হারানো ভালোবাসার মানুষের ওপর থেকে মায়া কাটানোর পন্থা

পছন্দের মানুষের কাছ থেকে একইরকম সারা না পাওয়া কষ্টের বিষয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2022, 10:53 AM
Updated : 12 Jan 2022, 10:53 AM

এমন ঘটনা মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। আর ছেড়ে যাওয়া ভালোবাসার মানুষের ওপর থেকে মায়া কাটাতেও বেশ কাঠ খড় পোড়াতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘লাভ ডিসকোভারি ইন্সটিটিউট’য়ের সহকারী প্রতিষ্ঠাতা এবং যৌন-সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ক্যারোলিনা পাটাকি বলেন, “সম্পর্কে অবনতি ঘটলে অথবা কাছের কাউকে হারিয়ে ফেলার পরে মানুষ হিসেবে আমরা সাধারণভাবেই নিজেদের ওপর দোষারোপ করে থাকি। এতে কষ্ট আরও বাড়তে থাকে।”

ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “তাকে ভোলা আরও কষ্টকর হয়ে যায়। তাই বাস্তবতা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করার প্রয়োজন।”

অনুভূতির সঙ্গে যুদ্ধ নয়

যুক্তরাষ্ট্রের ‘বুক্সানি কাউন্সেলিং কেয়ার’য়ের প্রতিষ্ঠাতা রচনা বুক্সানি মিরপুরি বলেন, “অনুভূতি অনেকটা চোরাবালির মতো। এর সঙ্গে যতই যুদ্ধ করা হবে ততই এর গভীরে তলিয়ে যেতে হয়।”

তার মতে, বিচ্ছেদের খারাপ অনুভূতির সঙ্গে যুদ্ধ না করে বরং এর কারণে হওয়া দুঃখ, একাকিত্ব এবং মন খারাপের মতো অনুভূতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিলে দীর্ঘদিন এই কষ্টের বোঝা বয়ে বেড়াতে হয় না।

অনুভূতির প্রকাশ

অনুভূতির প্রকাশ ঘটে কান্না, চিৎকার ইত্যাদির মাধ্যমে।

পাটাকির মতে, “ব্যর্থ সম্পর্কে শারীরিক ও মানসিক খারাপ লাগার অনুভূতি হওয়া স্বাভাবিক এবং তা প্রকাশের জন্য কান্না, দুঃখ বা অন্যান্য কষ্টের অভিব্যক্তি প্রকাশের প্রয়োজন হলে তাতে দ্বিধা করা ঠিক নয়।”

কান্না করা

পাটাকি ব্যাখ্যা করে বলেন, “আবেগ প্রকাশের জন্য কান্না সবচেয়ে বেশি উপকারী। কারণ এর মধ্য দিয়ে মানসিক চাপ, খারাপ লাগা ও অন্যান্য খারাপ অনুভূতি প্রকাশিত হয়। তাই নিজের শরীর থেকে চাপ কমাতে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো উচিত।”

নিজের প্রতি ধৈর্য্যশীল থাকা

‘ইনশুয়েটিভ রিলেশনশিপ হিলার অ্যান্ড সৌলমেট মিডিয়াম’য়ের ব্রিয়েনা কোলেট বলেন, “অন্যের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে সময়ের প্রয়োজন। বিচ্ছেদের অনুভূতি অনেকটা মৃত্যুর মতোই।”

পছন্দের কাউকে হারানো, পরিবার থেকে আলাদা হওয়া, বন্ধু ও আত্মীয় থেকে বিচ্ছেদ ইত্যাদির মতো যন্ত্রণার সঙ্গে তাল মেলাতে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করা ও ধৈর্য্য ধরা প্রয়োজন।

আবেগজনিত সমস্যা শারীরিক ক্ষতির কারণও হতে পারে।

নিজেকে ক্ষমা করা

পাটাকি মনে করেন, বিচ্ছেদের পরে নিজেকে ও অন্যকে ক্ষমা করতে পারার মতো মানসিকতা তৈরি করা প্রয়োজন। না হলে এই যন্ত্রণার অবসান ঘটে না। আর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।

তিনি আরও বলেন, “অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে মানুষ বিচ্ছেদের পরে নিজেকেই বেশি দোষারোপ করতে থাকে যা যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দেয়। তবে মনে রাখা প্রয়োজন সবকিছু আসলে আমাদের হাতে থাকে না। তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা ও পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ওঠার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে।”

নিজের যত্ন

বুক্সানি মিরপুরি বলেন, “বিচ্ছেদের পরে অধিকাংশ মানুষই নিজের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন যা করা ঠিক নয়। নিজের মন ও শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়ার জন্য ধ্যান শরীরচর্চা ও মাঝেমধ্যে কাজের ফাঁকে বিরতি নিয়ে নিজের সঠিক পরিচর্যা করা এ যন্ত্রণা অনেকটাই কমাতে সাহায্য করে।”

বন্ধুমহল তৈরি করা

পাটাকি পরামর্শ দেন, “বিচ্ছেদের পরে নিজেকে বন্ধুমহলে ব্যস্ত রাখা উপকারী। এই সময় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সময় ব্যয় নিজের কষ্ট ভোলাতে ও মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। আপনি যে পুনরায় সুখী হতে পারেন সেই রকম পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করে।”

নিজেকে বোঝানো

বুক্সানি মিরপুরি বলেন, “বিচ্ছেদের পরে সঙ্গীর খুব কাছাকাছি থাকতে না চাওয়া এবং জীবনে যা ঘটেছে তা সহজে মেনে নেওয়ার মতো মনোভাব তৈরি করতে প্রয়োজন অন্যান্য সঙ্গীদের সঙ্গ।”

প্রাক্তন, যে আর আপনার জীবনের অংশ নয় এবিষয়ে নিজেকে বোঝাতে হবে। নিজের কষ্ট ও বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো মানসিক অবস্থা তৈরিতে বন্ধু্মহল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন