ঋতুরাজ বসন্তের জন্য এখন আর প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না, ক্যালেন্ডারের তারিখ গুনে শুরু হয় ফাল্গুনের যাত্রা।
তারপরও অলক্ষ্য রং লাগে কারণে অকারণে। রাজধানীবাসী একবার হলেও ঢুঁ দেয় শাহবাগ টিএসসির প্রাঙ্গণে।
ফাগুনের রং নিজের করে নিতে অথবা সঙ্গীর মন রাঙাতে ফুল আদান-প্রদানের প্রথা আজকের নয়। একে অপরের কাছে ভালোবাসা প্রকাশের জন্য অথবা সঙ্গীর মনটা খুশিতে ভরিয়ে দিতে ফুলমালা, ফুলের তোড়া ইত্যাদির প্রচলন রয়েছে।
শাহবাগের ফুলের দোকানে দেখা গেছে বাহারি রঙের ফুল, ফুলের তোড়া ও মালা। কেবল ভালোবাসা দিবসের অপেক্ষায় বসে নেই এই আয়োজন। মাসের শুরু থেকেই চলছে হরদম বেচাকেনা।
ফুল কিনতে এসেছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা বছর সঙ্গীকে ফুল দেওয়া আর বসন্তের ফুলের মাঝে ভিন্ন একটা আমেজ খুঁজে পান তারা।
মিরপুর থেকে এসেছেন ফুল কিনতে সেলিম শেখ।
আরেক ক্রেতা মনির বলেন, “এমনি মন চাইলো তাই ফুল নিয়ে যাব। কেবল ১৪ তারিখেই ফুল দিয়ে ভালোবাসা জানাতে হবে এমন না। আমি মাঝে মধ্যেই তাকে ফুল দেই। তবে ফাল্গুনের এই সময়টা একটু ভিন্ন রকম আবেদন রাখে।”
শাহবাগের ফুল বিক্রেতা রুবেল বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলের চাহিদা বরাবরই বেশি আর ১৩ ও ১৪ তারিখে চাপ খুব বেশি পড়ে। তবে সারা মাসই দেখা যায় ফুলের বেশ চাহিদা থাকে। আর এখন সবকিছুর তুলনায় মাথার ফুলের চাকতির চাহিদাটা বেশি।”
বসন্ত আর ভ্যালেন্টাইন’স দিবসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এই দিনগুলোতে ফুলের তোড়া আর মাথা চাকরি বানিয়ে বিক্রি করবে বলে জানান, এই ফুল বিক্রেতা।
ভালোবাসা দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল চকলেট উপহার দেওয়ার ব্যাপারটি আগে প্রচলিত ছিল না। ভালোবাসা প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন সম্পর্কেও বাঙালির খুব একটা ধারণা ছিল না। তাহলে তখন ভালোবাসার প্রকাশ হত কীভাবে?
জোবেদা বলেন, “আমরা এমনিতেই নিজেদের মতো করে ভালোবাসার বছরপূর্তি পালন করতাম। ফুল দেওয়া, ছোট খাট কোনো উপহার দেওয়া এইসব আরকি। এখন তো দেখি এই দিন নিয়ে বেশ ঘটা করে আয়োজন করা হয়। ছেলেমেয়েরা অনেক আয়োজন করে। আবার হোটেলগুলোতেও নানান রকমের অফার থাকে। এসব দেখে আমাদের পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে, ভালোই লাগে ভাবতে।”
ভালোবাসাকে নির্দিষ্ট দিনে আটকে না ফেলে বরং সব সময়ই যদি তার প্রকাশ ঘটানো যায় তাহলে সম্পর্কে ভালো থাকে বলে মনে করেন, এই দম্পত্তি।
ধানমণ্ডির নার্সারির একজন বিক্রেতা মাসুন বলেন, “শীতকাল আসলে মানুষজন বাসার জন্য ফুল, পাতাবাহারে কিনে থাকে। আর ফাগুন মাসে চাহিদাটা বাড়ে।”
“চাহিদা অনুযায়ী ছোট বড় নানান রকমের টব, প্লাস্টিক ও মাটির টবও বিক্রি করে থাকি আমরা।”
ফাল্গুন মাস তার ওপর ভালোবাসার মাস- সাজসজ্জায় এর একটা ছাপ তো পড়বেই।
লাল, হলুদ কমলা রংয়ের শাড়ি, হাতে চুড়ি, ফুলের অলঙ্কার এই নিয়ে ফাল্গুন উদযাপন। তারই পসরা দেখা যায় নানা নশপিং মল, এমনকি রাস্তার দোকানগুলোতেও।
কাচের চুড়ি ছাড়া ফাল্গুনের সাজ যেন অপূর্ণ থেকে যায়। টিএসসির মোড়ের একজন চুড়ি বিক্রিতা মতিয়া আক্তার বলেন, “এখানে সারাবছরই আমরা চুড়ি বিক্রি করি। তবে এই বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে বেচা-কেনা তুলনামূলক বেশি হয়। অনেকে ঘুরতে এসে চুরি কিনে নিয়ে যায়, অনেকে আবার বান্ধবীকে চুড়ি কিনে দেয়। মোটামুটি ভালোই চাহিদা থাকে।”
অনেকেই চান ফাল্গুনের ছোঁয়া লাগুক ঘরের সাজে। এমন চাহিদা পূরণ করতে রাজধানীর দোয়েল চত্বরে দেখা মিলে কিছুটা ভিন্ন মাত্রার ও স্বাদের মাটির-বেতের জিনিসপত্র ও নানারকমের লাইট।
ক্রেতা নওরীন সুলতানা ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন এসব দোকানের জিনিসপত্র।
জিজ্ঞেস করতেই বললেন “এখানে কাঠের চুড়ি ও বাঁশের তৈরি গহনা কিনতে এসেছি। এছাড়া পছন্দ হলে ঘরের সাজ এর জন্য জিনিস কিনবো।”
ছবি: নয়ন কুমার।