বাসা বদলের সময় যেভাবে গাছ সঙ্গে নেবেন

শখের গাছ নিরাপদে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে চাইলে জেনে রাখুন কয়েকটি পন্থা।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2022, 09:34 AM
Updated : 16 Feb 2022, 09:34 AM

সবসময় গাছের যত্ন নেওয়া হলেও বাসা পরিবর্তনের সময় অধিকাংশ গাছই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই স্থান পরিবর্তনের সময় গাছের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা থাকা ভালো।

পর্যাপ্ত প্যাকেজিং ব্যবস্থা

যুক্তরাজ্যের অন্যতম শীর্ষ বাগান-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ‘ডিআইওয়াই গার্ডেন’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ক্লিভ হ্যারিস বলেন, "গাড়ি, ভ্যান এবং বিমানে গাছের পাতা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। তাই সঠিক স্থানান্তরের জন্য নিরাপদ প্যাকেজিং প্রয়োজন।”

গাছ স্থানান্তরের সময় তার সঠিক সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এর আর্দ্রতা ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত পানি দেওয়া হয়েছে কি-না সে বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত।

ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “পানির অভাবে গাছ শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি স্বল্পতা দেখা দেয়। ফলে গাছের ক্ষতি হতে পারে। তাই বাসা বদলের সময় গাছের পর্যাপ্ত পানির চাহিদা পূরণ ও যাত্রা পথে যেন কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার প্রয়োজন।”

বাসা পরিবর্তনের পরে সকল জিনিস খোলা এবং বাসা নতুন করে সাজাতে বেশ কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়। এই সময় গাছের কথা মনে নাও থাকতে পারে। অথবা মনে থাকলেও সব সময় তার যত্ন করা সম্ভব নাও হতে পারে।

তাই গাছে পর্যাপ্ত পানি আগে থেকে নিশ্চিত করতে হবে। বাসা বদলানোর আগে সিংকে গাছ ভালোমতো ভিজিয়ে নিতে হবে এবং তা সুরক্ষিত রাখতে সঠিক উপায় প্যাকেট করতে হবে।

গাছ যেন ভেঙে না যায় তার জন্য ঠিকঠাক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করাও জরুরি বলে মনে করেন, তিনি।

প্রয়োজন হলে সংবাদপত্র দিয়ে গাছ মুড়িয়ে নেওয়া।

গাছ ও টবের ধরন বুঝে তা নিরাপদে সরানোর জন্য প্রয়োজন হলে সংবাদপত্রে কাগজ দিয়ে ভালোমতো মুড়িয়ে নিতে হবে। খবরের কাগজ সাধারণত পাতলা হয় এর মধ্য দিয়ে গাছ শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে, পাশাপাশি গাছের সুরক্ষাও নিশ্চিত থাকে বলে জানান হ্যারিস।

তিনি আরও বলেন, “বড় পাতাযুক্ত গাছগুলো চ্যাপ্টা বা কুঁচকে যেতে পারে বলে এটা সরানোর সব থেকে ভালো উপায় হলো সংবাদপত্রের কাগজ দিয়ে গাছের পাতার ওপরের অংশটুকু আলতো করে মুড়িয়ে নেওয়া।

যেমন- বাসায় অর্কিডের মতো গাজ থাকলে তা স্থানান্তরের সময় অবশ্যই খবরের কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে। অন্যথায় গাছটি ভেঙে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

লতানো গাছের ক্ষেত্রেও গাছের গোড়ায় আলতোভাবে খবরের কাগজ মুড়িয়ে নিতে হবে যেন তারা মাটির সঙ্গে সুন্দরভাবেই আটকে থাকতে পারে। এতে গাছ নষ্ট হওয়া এড়ানো সম্ভব।

প্রয়োজনবোধে গাছ আলাদাভাবে প্যাকেট করা

ক্যাকটাস ধরনের গাছ থাকলে তা আলাদাভাবে প্যাকেট করা উচিত। ধরন বুঝে আলাদা প্যাকেট করে তা কোনো বাক্সে রাখলে গাছটা সোজা দাঁড়িয়ে থাকবে এবং ভেঙে পড়ার বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

ক্যাক্টাস গাছ কাটা বহুল। তাই যখন তখন ধরা বিপদজনক হতে পারে। আবার স্থানান্তর করার ক্ষেত্রেও বাড়তি সচেতনতা অনুসরণ করতে হবে।

তাই সবচেয়ে ভালো হয় যদি গাছগুলোকে আলাদাভাবে প্যাকেট করে একটি বাক্সে রাখা হয়। এতে বাসা বদল করা হলেও গাছ নষ্ট হওয়া বা ভেঙে যাওয়া ঝুঁকি কমবে।

বাক্সের ওপর নাম লিখে রাখা

গাছগুলো আলাদা প্যাকেট করে বাক্সে রাখার পরে ওপরে নাম লিখে রাখা ভালো। এতে কোন প্যাকেটে কী গাছ আছে এবং তা কখন খুলতে হবে, কীভাবে সাজাতে হবে সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।

গাছের প্যাকেটগুলোর ওপর নাম লেখা থাকলে অন্য বাক্সের ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া, আলোর স্বল্পতা বা পানির অভাবে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।

এছাড়াও গাছগুলোকে যেখানে নামানো হবে সেই স্থানে যদি প্লাস্টিক দিয়ে বা বাক্সে রাখা হয় তাহলে মাটি থেকে পানি পড়ে নিচের বোর্ড ভিজে যাওয়া বা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।

গাছের সহনীয়তার মাত্রা বাড়ানো

ঘরে রাখা গাছগুলো বরাবরই নাজুক হয়ে থাকে। খুব বেশি নাড়াচাড়া, বাইরের পরিবেশের অবস্থা ইত্যাদি গাছকে দুর্বল করে দেয়। তাই এসব গাছের ক্ষেত্রে বেশি মনোযোগী হওয়া ও সহনশীল আচরণ করার পরামর্শ দেন, হ্যারিস।

গাছগুলো ভালো রাখতে যা করণীয়

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাক্সের ঢাকনা খোলা। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস দিতে এবং ঝাঁকুনির কারণে হওয়া ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাছের বাক্সের ঢাকনা খুলে ফেলতে হবে।

গাছপালা বদ্ধ অন্ধকার জায়গায় থাকতে খুব একটা পছন্দ করে না। তাই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাছের বাক্সের ঢাকনাগুলো খুলে দিতে হবে।

গাছের ধরন বুঝে তার অবস্থান ঠিক করা

হ্যারিস বলেন, “জায়গা মতো পৌঁছানোর পরে কোন ধরনের গাছ কেমন পরিবেশ ভালো থাকে সে অনুযায়ী তাদেরকে স্থাপন করতে হবে।”

অর্থাৎ কিছু গাছ ঘরের কম আলোতে ভালো মতো থাকতে পারে। কিছু গাছের জন্য আবার প্রয়োজন পর্যাপ্ত আলো বাতাস ও আর্দ্রতা। সে অনুযায়ী গাছগুলোকে নিজ নিজ স্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

ফুল সরানো

স্থানান্তরের পরে গাছে থাকা ফুলগুলো যদি শুকিয়ে যাওয়া শুরু করে বা দুর্বল দেখায় তাহলে তা গাছ থেকে ছিঁড়ে ফেলাই ভালো। এতে গাছ নিজের পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারবে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশ অপসারণ করলে গাছের শক্তি পুনরায় ফিরে আসে এবং দুর্বলতা কাটাতে তার বাড়তি পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না। তাই অবস্থান পরিবর্তনের পরে গাছে থাকা মরা পাতা, ফুল ছিঁড়ে ফেলা ভালো বলে মনে করেন, হ্যারিস।

আলোর মাত্রা ও তাপের দিকে খেয়াল রাখা

বাসা পরিবর্তনের সময় ঝাঁকুনিতে অনেক গাছে দুর্বল হয়ে পড়ে। নতুন ঘরে স্থাপনের পরে নিজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় গাছ ঠিক মতো আলো বা সঠিক তাপমাত্রায় আছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল নাও থাকতে পারে। কিন্তু এগুলো গাছের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তাই বাসা পরিবর্তনের সময় ঝাঁকুনির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এবং দ্রুত নিজেকে নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সঞ্চালন ও সঠিক তাপমাত্রা দাবি রাখে। এগুলো নিশ্চত করতে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন, তিনি।

বাড়তি পুষ্টি

ঝাঁকুনির ফলে গাছ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় দুর্বলতা কাটাতে এবং দ্রুত চাঙ্গা করে তুলতে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ সার দেওয়া প্রয়োজন।

সময় দেওয়া

মানুষের মতো গাছেরও নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়। তাই নতুন জায়গায় গাছের ঠিকঠাক পরিচর্যা চালিয়ে গেলেও তাকে নতুনভাবে সতেজ হয়ে উঠতে কিছুটা সময় দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন, হ্যারিস।

আরও পড়ুন