কাজের ফাঁকে ঘাড় এবং কাঁধের অস্বস্তি কমাতে কিংবা দৌড়ের আগে পায়ের পেশিগুলো তৈরি করে নেওয়া জন্য স্ট্রেচিং করা হয়। এতে শরীরে ফুরফুরে অনুভূতি তো দেয়ই, পাশাপাশি পেশির ব্যথা কমায়, নড়াচড়ার ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করাতে। এক কথায়, স্ট্রেচিং শারীরিক সুস্থতার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তবে স্ট্রেচিং’য়ের মতো সাধারণ জিনিসের মাঝেও লুকিয়ে থাকতে পারে ভুল। এতে স্ট্রেচিং’য়ে পরিপূর্ণ উপকারিতা উপভোগ করতে পারবেন না। বরং দেখা দিতে পারে শারীরিক সমস্যা।
কৌশলে ভুল
যেকোনো শারীরিক কসরতের জন্য সঠিক কৌশল মেনে চলা অত্যাবশ্যক। কৌশলে ভুল হলে যে পেশির ওপর যতটুকু প্রভাব পড়ার কথা ছিল তা পড়বে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্ট্রেচল্যাব’য়ের প্রশিক্ষণ বিষয়ক পরিচালক অস্টিন মার্টিনেজ ‘ওয়েল অ্যান্ড গুড’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “ব্যায়াম বা স্ট্রেচিং যাই হোক না কেনো, সঠিক কৌশল হল শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে শরীরের ধরে রাখা। পেশি স্ট্রেচ বা টানটান করার সময় ভুল কৌশল আঘাতের কারণ হতে পারে।”
“কোনো পেশিতে অতিরিক্ত চাপ পড়া থেকেই এমনটা হয়। সঠিক কৌশলের মধ্যে সঠিক স্থিতিশীলতা বিন্দু এবং শরীরের অংশগুলো নোঙ্গর করা জড়িত। তবেই তৈরি হবে ‘লেভারেজ’ এবং আপনি পর্যাপ্ত মাত্রায় পেশিকে টানটান করতে পারবেন নিরাপদে।”
‘স্ট্রেচিং’ করার আগে যে পেশির ওপর এর প্রভাব পড়বে সেগুলো নিয়ে একটু গবেষণা করার পরামর্শ দেন মার্টিনেজ। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিতে হবে।
পেশি অতিরিক্ত টানটান করা
পেশির স্থিতিস্থাপকতারও একটা মাত্রা থাকে। অতিরিক্ত গভীরভাবে ‘স্ট্রেচিং’ করলে তাই আঘাত পেতে পারেন। মার্টিনেজ বলেন, ‘স্ট্রেচিং’য়ে কখনও ব্যথা হওয়া উচিত নয়। তাই পেশির ওপর বাড়তি চাপ না দিয়ে সময় দিন, অনুশীলন বাড়ান। ক্রমেই আপনার সহনশীলতা বাড়বে। প্রথম দিকে যতটা টানটান করতে ব্যথা হবে একসময় সহজেই তার চাইতে বেশি মাত্রায় পেশি টানটান করতে পারবেন। ক্রমাগত অনুশীলনের মাধ্যমে আপনার শরীরের স্নায়ুগুলো শান্ত হবে এবং স্ট্রেচিং’য়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবে।
অপরদিকে পেশির ওপর প্রয়োজনের চাইতে কম চাপ দিলেও বিপদের কারণ হতে পারে। তাতে আপনার কসরত পুরোই বৃথা।
ভারসাম্য খুঁজে পাওয়ার উপায় সম্পর্কে মার্টিনেজ বলেন, ‘স্ট্রেচিং’য়ের সময় শরীরের অনুভূতির দিকে মনযোগ দিতে হবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, “অতিরিক্ত স্ট্রেচিং করছেন এমন লক্ষণ হবে শ্বাস আটকে রাখা, স্নায়ুতে ব্যথা, পেশিতে তীক্ষ্ণ ব্যথা বা কাঁপুনি।”
০ থেকে ১০ পর্যন্ত একটি স্ট্রেচিং’য়ের তীব্রতার স্কেল কল্পনা করতে হবে, যেখানে ০ হল কোনো স্ট্রেচিং নয়, আর ১০ হল ব্যথা।
‘হ্যামস্ট্রিং’, ‘কোয়াড্রিসেপ এবং গ্লুটের মতো বড় পেশিগুলোর জন্য, পাঁচ থেকে সাত মাত্রার স্ট্রেচিং করতে হয়। আবার কব্জি এবং ঘাড়ের মতো ছোট পেশির জন্য, তিন থেকে পাঁচ মাত্রার স্ট্রেচিং করার লক্ষ্যমাত্রা নিতে হবে।
পেশিকে টানটান অবস্থায় আটকে রাখা
স্ট্রেচিং’য়ের ক্ষেত্রে বেশি মানেই যে ভালো তা কিন্তু নয়। পেশি কতক্ষণ টানটান রাখতে হবে, কতক্ষণ পর শিথিল করে দিতে হবে সেটা জানতে হবে।
মার্টিনেজ বলেন, “যেকোনো পেশিকে টানটান অবস্থায় নুন্যতম ২০ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। পেশির গঠনগত পরিবর্তন আনার জন্য এই সময় যথেষ্ট। এটা সর্বোচ্চ এক মিনিট পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেন। এর বেশি স্ট্রেচিং খুব একটা উপকার করেনা। তাই স্ট্রেচিং’য়ে সময়ের দিকে নজর রাখতে হবে। গোনার জন্য শ্বাস প্রশ্বাসকে ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত স্ট্রেচিং করলে শরীরও সময়ের হিসেব রাখা শুরু করবে।”
আহত পেশির ওপর স্ট্রেচিং
আঘাত পাওয়া পেশির দরকার বিশ্রাম এবং ক্ষয়পূরণের সুযোগ। এটা জানার পরও অনেকেই গায়ের জোরে আহত পেশির ওপর ‘স্ট্রেচিং’ করেন, মনে করেন ব্যায়াম করলেই ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
মার্টিনেজ বলেন, “এটি একটি বড় ভুল। আঘাত পাওয়া পেশিকে টানটান করার চেষ্টা করা উচিত নয়। পেশিতে অতিরিক্ত ব্যথা, লালভাব, প্রদাহ বা ফোলাভাব লক্ষ্য করলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর প্রতিটি আঘাত অনন্য। তাই কতদিন আঘাত পাওয়া পেশির ওপর চাপ দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে তা নির্ভর করবে পেশির ওপর। এজন্য একজন চিকিৎসক কিংবা ‘ফিজিওথেরাপিস্ট’য়ের পরামর্শ নিতে হবে।”
একা না করাই ভালো
স্ট্রেচিং’য়ের সময় সঙ্গে একজন সঙ্গী না থাকলে যে মস্ত বড় ক্ষতি হবে তা নয়। তবে সঙ্গী থাকলে অনেক উপকার পেতে পারেন।
এই সঙ্গী হতে পারে প্রশিক্ষক কিংবা আপনার মতোই আরেকজন। অভিজ্ঞ কেউ অবশ্যই বাড়তি সুবিধা বয়ে আনবে, আপনার ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে পারবে। নতুন কৌশল দেখাতে পারবে।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন