বিউটি লাচ্ছি অ্যান্ড ফালুদা- এক নামেই পরিচিত এই দোকানটি। লাচ্ছি দিয়ে যে বিক্রি শুরু করেছিলেন আব্দুল আজিজ, ১০০ বছর পেরিয়ে তার নাতি জাবেদ হোসেনের হাতে এখন দোকানের হাল। এর মধ্যে দুই যুগ আগে ফালুদাও যোগ হয়েছে খাবারের তালিকায়।
জাবেদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১৯২২ সালে তার দাদা বিউটি লাচ্ছির প্রচলন ঘটিয়েছিলেন।
আজিজ ছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রি, অবসর সময়ের কাজ হিসেবে তিনি রাস্তার ফুটপাতে শুরু করেন লাচ্ছি আর লেবুর শরবত বিক্রি। পাকিস্তান আমলে রায়সাহেব বাজার মোড়ে জনসন রোডের এই দোকান ভাড়া নেন তিনি।
আজিজ মারা যাওয়ার পর তার ছেলে আব্দুল গাফফার ব্যবসার হাল ধরেন। তার সময়েই দোকানটি দালান হয়। খাবারেও আসে বৈচিত্র্য।
২০০০ সালে গাফফার মারা যাওয়ার পর জাবেদের হাতে দোকানের হাল। রায়সাহেব বাজার মোড়ের পাশাপাশি পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোড ও লক্ষ্মীবাজারে আরও দুটি শাখাও খোলা হয়।
দোকানের নামকরণের পেছনে কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিউটি মানে তো সুন্দর, সে হিসেবেই নামটা এসেছে।”
সারা ঢাকায় অসংখ্য দোকানে লাচ্ছি বিক্রি হলেও বিউটি লাচ্ছি তৈরির প্রক্রিয়াটিও দেখার মতো। তা তৈরিতে ব্লেন্ডারের মতো কোনো যন্ত্রের ব্যবহারই এখানে নেই। উপকরণগুলো মেশানো হয় ডাল গুটনি দিয়ে।
শুরুতে কেবল লাচ্ছি ও লেবুর শরবত বিক্রি হলেও ২০০১ সালে যোগ হয় ফালুদা। শীতের সময় তৈরি করা হয় আলু পুরি।
এখানে লেবুর শরবত প্রতি গ্লাস ২০ টাকা, লাচ্ছি ৪০ টাকা, ফালুদা নর্মাল ৮০ এবং স্পেশালটা ১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
সুস্বাদু হওয়ার কারণ কী- জানতে চাইলে জাবেদ বলেন, “সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি। নিজেরাই সব তৈরি করি। কোনো মেডিসিন ব্যবহার করা হয় না। আমরা গুণগত মানটা ধরে রাখছি।”
লাচ্ছি তৈরি করা হয় দই, চিনি, বরফ মিশিয়ে; লেবুর শরবত তৈরি করা হয় চিনি, বরফ, লেবুর রসে; ফালুদা তৈরি করা হয় মালাই, সাগুদানা, নুডুলস, ফল দিয়ে। তবে এসব কিছু কারিগরদের মেশাতে দেখা গেছে খালি হাতেই।
শতবর্ষী দোকানটির সোনালী সময় ছিল কখন- প্রশ্নে জাবেদ বলেন, “৯০ এর দশকটা ভালো কেটেছে। কারণ সেই সময়ে ওয়েদার ভালো ছিল।”
এই ব্যবসা পুরোপুরি আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল জানিয়ে তিনি বলেন, “গরমের সময় চাহিদা বেশি থাকে। শীত আসলে বাজার পড়ে যায়। কারণ শীতে তো মানুষ ঠাণ্ডা খায় না।”
করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুর দিতে ২ মাস বন্ধ ছিল বিউটি লাচ্ছির ব্যবসা। ফলে সঙ্কটে পড়তে হয় শতবর্ষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির।
জাবেদ বলেন, “তখন তো মানুষ ঠাণ্ডা খেত না …. এখনও সেই রেশ কাটেনি। আশা করি, সামনে কাটিয়ে ওঠতে পারব।”
ঈদের আগে রোজার মধ্যে দোকানটিতে গিয়ে দেখা যায়, কিছু কারিগর অলস সময় পার করছেন, কেউবা ব্যবস্থা করছেন ফালুদার সামগ্রীর।
তারা বলছেন, রোজার সময় হওয়ায় দিনের প্রথম অংশে বিক্রি তেমন হয় না; চাহিদা বাড়ে ইফতারের সময়। সেজন্য ফালুদা ও লাচ্ছি তৈরির কাজ শুরু হয় বিকালে।
দুপুরেই ফালুদা কেনার জন্য বারবার দোকানটিতে ঘুরে ফিরে আসছিলেন ঢাকার সাভারের বাসিন্দা মকবুল হোসেন। ব্যবসার কাজে প্রায়ই পুরান ঢাকায় আসতে হয় তাকে, যাওয়ার সময় ফালুদা কিনে বাড়িতে ফেরেন।
এত আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে মকবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ““খুব স্বাদ হয় তাদের খাবারের, অন্য জায়গায় খেয়ে এমন স্বাদ পাই না। সেজন্যই বারবার আসা।”
আগামী ১৫ জুন শতবর্ষ পেরুবে বিউটি লাচ্ছির। সেদিন সব খাবারের উপর বিশেষ ছাড় থাকবে বলে জানান মালিক জাবেদ।