মাঙ্কিপক্স নিয়ে সতর্কতা

সাবধানের মার নেই- তাই জেনে রাখা উচিত যাতে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হতে না হয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2022, 06:23 AM
Updated : 10 June 2022, 06:23 AM

বিশ্বব্যাপি ‘মাঙ্কিপক্স’য়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে হাজারের কোঠায়। এর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’ জারি করেছে ‘লেভেল টু অ্যালার্ট’, ‘লেভেল থ্রি’ হল সর্বোচ্চ।

সংস্থার পরামর্শকরা দেশটির সাধারণ মানুষকে জানিয়েছে, জনসাধারণের জন্য ঝুঁকির মাত্রা এখনও কম। তবে ত্বকের অস্বাভাবিক কোনো র‌্যাশ, ফুসকুড়ি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জ্বর থাকুক আর আর না থাকুক, সচেতন হতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

হাসপাতালে যেতে হলে যদি সম্ভব হয় আগেই সেখানে ফোন করে জানিয়ে দিন সম্ভাব্য ‘মাঙ্কিপক্স’য়ের ব্যাপারে যাতে আপনাকে বা রোগীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা দেওয়ার জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত হতে পারে।

যেভাবে ছড়ায়

হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং’য়ের ‘সিনিয়র ফ্যাকাল্টি এডিটর’ রবার্ট এইচ. শের্লিং বলেন, “শ্বাসতন্ত্র থেকে নির্গত তরলকণা এবং ত্বকে ওঠা ফুসকুড়ি থেকে নির্গত তরলে মাধ্যমে রোগী থেকে সুস্থ মানুষে ছড়ায় ‘মাঙ্কিপক্স। যারা এই রোগে আক্রান্ত কিংবা সন্দেহভাজন তাদের উচিত হবে সর্বোচ্চ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।”

ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “ত্বকের ফুসকুড়িগুলো শুকিয়ে তা থেকে মরা চামড়া খসে পড়ার পর রোগী আর সংক্রমণক্ষম থাকে না। চিকিৎসা সেবাদানকারীকে উচিত হবে রোগীর সেবা করার সময় ‘স্যান্ডার্ড ইনফেকশন কন্ট্রোল গিয়ার’ ব্যবহার করা।”

রোগের সংক্রমণ ক্ষমতা কি এখন বেশি?

মাঙ্কিপক্স কোনো নতুন রোগ নয়। মানুষের শরীরে প্রথম এই রোগ শনাক্ত হয় ১৯৭০ সালে, কঙ্গোতে।

‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া স্যান ফ্র্যান্সিসকো’র ‘মেডিসিন’ বিভাগের অধ্যাপক এবং ‘ইনফেকসাস ডিজিজ ক্লিনিকাল স্পেশালিস্ট’ সেথ ব্লুমবার্গ বলেন, “এমনটা হতে পারে যে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে এই রোগের জীবাণু আরও বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা অর্জন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যে ভাইরাস রোগ ছড়াচ্ছে তার জিনগত বৈশিষ্ট্য আমরা দেখেছি এবং তেমন বড় কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি।”

তবে সামান্য যে পরিবর্তন এসেছে তার প্রভাব কতটুকু তা শনাক্ত করতে সময় লাগবে।

এর আগে আফ্রিকার বাইরে এই রোগ এত ব্যাপকহারে দেখা যায়নি। হয়ত রোগ ছড়িয়ে পড়াই আজ সহজ হয়েছে। শহরাঞ্চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রচুর মানুষের ভীড়ে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া খুবই সহজ। হতে পারে এই ভাইরাস আগে কখনও সেই পরিবেশ পায়নি বলেই ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা কম ছিল।

“আবার আবহাওয়ার কথাও মাথায় রাখতে হবে। পাশাপাশি নতুন কোনো প্রাণী এই রোগের বাহক হয়ে উঠেছে কি-না সেটাও ভাবতে হবে”, বলেন এই অধ্যাপক।

রোগের লক্ষণ

ডা. শের্লিং বলেন, “প্রাথমিকভাবে জ্বর, অবসাদ, মাথা ব্যথা ও ‘লিম্ফ নোড’ ফুলে যেতে দেখা যায়। তার কয়েকদিন পর ত্বকে র‌্যাশ দেখা দেয়, যা এক বা দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ফুসকুড়িতে পরিণত হয়। ফুসকুড়ির মুখে থাকে পুজ। র‌্যাশ সাধারণত মুখে দেখা দেয় প্রথমে, পরে হাত ও হাতের তালু, পা ও অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।”

যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে রোগের সংক্রমণ হলে র‌্যাশ বা ফুশকুড়ি প্রথমে যৌনাঙ্গে দেখা দেবে।

কতটা বিপদজনক

ডা. ব্লুমবার্গ বলেন, “বর্তমানে যে প্রকোপ দেখা দিয়েছে তাতে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। যেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল সেখানে এই রোগের মানুষের মৃত্য হওয়া অসম্ভব নয়। এই রোগ অনেকটাই মিলে যায় বসন্তের সঙ্গে যা একসময় অনেক মানুষের প্রাণ কেড়েছে।”

পরে বিশ্বব্যাপি টিকাদানের মাধ্যমে ওই রোগ নির্মূল হয়। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সেই টিকাদান শেষ হয়।

আরও পড়ুন