জ্বর, কাশি, অবসাদ, স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারানো, করোনাভাইরাসের উপসর্গের তালিকা করলে এগুলোই থাকে প্রথম সারিতে। তবে মহামারীর আকার ধারণ করা এই রোগ এমন কিছু উপসর্গও দেখিয়েছে যা দেখে চট করে রোগটার কথা মনে আসে না।
কোভিড সাইকোসিস
যুক্তরাষ্ট্রের লং আইল্যান্ডের মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হাইসাম গোয়েলি ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “বিশ্বব্যাপি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কোভিড রোগীদের মধ্যে ‘সাইকোসিস’ বা মনোবৈকল্য দেখা গেছে। এটা হতে পারে ‘কোভিড’য়ের সম্পর্কিত, আবার নাও হতে পারে।”
“তবে একটা যোগাযোগ আমাদের চোখে পড়েছে কোভিড রোগীদের নিয়ে ‘ইনপেশেন্ট সায়কাট্রিক ট্রিটমেন্ট প্রোগ্রাম’ পরিচালনার সময়। প্রথমে ব্যাপারটা নেহাত খটকা ছিল, তবে ক্রমেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেখা যায়।”
দুরহাম’য়ের ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিকাল সেন্টার’য়ের ডা. কলিন স্মিথ এই বিষয়ে বলেন, “আমার ধারণা যেখানেই করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাব আছে, সেখানেই এই ঘটনা দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন করোনাভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রদাহ ও তার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রভাব। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সক্রিয়তার কারণে শরীরে আসা কিছু ‘নিউরোটক্সিন’ মস্তিষ্কে চলে যেতে পারে। আর সেখান থেকেই এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।”
ত্বকে চুলকানি
হুট করে ত্বকের ‘র্যাশ’ বা ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া ‘কোভিড-১৯’য়ের উপসর্গ হতে পারে।
কিংস কলেজ লন্ডন এবং সেইন্ট থমাস হাসপাতালের ‘কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিস্ট’ ভেরোনিক বাটাইলি বলেন, “অনেক ভাইরাসের আক্রমণই ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে। মনে রাখতে হবে, শুধু র্যাশই হয়ত রোগের একমাত্র উপসর্গ হতে পারে। তাই পরীক্ষার ক্ষেত্রে আলসেমি থাকা উচিত নয়।”
আরেক ‘কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিস্ট’ ডা. জাস্টিন ক্লুক বলেন, “অভূতপূর্ব উপসর্গগুলো আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, যে কোনো সমস্যার পেছনেই কোনো না কোনো কারণ থাকে। আর বর্তমান মহামারীর সময়ে কোনো উপসর্গ বা সমস্যাকেই অবহেলা করা উচিত নয়।”
চুল পড়া
যুক্তরাষ্ট্রের ত্বক বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্সিস ইয়ং বলেন, “কিছু করোনা রোগীর চুল পড়ে যাওয়ার ঘটনা দেখা গেছে। মানসিকভাবে চাপে থাকলে চুল পড়াটা স্বাভাবিক একটা ঘটনা। সন্তান প্রসব, বড় মাপের অস্ত্রোপচার ইত্যাদির পরও মানুষের চুল পড়ে যাওয়া ঘটনা ঘটে হর হামেশাই। সেই প্রেক্ষিতেই কিছু কোভিড রোগীর চুল পড়তে দেখা গেছে।”
পায়ের আঙুলে প্রদাহ
‘পুলমনোলজিস্ট’ বা ফুসফুস ও শ্বাসপ্রস্বাস-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডা. হামবার্তো চই বলেন, “পায়ের আঙুলে জ্বালাপোড়া, ফুলে ওঠা, রং বদলে যাওয়া ইত্যাদি ‘কোভিড-১৯’য়ে আক্রান্ত রোগীদের মাঝে দেখা যায়। কেনো এমনটা হয় তা এখনও পরিষ্কার নয়। বিশেষ করে, কোভিড রোগীদের পায়ের গোড়ালিতে লালচে প্রদাহ দেখা যাচ্ছে সবচাইতে বেশি।”
হতে পারে ত্বকের কোনো কিছুর প্রতি ‘রিঅ্যাকশন’ থেকে এমনটা হচ্ছে। আবার পায়ের কোনো রক্তনালী আটকে যাওয়ার কারণেও এমনটা হতে পারে।
কথা বলায় সমস্যা
‘পুলমোনারি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার ডক্টর’ জোসেফ খাবাজ্জা বলেন, “কোভিড-১৯’য়ের শিকার হওয়ার আরেকটি অদ্ভুত লক্ষণ হলো গলার স্বর বদলে যাওয়া। কথা বলতে অসুবিধা হওয়া। যেহেতু করোনাভাইরাস শ্বাসতন্ত্রকে সংক্রমিত করে তাই এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক বলা যাবে না।”
ভাইরাস সংক্রমণ থেকে ‘লারিঞ্জাইটিস’ দেখা দিতে পারে। এসময় কাশির পরিস্থিতি আরও মারাত্মক করে তুলবে।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন