সুস্বাদু খাবার খাওয়াটা মজার হলেও কোন খাবারটা খাবেন তা বেছে নেওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্যই। আর পুরো পরিবারের জন্য খাবার তৈরির ক্ষেত্রে রান্নার পদ বেছে নেওয়াটা আরও কঠিন কাজ।
প্রতিদিন একই খাবার বা সপ্তাহের সাতদিনের খাবারের রুটিন বেঁধে নেওয়া সহজ মনে হতে পারে। কিন্তু সমস্যা আছে সেখানেও। আর সমস্যাটা মূলত হবে অন্ত্রে। এমনকি তা স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও।
দক্ষিণ ক্যারোলাইনা’ল ‘গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট’ এই ‘ফাইবার ফুয়েলড’ বইয়ের রচয়িতা ডা, উইল বুলশেইজ ‘ওয়েল অ্যান্ড গুড’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “অন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য আপনার সবচাইতে উপযোগী করণীয় হবে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ খাবার। খাদ্যাভ্যাসে উদ্ভিজ্জ উৎসের খাবারের যত বেশি ভিন্নতা থাকবে, ততই আপনার অন্ত্র ভালো থাকবে।”
কিংস কলেজ লন্ডন’য়ের ‘এপিডেমিওলজিস্ট’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাইক্রোবায়োম হেল্থ কোম্পানি জোই’র প্রতিষ্ঠাতা টিম স্পেকটর বলেন, “আমার নিজের ছেলের ওপরই গবেষণা চালিয়েছিলাম সেই ২০১৫ সালে। ১০ দিন শুধুই ম্যাকডোনাল্ডস’য়ের খাবার খাওয়াই তাকে। সেই সময় এই গবেষণা চালানোর কারণে তার অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়া বৈচিত্র্যে যে বিশৃঙ্খলা এসেছিল তা আজও ঠিক হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “গবেষণা শুরুর চারদিনের মাথায় আমার ছেলের স্বাস্থ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাই। সে নিজেই আমাকে অনুরোধ করে গবেষণা বন্ধ করার জন্য। কারণ তার শরীর ভালো লাগছিল না। আমার ছেলে দুর্বল হয়ে পড়ছিল, তার বন্ধুরা নাকি বলেছে তার চেহারা ফ্যাকাশে মনে হয়। গবেষণার চারদিনের মাথায় তার আবারও ‘মাইক্রোবায়োম টেস্ট’ করানো হয়। দেখা যায় ব্যাক্টেরিয়ার বৈচিত্র্য কমে গেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। তারপরও আরও ছয়দিন এই গবেষণা চালানো হয়।”
তিনি আরও বলেন, “পুষ্টিগুণ কম এ্মন খাবারগুলোতে চিনি, তেল ও ‘অ্যাডিটিভ’ থাকে যা অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে, আর ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার বংশবিস্তারে সহায়তা করে। এই খাবারগুলো প্রতিদিন খেতে থাকলে শরীরের কর্মশক্তি কমে যায়, ‘ব্রেইন ফগ’ বা মাথা ঘোলাটে অনুভূতি হয়, হজমের সমস্যা দেখা দেয় প্রচণ্ড মাত্রায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে সহজেই রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। দীর্ঘমেয়াদে তা এমন খাদ্যাভ্যাস ডেকে আনতে পারে স্থায়ী শারীরিক সমস্যা।”
এত গেল অস্বাস্থ্যকর খাবার প্রতিদিন খাওয়ার পরিণতি। একই স্বাস্থ্যকর খাবার যদি প্রতিদিন খাওয়া হয় তাহলে কী হবে?
ডা. স্পেকটর বলেন, “প্রতিদিনই যদি কপির সালাদ খান তাতেও অন্ত্রের ব্যাক্টেয়িরার বৈচিত্র্য নষ্ট হবে। তবে ভিন্ন ভিন্ন উপকরণের সালাদ যদি প্রতিদিন খাওয়া হয় তবে অবশ্যই উপকার পাবেন।”
তো খাদ্যাভ্যাসে কেমন বৈচিত্র্য আনতে হবে যা অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়াতেও ভিন্নতা তৈরি করবে?
ডা. স্পেকটর এ বিষয়ে বলতে গিয়ে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া স্যান দিয়েগো স্কুল অফ মেডিসিন অ্যান্ড কোলাবোরেটর্স’য়ের করা একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করেন।
মোট ১১ হাজার মানুষের ওপর পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সবচাইতে উপকারী হবে যদি একজন মানুষ প্রতি সপ্তাহের ৩০ ধরনের উদ্ভিজ্জ খাবার খায়। প্রথমেই ব্যাপারটা শুনে ধাক্কা লাগতে পারে। তবে যখন আপনি চিন্তা করবেন কতগুলো উদ্ভিজ্জ খাবার বাজারে নিয়মিত পাওয়া যায়, তখন বুঝতে পারবেন ব্যাপারটা অতটা কঠিন নয়।”
সবজি, ফল, বীজ, বাদাম, শুঁটি, ‘হার্বস’ সবই উদ্ভিজ্জ খাবারের অংশ।
আরও পড়ুন