ত্বকের শুষ্কতা, লালচেভাব বা জ্বলুনির সমস্যা থাকলে অনেকে তাকে সংবেদনশীল ত্বক মনে করেন।
Published : 10 Feb 2022, 05:24 PM
তবে বিষয়টা সবক্ষেত্রে সত্যি নয়।
নিউ ইয়র্ক’য়ের বোর্ড প্রত্যয়িত ত্বক বিশেষজ্ঞ ডেভিড ওরেন্ট্রিক ত্বকের সংবেদনশীলতা ও শুষ্কতার সমস্যায় দুই ধরনের ত্বকের কথা উল্লেখ করেন ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
‘স্যানিটাইজড স্কিন’ আসলে কী?
সংবেদনশীল ত্বকের মতোই লালচে, খসখসে, জ্বলুনি এবং অস্বস্থিকর এবং সর্বপরি দুর্বল সুরক্ষার স্তর বিশিষ্ট ত্বক হল ‘স্যানিটাইজড স্কিন’।
তবে এই দুই ধরনের ত্বকের মধ্যে পার্থক হল- ‘সেন্সিটিভ’ বা সংবেদনশীল ত্বক অনেকটাই বংশগত এবং একজিমা, রোসেসিয়া এবং জ্বলুনি হওয়া এর লক্ষণ।
অন্যদিকে, স্যানিটাইজড স্কিন হল বাইরের কোনো প্রসাধনী বা পরিবেশের কারণে হওয়া ত্বকের ক্ষতির ফলাফল। যেমন- রেটিনল বা এক্সফলিয়েটিং অ্যাসিড ব্যবহারের কারণে ত্বকের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি।
নিউ ইয়র্ক’য়ের আরেক ত্বক বিশেষজ্ঞ ‘শোয়েগার ডার্মাটোলজি গ্রুপ’য়ের ত্বক বিশেষজ্ঞ র্যাচেল নাজারিয়েন বলেন, “সংবেদনশীল ত্বকের বৈশিষ্ট হল বিভিন্ন কারণে অস্বস্তি হতে পারে। অন্যদিকে ‘স্যানিটাইজড স্কিন’ চামড়ার আবরণের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সাধারণত ক্ষণস্থায়ী অস্বস্তি তৈরি করে।”
তিনি ব্যাখ্যা করে আরও বলেন, “ত্বক যখন নিজে থেকে বাইরে পরিবেশের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না অর্থাৎ সুরক্ষার স্তর ভেঙে যায় তখন ত্বকে সংবেদনের নানারূপ সমস্যা দেখা দেয়।”
স্যানিটাইজড ত্বকের যত্ন
এই সম্পর্কে ডা. নাজারিয়ান মনে করেন, সুগন্ধিমুক্ত মৃদু ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা এবং ত্বকের সুরক্ষার স্তর ভালো রাখে এমন ক্রিম ব্যবহার করা উপকারী।
ডা. ওরেন্ট্রিক, ত্বকের যে কোনো প্রসাধনী ব্যবহারের আগে ‘প্যাচ টেস্ট’ করে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এতে ত্বকের কোনো সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকলে তা আগে থেকেই সতর্ক হওয়া যায়।
‘স্যানিটাইজড স্কিন’য়ে নিচের উপাদানগুলো ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞরা।
সুগন্ধি
সুগন্ধি-সমৃদ্ধ পণ্য স্যানিটাইজড ত্বকের জন্য খারাপ। ‘আমেরিকান অ্যাক্যাডেমি অফ ডার্মাটোলজি (এএডি)’ অনুযায়ী প্রসাধনীতে ব্যবহৃত সুগন্ধি ত্বকে অস্বস্তি, লালচে ভাব ও প্রদাহ বাড়ানোর জন্য দায়ী।
এছাড়াও এটা ত্বকের সুরক্ষার স্তর ভেঙে দেয়। ফলে তা প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারে না বলে জানান, ডা. নাজেরিয়ান।
এই ধরনের ত্বকে সুগন্ধি, সাবান অথবা এ ধরনের পণ্য ব্যবহার আরও অস্বস্তি ও প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে এবং ত্বকের অবস্থা আরও খারাপ করে। তাই যতটা সম্ভব সুগন্ধি ও রাসায়নিক উপাদানহীন পণ্য ব্যবহার করা উচিত।
সুগন্ধি মিশ্রিত পণ্য খুব বেশি পছন্দ হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সুগন্ধি যেমন- রোজমেরি, ল্যাভেন্ডার এসব উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে। এইগুলো ত্বকের জন্য কম ক্ষতিকর।
রেটিনল
কোষের পূনর্গঠনের জন্য, কোলাজেন ও ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে রেটিনল ব্যবহার করা হয়। যা মূলত ভিটামিন এ থেকে তৈরি হয়। আর তা বেশ উপকারী।
তবে এটা ‘স্যানিটাইজড স্কিন’কে আরও বেশি নাজুক করে তোলে। আর প্রাকৃতিক-ভাবে এর আরোগ্য ক্ষমতা ক্রমশ কমতে থাকে।
অ্যাসিডস
ত্বক স্যানিটাইজড হয়ে থাকলে এক্সফোলিয়েটিং অ্যাসিড যেমন- গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, ম্যান্ডালিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন ডা. নাজারিয়ান।
এগুলো ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বকের সুরক্ষাযর স্তর ভেঙে দেয়। ফলে তা পরিবেশের সঙ্গে বিরূপ প্রতিক্রিয়া করে।
মনে রাখতে হবে ভিটামিন সি এক ধরনের অ্যাসিড। তাই এগুলো ব্যবহার না করে ত্বকে একই কাজ করে কিন্তু ত্বকের জন্য মৃদু এমন উপাদান যেমন- নিয়াসিনামাইড সমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহারের পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
কেমিক্যাল এসপিএফ
সূর্যরশ্মি থেকে ত্বক বাঁচাতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। কিন্তু যদি রাসায়নিক উপাদান যেমন অ্যাভোবেনঞ্জন, অক্সিবেনঞ্জন, অ্যাকামসুল ও অক্টোক্রাইলি ধরনের উপাদান সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা হয় তবে তা ত্বকে স্যানিটাইজেশন সৃষ্টি করে বলে জানান, ডাক্তার অরেট্রিক।
তিনি ‘স্যানিটাইজড’ ত্বকের অধিকারীদের জন্য মিনারেল এসপিএফ যেখানে জিংক অক্সাইড বা টিটানিয়াম ডাই-অক্সাইড ধরনের উপাদান রয়েছে যা ত্বককে জ্বলুনি ও অস্বস্তি থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।
আর যে সানস্ক্রিন ত্বকে সইবে সেটাই ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
আরও পড়ুন