংলাদেশে এদের গ্রীষ্মে দেখা যায়।

২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষ’ বইয়ে শুমচা পাখিকে বাংলাদেশে দুর্লভ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা (আইইউসিএন) এটিকে সারা বিশ্বে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত প্রাণী হিসেবে উল্লেখ করেছে।

বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শুমচা প্রজাতিটি সংরক্ষিত।