চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়া স্মৃতিশক্তির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
Published : 02 Mar 2022, 02:29 PM
বংশগতি ছাড়াও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য নির্ভর করে জীবনযাত্রার ওপর। অর্থাৎ কী খাওয়া হচ্ছে, কীভাবে খাওয়া হচ্ছে, কতটা বিশ্রাম নেওয়া হচ্ছে ইত্যাদি সব মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব রাখে।
অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেইট
প্রক্রিয়াজাত করার ফলে শস্যগুলো থেকে আঁশ ও পুষ্টি উপাদান আলাদা হয়ে যায়। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাবারের মধ্যে আছে- সাদা ময়দা ও চিনি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি খাবার, সিরিয়াল ও পাস্তা।
অস্ট্রেলিয়ার ‘স্কুল অফ মেডিকেল সায়েন্স’য়ের করা ২০১৫ সালের এক পর্যালোচনার উদ্ধৃতি দিয়ে ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, সাধারণ চিনি বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা যেমন- সোডা, ক্যান্ডি ইত্যাদি খাওয়া জ্ঞানীয় দক্ষতার সঙ্গে যুক্ত।
বয়স্কদের মধ্যে যারা বেশি ক্যালরি গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে হালকা জ্ঞানীয় দুর্বলতা বা স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি দেখা যায়।
এই ধরনের কার্বোহাইড্রেইট উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক সমৃদ্ধ, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত এবং নাটকীয়ভাবে বাড়ায়। রক্তে শর্করার মাত্রা যত বৃদ্ধি পাবে, গ্লাইসেমিক চাপও তত বেশি হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চ গ্লাইসেমিক ধরনের খাবার শিশু এবং সুস্থ অল্প বয়স্ক এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তির কর্মক্ষমতা নষ্ট করতে পারে।
তাই যতটা সম্ভব স্বাস্থ্য খাবার যেমন- স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেইট, শস্য, ফল, সবজি, ডাল ইত্যাদি কম গ্লাইসেমিক যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
উচ্চ মার্কারি যুক্ত মাছ
সাধারণত, গর্ভাবস্থায় মার্কারি যুক্ত মাছ খেতে নিষেধ করা হয়। এছাড়াও অন্যান্য সময় মার্কারি যুক্ত মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা উচিত।
ভারী ধাতব উপাদানযুক্ত খাবার স্নায়ু প্রক্রিয়া ও মস্তিষ্কের বৃদ্ধির ওপর প্রভাব রাখে বলে জানা গেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত ‘বির্নহফ্ট সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড মেডিসিন’য়ের করা এক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, মার্কারি বা পারদের বিষক্রিয়া দেহের ভারসাম্য ও নড়াচড়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
দীর্ঘ আয়ু সম্পন্ন বড় মাছ যেমন- টুনা, সোর্ডফিশ ও কিং ম্যাকারেল ইত্যাদি মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকে যা অল্প বয়সি শিশু ও গর্ভবতী মহিলারা খেলে পারদের বিষক্রিয়া শিকার হতে পারেন। কেননা শিশু ও গর্ভবতী মহিলারা পারদের বিষক্রিয়া প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে।
কিছু কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পন্ন মানুষ বাদে অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্করা নিরাপদে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অংশ হিসেবে সপ্তাহে দু-তিনবার মাছ খেতে পারেন। টুনা ও স্যামনের মতো কিছু মাছে অত্যাবশ্যকীয় ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি থাকে এবং অন্যান্য মাছে প্রোটিনের ঘনত্ব বেশি থাকে যা দেহের ভিটামিন ও খনিজ চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করে।
নিম্নমানের চর্বি গ্রহন
‘আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ খাবারের উন্নত স্তরের চর্বি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এগুলো স্বাস্থ্য ভালো রাখে। অ্যাভাকাডো, বাদাম, বীজ এবং জলপাই তেলের মতো খাবারে পাওয়া উদ্ভিজ্জ চর্বিগুলোর ক্ষেত্রে এটা সত্য হলেও প্রক্রিয়াজাত চর্বির ক্ষেত্রে তা ভিন্ন।
এগুলো দেহ ও মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব রাখে।
অন্যদিকে, স্যাচুরেইটেড চর্বি সাধারণত প্রাণিজ খাবারে পাওয়া যায়। এগুলো মস্তিষ্কের ওপর উদ্বেগজনক প্রভাব ফেলতে পারে।
‘হোয়াইটল্যান্ডস কলেজ ইউনিভার্সিটি অফ রোহ্যাম্পটন’য়ের মনস্তাত্বিক বিভাগের করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্যাচুরেইটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট বেশি গ্রহণ করার ফলে জ্ঞানীও কর্মক্ষমতা কমায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘দি জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের করা আরেকটি সমীক্ষায় একই রকম ফলাফল পাওয়া গেছে।
প্রাকৃতিকভাবে প্রাণিজ খাবার, যেমন- গরুর মাংস, ডিম ও পনির ইত্যাদি ট্রান্সফ্যাট পাওয়া যায়। তবে প্রক্রিয়াজাত খাবারে এর পরিমাণ আরও বেশি এবং এগুলো সাধারণত বেইক করার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
কৃত্রিম চিনি
ক্যালরি ছাড়া মিষ্টি স্বাদের জন্য কৃত্রিম চিনির ব্যবহার জনপ্রিয়। তবে স্বাস্থগত ঝুঁকির কথা চিন্তা করলে সেটা ভালো না।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ডাকোটা’র করা গবেষণার ফলাফল বলে, অতিমাত্রায় কৃত্রিম চিনি গ্রহণে ফলে দেখা দিতে পারে মানসিক অবসাদ, বিরক্তিকর মেজাজ।
মনে রাখা ভালো
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং স্মৃতিশক্তির ওপর খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব নিয়ে গবেষণা চলছে। সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ সতর্কতা অনুসরণ করার ইঙ্গিত দেয়।
যদিও বংশগতি এবং অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও স্মৃতিশক্তির ওপর ভূমিকা রাখে। তবুও সঠিক খাবার নির্বাচন করা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও স্মৃতিশক্তিকে ধারাল রাখতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন