পা সবসময় ঠাণ্ডা থাকার কারণ ও করণীয়

যে কোনো মৌসুমে পায়ের পাতা ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়ার কারণ সুবিধার নাও হতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2022, 01:14 PM
Updated : 27 March 2022, 01:14 PM

পায়ে ঠাণ্ডা লাগা কখনই সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। শীতকালে তো বটেই, এমনকি গরমের দিনেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের পায়ে ঠাণ্ডা অনুভব করা সম্ভব। আর সেমসয় মোটা উলের মোজা পরেও যদি পায়ে ঠাণ্ডা লাগে সমস্যা হয়ত গুরুতর।

আপনার শরীরই ঠাণ্ডা

যদি সব ঋতুতেই শীত অনুভব করেন তবে আপনাকে বলা যেতে ‘শীতল রক্তবাহী’ আর এমনটা সত্যিই হতে পারে।

নিউ ইয়র্কের জুনো মেডিকেল’য়ের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরতি আগারওয়াল  বলেন, “কিছু মানুষ স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের তুলনায় বেশি ঠাণ্ডা অনুভব করেন। কালেভদ্রে সেটা কোনো রোগের উপসর্গ হতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর কারণটা হল শরীরে পেশির ঘনত্ব কম থাকা।”

রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই চিকিৎসক আরও বলেন, “যাদের শরীরের তাপমাত্রা কম তাদের শরীরে পেশির ঘনত্ব কম থাকে। আর যেহেতু পেশি তাপ উৎপন্ন করে, তাই শরীরকে উষ্ণতা যোগানো জন্য হাত ও পা থেকে তাপ সরিয়ে শরীরের অন্যান্য অংশে সরবরাহ করা হয়।”

রক্ত সঞ্চালন কম

প্রত্যেকেরই একটি সঞ্চালন ব্যবস্থা রয়েছে যা পুরো শরীর জুড়ে রক্ত সরবরাহ করে। কারও সেই ব্যবস্থা কম কার্যকর। যার রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থার কার্যকারিতা কম তার শরীরে রক্ত সবলীলভাবে প্রবাহিত হতে পারে না।

আর যেহেতু রক্ত সঞ্চালন শরীরের তাপমাত্রাকেও ছড়িয়ে দেয়, তাই এই রক্ত প্রবাহ কমে গেলে শরীরের তাপমাত্রাও কমে যাবে। অর্থাৎ পায়ে যদি রক্তপ্রবাহ কম হয় তবে সেখানে ঠাণ্ডা অনুভব হবে।

ডা. আগরওয়াল বলেন, “পায়ের এবং হাতের রক্তনালী অপেক্ষাকৃত ছোট এবং সবচেয়ে সংবেদনশীল। তাই রক্ত সঞ্চালনের কার্যকারিতা কম হলে পা এবং হাতে ঠাণ্ডা অনুভূত হতে পারে। ধূমপান ও স্থূলতা রক্ত সঞ্চালনের পথে সাধারণ ঝুঁকি।”

বিভিন্ন রোগ থেকেও এর কার্যকারিতা কমতে পারে। যেমন- ‘পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজ’ বা ‘রেনডস ডিজিজ’ রক্ত সঞ্চালন কমায়।

নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান বর্জণ এবং সুষম খাবার খাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে হবে। কোনো রোগের কারণে রক্ত সঞ্চালন দুর্বল কি-না সেটা জানতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মানসিক দুশ্চিন্তা

যদি খুব বেশি মানসিক চাপে ভোগেন বা উদ্বিগ্ন বোধ করেন তবে শরীরে তার প্রতিক্রিয়া শুরু হবে। যখন এটি ঘটে তখন হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এসময় শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। এর কারণ হল শরীর তখন প্রধান পেশিগুলোতে রক্ত, পুষ্টি এবং অক্সিজেন সরবরাহ করতে অতিরিক্ত কাজ করছে৷

এই পেশিগুলোই বিপজ্জনক পরিস্থিতিকে শরীরকে রক্ষা করবে। হাত এবং পা এই মূল পেশির অংশ।

তাই এসময় হাত ও পায়ে রক্ত প্রবাহ তুলনামূলক কমে যেতে পারে। অপরদিকে যেহেতু রক্ত সঞ্চালন শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে হাত ও পায়ে ঠাণ্ডা অনুভূত হতে পারে।

থাইরয়েড গ্রন্থির সক্রিয়তা কম

‘হাইপোথাইরয়েডিজম’ মানে হল ‘থাইরয়েড’ গ্রন্থির সক্রিয়তা স্বাভাবিকের তুলনায় নয়। ‘থাইরয়েড’ গ্রন্থি হল গলার সামনের একটি ছোট গ্রন্থি আর এর কাজ হল হরমোন তৈরি করা যা শরীরের শক্তি ব্যবহার করার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে।

এই রোগ জন্মগত হতে পারে আবার পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন কারণে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। বংশে কারও এই রোগ থাকলে কিংবা বয়স যাদের ষাটের বেশি তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়া আশঙ্কা প্রবল।

এই রোগে আক্রান্ত হলে ‘থাইরয়েড’ হরমোনগুলো যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদন হয় না। ফলে শরীরের স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়াগুলো গতি কমে যায়। যে করণে শীতের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারেন।

করণীয়

আগরওয়ালের মতে, “নিয়মিত ব্যায়াম করলে পায়ে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। ফলে পায়ের ক্রমাগত ঠাণ্ডার অনুভূতি কমতে শুরু করবে। কুসুম গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রাখলে আরাম পাওয়া যায়। এজন্য একটি বড় পাত্রে কুসুম গরম পানি নিয়ে তাতে ১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখতে হবে।”

এছাড়া ‘হিটিং প্যাড’, ‘হিটিং ব্যাগ’ কিংবা বোতলে গরম পানি ভরে তা পায়ে বুলিয়ে নিলেও আরাম পাওয়া যাবে।

মানসিক চাপ কমাতে হবে। সম্ভব হলে মোজা পরে থাকতে হবে। ধূপমানের কারণে রক্তনালী সরু হয়ে যায়, ফলে রক্ত সঞ্চালন কমে এবং শীত লাগে বেশি। তাই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন