নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে থাকা যেসব বিষয় খেয়াল করা জরুরি

চাকরিটা সুবিধাজনক হবে কি-না তা বোঝার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কিছু বিষয় খেয়াল রাখা দরকার।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2022, 08:35 AM
Updated : 18 Jan 2022, 08:35 AM

নতুন একটা চাকরির আবেদন থেকে শুরু করে চাকরির প্রথম দিন পর্যন্ত প্রার্থী ও প্রতিষ্ঠান দুই পক্ষকেই অনেকগুলো ধাপ পার করতে হয়। তাই প্রার্থী হিসেবে যে নতুন চাকরির পেছনে সময় ও অর্থ খরচ করবেন, সেই চাকরিটা আপনার জন্য উপযুক্ত কি-না সেটা যাচাই করে নেওয়াটাও জরুরি।

উপযুক্ত চাকরি খুঁজে নেওয়ার জন্য আবেদন পর্যায়েই যাচাই বাছাই করাটা দরকার। আর তা করার জন্য ‘জব ডেসক্রিপন’ বা কাজের বিরবনী হতে পারে মোক্ষম উপায়।

ফেইসবুক, স্ন্যাপচ্যাট ও উবার’য়ের জন্য কর্মী যাচাই করার দায়িত্ব পালন করতেন যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী ম্যাডি নোয়ে। বর্তমানে তিনি ‘ট্যালেন্টড্রপ’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা, যার কাজ হল প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী খুঁজে বের করা।

‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ম্যাডি নোয়ে জানিয়েছেন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে থাকা কাজের বিবরনী থেকে তার ভালো ও মন্দ দিকগুলো যাচাই করার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে।

পদবি আর কাজের মধ্যে মিল নেই

নোয়ে বলেন, “যে পদের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে, কাজের দায়িত্বগুলো সেই পদের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়া উচিত। তা যদি না হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে চাকরিটাকে যেমন ভেবেছিলেন তেমনটা নাও হতে পারে।”

অনেকসময় প্রতিষ্ঠানগুলো একটি ছোট পদকে এমনভাবে উপস্থাপন করে যাতে তাকে একটি বড় পদবি মনে হয়। এর পেছনে উদ্দেশ্য থাকে মেধাবি বা অভিজ্ঞ কর্মীদের আকৃষ্ট করা। তবে এই পদ্ধতিতে নিয়োগ পাওয়া একজন কর্মী কয়েক মাস পরেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কারণ সেই কর্মী কোনো ‘ক্যারিয়ার গ্রোথ’ অনুভব করেন না।

আবার উল্টোটাও হতে পারে।

যেমন বড় পদবিতে নিয়োগ দেওয়া একজন কর্মীকে দিয়ে প্রতিষ্ঠান ছোট পদের কাজ করিয়ে নেওয়ার পায়তারা করতে পারে। এতে অভিজ্ঞ কর্মী কাজে যোগ দেওয়ার পর অপমানিত বোধ করতে পারেন।

পদ অনুযায়ী চাহিদা অনেক বেশি

নোয়ে বলেন, “একটি পদে আবেদন করার জন্য যদি প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো চাহিদা পূরণ করতে হয় তবে সেটাও একটা বড় ‘রেড ফ্ল্যাগ’। উপর্যুপরি চাহিদা থেকে বোঝা যায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা নিজেরাই নিশ্চিতভাবে জানেন না যে তাদের আসলে কেমন কর্মী প্রয়োজন এবং কীভাবে তারা কর্মী খুঁজে নেবেন।”

আবার এমনও হতে পারে খরচ কমানোর জন্য একাধিক কর্মীর দায়িত্ব একজনের কাঁধে চাপিয়ে দিতে চান কর্মকর্তারা। এমন একটি পদে নিয়োগ পেলেও একজন কর্মী কখনই উন্নতি করতে পারবেন না। কারণ শুরু থেকেই তার প্রতি প্রত্যাশার মাত্রাটা অবাস্তব পর্যায়ে।

তথ্যের ঘাটতি

যে প্রতিষ্ঠান একজন কর্মীর মেধাকে মূল্যায়ন করে তারা সেই কর্মীর চাহিদাগুলোকেও মূল্যায়ন করবে।

নোয়ে বলেন, “চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে কর্মস্থল কোথায়, বেতনভাতা কেমন, কার কাছে সরাসরি ‘রিপোর্ট’ করতে হবে, নিয়োগের ধরন কেমন (‘পার্ট-টাইম’, ‘ফুল-টাইম’, ‘কন্ট্রাক্চুয়াল’) এই বিষয়গুলো থাকা খুবই স্বাভাবিক এবং আবশ্যক। আর সেই পদের জন্য আবেদন করতে কী করতে হবে, কেমন যোগ্যতা প্রয়োজন তা নির্ধারিতভাবে লেখা থাকবে সেই বিজ্ঞপ্তিতে।”

পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়া কেমন হতে পারে সেটারও বিস্তারিত উল্লেখ থাকা উচিত। এই বিষয়গুলোর কোনোটাই যদি না থাকে হবে তবে প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক।

ধরা বাঁধা কাজ

একজন কর্মী হিসেবে কর্মক্ষেত্রে অনেকগুলো কাজই আপনাকে করতে হবে। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কাজের বিবরণীতে সেই কাজগুলোই যদি তুলে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো নতুনত্ব আনার সুযোগ না থাকে তবে সেই কাজ ‘ক্যারিয়ার’য়ের কোনো উন্নতি বয়ে আনবে না, কাজেও আপনি কোনো সন্তুষ্টি পাবেন না।

কর্মী হিসেবে আপনি চাইবেন এক মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে। তার বদলে মোট কর্মীদলের মধ্যে একটি সংখ্যা কিংবা পুরো কর্ম পদ্ধতির একটি ছোট্ট অংশ হিসেবে পড়ে থাকতে নিশ্চয়ই চাইবেন না।

তাই কাজের বিবরণী পড়ে এই ব্যাপারগুলো বুঝে নিতে হবে এবং আপনার ‘ক্যারিয়ার’য়ের প্রত্যাশার সঙ্গে এই কাজ মেলে কি-না তা যাচাই করে নিতে হবে।

নোয়ে বলেন, “কাজে যোগ দেওয়ার আগে দুটি বিষয় আপনাকে জানতে হবে। প্রথমত, কর্মী হিসেবে আপনাকে কী করতে হবে। দ্বিতীয়ত, তা থেকে আপনি নিজে কী শিখবেন, কী অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন ইত্যাদি।”

অতিরিক্ত চাহিদা

নোয়ে বলেন, “একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পেছনে শুধু পয়সা পাওয়াটাই যথেষ্ট হওয়া উচিত নয়। প্রতিষ্ঠান যেমন আপনার কাজ থেকে মুনাফা অর্জন করবে তেমনি সেই কাজের মধ্য থেকে পয়সার পাশাপাশি যোগ্যতার ব্যাপ্তিটাও বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। আর দুই পক্ষের চাওয়া-পাওয়ার মিল হলেই চাকরি হওয়া উচিত।”

তবে চাকরিটা পেতে যদি অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় তবে সেটাও একটা চিন্তার বিষয়। বিনা বেতনে ‘প্রোবেশন পিরিয়ড’, ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ করা, একাধিক ‘ইন্টারভিউ’, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা এসব মিলিয়ে কর্মী নির্বাচন প্রক্রিয়া যদি অনেক সময় সাপেক্ষ হয়, তবে ধরে নিতে পারেন দীর্ঘমেয়াদে এই প্রতিষ্ঠানে আপনি নিজেই কাজ করতে চাইতেন না।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন