চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, কসমেটোলজিস্ট এবং নন্দনতাত্ত্বিকদের মতে সানস্ক্রিন ত্বকের যত্নের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। এটি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর ইউভিএ এবং ইউভিবি থেকে রক্ষা করে। তাপের কারণে হওয়া ক্ষয় কমায় এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যা যেমন- ব্রণ, দাগছোপ ইত্যাদি কমাতে সহায়তা করে।
একইভাবে চুলের ক্ষতি এড়াতেও চাই সূর্যালোক থেকে সুরক্ষা।
ফেমিনা ডট ইন’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ‘ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ কসমেটোলজি, অ্যাস্থেটিক্স অ্যান্ড নিউট্রিশন (আইটুসিএএন)’য়ের পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা নন্দন গিজার বলেন, “ত্বকের মতো সূর্যালোক থেকে বাঁচতে চুলের জন্যও প্রয়োজন সরক্ষার স্তর। অন্যথায় চুলের ক্ষতি হতে পারে।”
রোদের কারণে হওয়া চুলের ক্ষতি সমূহ
* সূর্যের আলোর ইউভিএ এবং ইউভিবি বিকিরণ চুলের মেলানিন নষ্ট করে দেয়। ফলে চুল বিবর্ণ হয়ে পড়ে। মেলানিনের মাত্রা খুব বেশি হ্রাস পেলে তা অকাল পক্কতাও সৃষ্টি করতে পারে।
* সূর্যালোক চুলের প্রয়োজনীয় উপাদান প্রোটিন নষ্ট করে ফেলায় তা রুক্ষ, ভঙ্গুর ও নির্জীব হয়ে যায়।
* চুলের বাইরের স্তরকে বলা হয় কিউটিকল। এই স্তর চুলের ভেতরের স্তরকে রক্ষা করে। অত্যধিক সূর্যের আলোতে থাকার ফলে কিউটিকলের ক্ষতি করতে পারে ফলে চুল অমসৃণ ও নির্জীব হয়ে পড়ে। অনেকক্ষেত্রে আগা ফাটার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
চুলকে সুরক্ষিত রাখার উপায়
বেশ কয়েকটি পন্থায় সূর্যালোক থেকে চুল রক্ষা করা যেতে পারে।
টুপি ব্যবহার: বড় পাশ বিশিষ্ট টুপি ব্যবহার চুলকে সূর্যালোক ও বাইরের বাড়তি তাপ থেকে সুরক্ষিত রাখে।
রাসায়নিক ট্রিটমেন্ট এড়িয়ে চলা: গরমকালে ‘কেমিকেল ট্রিটমেন্ট’ না করাই ভালো। রাসায়নিক পণ্য চুল দুর্বল করে। ফলে সূর্যালোকের কারণে চুলের বেশি ক্ষতি হয়।
চুলে সান প্রটেকশন ব্যবহার: সূর্যালোক থেকে চুল বাঁচাতে বাজারে নানান ধরনের প্রসাধনী পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রিম, পাউডার, লোশন, জেল এমনকি স্প্রে। উন্নত মানের এসপিএফ ৩০+ সমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহার চুলকে রোদের হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
চুল পরিষ্কার: গরমকালে খুব বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করা ঠিক নয়। প্রয়োজন হলে প্রতিদিন শ্যাম্পু ব্যবহার না করে কন্ডিশনার ব্যবহার করে চুল ধোয়া যেতে পারে। একে বলে ‘কো-ওয়াশিং’।
বাড়তি তাপ থেকে সুরক্ষা: এই সময়ে ‘ব্লো ড্রাই’ বা ‘স্ট্রেইট’ করতে তাপীয় যন্ত্র ব্যবহার না করা উচিত। গরমের কারণে এমনিতেই চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ব্যবহারে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে।
আর্দ্র থাকা: সারাদিন নিজেকে আর্দ্র রাখার চেষ্টা করা উচিত। এতে শরীর এমনকি চুলও ভালো থাকবে। এজন্য পর্যাপ্ত পানি পান জরুরি।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধরনের খাবার খাওয়া: সূর্যালোকের কারণে হওয়া ‘অক্সিডেটিভ’ চাপ কমাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধরনের খাবার ভূমিকা রাখে। রংধনু খাবার অর্থাৎ বা কমপক্ষে চার-পাঁচ ধরনের রঙিন সবজি ও ফল খাবার তালিকায় রাখতে হবে। যা গরমকালে খাওয়া বিশেষ উপকারী।
চুল রক্ষাকারী ঘরোয়া মাস্ক
• তাজা অ্যালোভেরার জেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় মেখে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
• পাকা কলা চটকে মিহি পেস্ট করে তাতে এক টেবিল চামচ মধু যোগ করে মাথায় ব্যবহার করতে হবে। ১৫ মিনিট পরে তা সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
• তৌলাক্ত চুলে ডিমের সাদা অংশ ও রুক্ষ চুলে হলুদ অংশ ব্যবহার করতে হয়। এর সঙ্গে এক চা-চামচ জলপাইয়ের তেল ও ১/৩ কাপ মেয়োনেইজ ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
উপাদানগুলো ভালো মতো মিশিয়ে চুলে মেখে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
উপরের যে কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করেই চুলের যত্ন নেওয়া যায়। তবে চুলে চকচকেভাব আনতে শেষবার চুল ধোয়ার সময় ভিনিগার মিশ্রিত পানি ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
প্রতীকী ছবির মডেল: শান্তা রহমান। ছবি: নয়ন কুমার।
আরও পড়ুন