গরমে প্রাণ জুড়াতে দুই পানীয়

রন্ধনশিল্পী আইরিন সুলতানার রেসিপিতে পুদিনার জুসে শসা আর কোল্ড কফিতে দারুচিনি- স্বাদে আনবে চমক।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2022, 06:25 AM
Updated : 28 April 2022, 06:25 AM

গ্রীষ্মের গরম চরমে উঠেছে। শরীরে ঘাম হচ্ছে প্রচুর; পানির তেষ্টাও পাচ্ছে যখন তখন। রোজার সময় বলে ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবেই।

তবে যারা রোজা করছেন এবং বয়স ও অন্য কারণে যাদের রোজা করতে হয় না, তারা ইফতারে কিংবা দিনের যে কোনো সময়ে চটজলদি ঘরেই বানিয়ে নিতে পারেন দুটো পানীয়।

এই পানীয়গুলো শরীরে পুষ্টি তো দেবেই, সেই সঙ্গে এই গরমে ‘কুল কুল’ অনুভূতিও জোগাবে।

পুদিনার জান ঠাণ্ডা জুস

খোসাসহ শসা এক আঙ্গুল সমান করে কাটা চার টুকরো নিতে হবে এই জুসের জন্য। শশার দানার আস্তরটুকু কেটে ফেলে দেওয়া যেতে পারে। দুটো সুগন্ধি লেবুর রস নিতে হবে। আর লেবুর খোসা কুচি নিতে হবে দেড় টেবিল-চামচ। পুদিনা পাতা নিতে হবে দুই টেবিল-চামচের মত।

জুসার জগে পাঁচ-ছয় টুকরা বরফ কিউব দিয়ে তাতে মাঝারি আকারের গ্লাসের সমান দুই গ্লাস পানি দিতে হবে। চাইলে ফ্রিজের ঠাণ্ডার পানি দেওয়া যায়। এবার শসা, পুদিনা পাতা, লেবুর রস, লেবুর খোসা কুচিও তাতে দিয়ে দিন।

আধা চা-চামচ পুদিনা পাতা ও লেবুর খোসা কুচি সরিয়ে রাখা যায় পরে জুসের গ্লাস সাজাতে।  

আধা চা-চামচ বা তার চেয়েও কম লবণ দেওয়া যেতে পারে, লেবুর বেশি টক কাটাতে। স্বাদ অনুযায়ী চিনি যোগ করতে হবে; ছয়-সাত চা-চামচ চিনিতেই জুসের স্বাদ বেশ হওয়ার কথা।

মধু দিয়ে জুস খাওয়ার অভ্যাস থাকলে কেউ শুধু মধু অথবা মধু ও চিনি মিলিয়েও দিতে পারেন। যারা বেশি চিনি এড়াতে চান, তারা বিকল্প চিনি দিয়েও এই জুস করতে পারেন।

এবার জুসার মেশিন চালিয়ে সব ব্লেন্ড করে নিতে হবে। একবার চেখে দেখে নেওয়া যায় জুসে মিষ্টিভাব ঠিক মতো এসেছে কি-না।  

গ্লাসে দুতিন টুকরা বরফ দিতে হবে। আরও দিতে হবে কুচি করে রাখা লেবুর খোসা। এবার গ্লাসে জুস ঢেলে দিতে হবে।

খোসা-সহ শসা দেওয়ার কারণে এই জুসের রং অদ্ভুত সুন্দর সবুজ হয়। আর ফেনার একটা আস্তরও হবে। এর ওপর পুদিনা পাতা বিছিয়ে দিন। চাইলে লেবু পাতলা ও গোল করে কেটে গ্লাসের কিনারে আটকে দিতে পারেন।

পুদিনার এই জুসে খোসা-সহ শসা যেমন রঙ যোগ করে, তেমন স্বাদেও একটা রহস্য আনে।

কিছু না বলে পরিবেশন করলে সবাই পুদিনার জুস তো সহজেই বুঝবে, তবে জুস পান করে বারবার ভাববে কি যেন আরেকটা রয়েছে;  আবার সেই রহস্য ভেদও করতে পারবে না।

আপনি তখন পুদিনার জান ঠাণ্ডা জুসের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে মুচকি হেসে শসাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না মনে মনে।

ডার্ক কোল্ড কফি

কফি খেলে তো একটু ঝরঝরে লাগেই; তবে এই গরমে ধোঁয়া ওঠা কফিতে নিশ্চয়ই অনীহা জাগবেই। তাই কোল্ড কফি চুমুকে চুমুকে দেবে প্রশান্তি।

তবে কোল্ড কফি খেতে যানজট পেরিয়ে গরমে কোনো রেস্তোরাঁয় যেতে হবে না। ঘরেই ঝটপট করে নেওয়া যাবে ডার্ক কোল্ড কফি।

আধা লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে ফ্যানের বাতাসে ঠাণ্ডা করে রাখুন। ঘরে ইনস্ট্যান্ট কফির প্যাকেট থাকলে তিন প্যাকেট কফি, এক থেকে দুই টেবিল-চামচ পানি বা দুধ দিয়ে গুলে নিতে হবে।

এবার জুসার জগে কফির মিশ্রণ ঢেলে দিতে হবে। দুধ দিতে হবে। ইনস্ট্যান্ট কফি দিলে আলাদা করে চিনি দেওয়ার দরকার হবে না। জুসার জগে পাঁচ-ছয় টুকরা বরফ কিউব দিতে হবে। আর দিতে হবে এক আঙ্গুল সমান একটা দারুচিনি।

কফি গরম খান বা ঠাণ্ডা, এই দারুচিনি যোগ করার ফলে কফির স্বাদকেই পালটে দেবে। আর দারুচিনি খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্যও খুব উপকারী।

যদি দারুচিনির গুঁড়া ব্যবহার করেন, তবে স্বাদ ও সুগন্ধ অটুট রাখতে অবশ্যই সদ্য গুঁড়া করা দারুচিনিই যোগ করবেন। এই স্বাদের সঙ্গে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। 

জুসার জগে গলানো ডার্ক চকলেট বা গ্রেটারে ঝুরি করে নেওয়া দুই টেবিল-চামচ ডার্ক চকলেট যোগ করুন। 

এবার জুসার মেশিন চালু করে সব ব্লেন্ড করে নিতে হবে। আস্ত দারুচিনি দিলে, সামান্য বেশি সময় নিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে।

এবার একটি গ্লাসের ভেতরে গায়ে গলানো ডার্ক চকলেট দিয়ে দাগ দিয়ে দিন; মনে করবেন গ্লাসের ভেতরটা আপনার আঁকার ক্যানভাস। 

গ্লাসে পাঁচ-ছয় টুকরা বরফ কিউব দিয়ে দিন। তারপর গ্লাসে ঠাণ্ডা কফি ঢেলে দিন। কফির ওপরে আরেকটু ঝুরি করা ডার্ক চকলেট ছড়িয়ে দিন।

এক গ্লাস ডার্ক কোল্ড কফির পরিবেশন দেখে এরপর থেকে দোকানে বাড়তি টাকা গুনে কে আর কোল্ড কফিতে চুমুক দেবে? নিজেই যখন তখন বানিয়ে নেবে ঘরে।

পুষ্টিবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে ডার্ক চকলেটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এটা ত্বক ও হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো। সেই সঙ্গে নিয়ম করে ডার্ক চকলেট খাওয়ার অভ্যাসে ‘গুড ফ্যাট’ বাড়বে শরীরে।

তাই এমন কোল্ড কফির ছুতো করেও ডার্ক চকলেট খেতেই পারেন।

গরমে একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পানীয় শরীর ও মনকে সত্যিই শীতল করবে। তবে গরম থেকে বাঁচতে হুটহাট করে ভীষণ ঠাণ্ডা বা বরফ দেওয়া পানীয়তে চুমুক দিলে ঠাণ্ডা লেগে কাশি হতে পারে।

এজন্য রোদ থেকে এলে একটু রয়েসয়ে তারপর পরিমিত ঠাণ্ডা পানীয় আরাম করে পান করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

আরও রেসিপি