যেসব খাবার চল্লিশের পর স্মৃতিশক্তি ধারালো করে

মানসিক চাপ, ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2021, 10:09 AM
Updated : 13 Sept 2021, 10:09 AM

আর এসব কারণে বৃদ্ধ হওয়ার আগেই স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও উপযুক্ত খাদ্যতালিকা এই গতি ধীর করতে পারে। এছাড়াও শরীরচর্চা, মানসিক চাপ কমানো, পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি স্মৃতিশক্তির তারুণ্য বজায় রাখতে সক্ষম।

বিএমজে সাময়িকীতে ২০১২ সালে প্রকাশিত ফ্রান্সের ‘হোপিটাল পল ব্রুসে’র ‘ইনসেরাম সেন্টার ফর রিসার্চ ইন এপিডেমিওলজি অ্যান্ড পপুলেশন হেল্থ’য়ের করা গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স পঁয়তাল্লিশের শুরুর পর্যায়ে জ্ঞানীয় ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে।

আর ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়া’র ‘ডিপার্টমেন্ট অফ সাইকোলজি’র গবেষণা অনুযায়ী, বয়স ২০ বা ৩০’য়ের শুরুতে স্মৃতি শক্তি হ্রাস পাওয়া শুরু করে।

তবে এই নিয়ে ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী কয়েকটি খাবার সম্পর্কে জানানো হল যা বয়স চল্লিশের পরে স্মৃতিশক্তি শাণিত রাখতে সহায়তা করে। 

বিট: যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ নিকোল স্টেফানো’র মতে, চল্লিশ বছর বয়সের পরে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য বিট একটি দুর্দান্ত খাবার।

ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “বিট প্রাকৃতিক রঞ্জক বিটালাইনস সমৃদ্ধ যা  জারণের চাপ ও প্রদাহের কারণে মস্তিষ্কের অকাল বার্ধক্য ও স্মৃতিভ্রংশ হ্রাস করতে সাহায্য করে।”

তৈলাক্ত মাছ: ‘দ্য স্পোর্টস নিউট্রিশন প্লেবুক’য়ের লেখক ও ডালাস-ভিত্তিক অ্যামি পুষ্টিবিদ গুডসন বলেন, “মস্তিষ্ক ওমেগা-থ্রি চর্বি ব্যবহার করে বুদ্ধি এবং স্নায়ুকোষ তৈরি করে, যা শেখার এবং স্মৃতিশক্তির জন্য অপরিহার্য।”

তাই, মস্তিষ্কের উর্বরতা বাড়ানোর খাবার তালিকায় স্যামন, ট্রাউট ও টুনা মাছ শীর্ষে অবস্থান করছে।

‘ডিশ অন ফিশ’য়ের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ এবং ব্লগার রিমা ক্লেইনারের মতে, স্যামন ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ‘ডিএইচএ’ এবং ‘ইপিএ‘য়ের ভালো উৎস।

ক্লেইনার বলেন, “ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদস্বাস্থ্য, মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বাড়ায় এবং এর ‘ইপিএ’ মস্তিষ্কের কোষের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।

তিসির বীজ: তিসির বীজ প্রোটিন ও আঁশের ভালো উৎস। এছাড়াও এটা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বেশ উপকারী।

“তিসির বীজ ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড (এএলএ) সমৃদ্ধ” বলেন, ‘টু দ্যা পয়েন্ট নিউট্রিশন ডটকম’য়ের কর্ণধার ও নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ র‍্যাচেল ফাইন।

তিনি আরও বলেন, “এএলএ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে ইপিএ এবং ডিএইচএ, এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ওমেগা-থ্রি তে রূপান্তরিত হয়। যা মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।”

ফাইন আরও বলেন, “তিসি হজম করতে ও পূর্ণ গুণাগুণ পেতে তা গুঁড়া করে খাওয়া উচিত। তিসির বীজ নানা রকমের স্মুদি, প্যানকেক বা ঘোল হিসেবে খাওয়া যায়।”

কাঠ-বাদাম: ক্যালিফোর্নিয়ার নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ অ্যাশলি লারসসেন, বিশ্বাস করেন, বাদাম ও বীজ থেকে পাওয়া স্বাস্থ্যকর চর্বি মস্তিষ্ক শাণিত করতে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। 

তার মতে, “কাঠ বাদাম উচ্চ মনোআনস্যাচুরেইটেড চর্বি সমৃদ্ধ। যা কেবল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় না বরং জ্ঞানীয় কার্যকারিতাও সক্রিয় রাখে।”

লারসেন, ৪৮০ জন বয়স্ক নারীদের ওপর ‘বেথ ইসরায়েল ডিকোনেস মেডিকেল সেন্টার’য়ের করা গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, “যারা বিগত তিন বছর ধরে মনোআনস্যাচুররেইটেড অ্যাসিড খাবার তালিকায় রেখেছিলেন তাদের জ্ঞানীয় ক্ষমতা কম হ্রাস পেয়েছিল।”

ব্রকলি ও অন্যান্য কপি-ধরনের সবজি: যুক্তরাষ্ট্রের, লুজিয়ানা’র পুষ্টিবিদ লি জ্যাকসনের মতে, ব্রকলি ও কপি-জাতীয় সবজি যেমন- ফুলকপি, বাঁধাকপি, কপি ও অঙ্কুরিত ব্রাসেলস মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

“ব্রকলি উচ্চ সালফোরাফেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। আর দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ক্ষয়ের জন্য দায়ী” বলেন, জ্যাকসন।  

এছাড়াও, ব্রকলি আঁশ সমৃদ্ধ হওয়ায় তা নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে বলে জানান, জ্যাকসন।

জলপাইয়ের তেল: মস্তিষ্ক সচল রাখতে মাখনের বদলে জলপাইয়ের তেল খাওয়ার পরামর্শ দেন লারসেন।

তিনি বলেন, “জলপাইয়ের তেল স্বাস্থ্যকর চর্বি ও পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা মস্তিষ্কের জারণের চাপ ও ক্ষয় কমাতে সহায়তা করে।”

তিনি, সবজি বা মাংস রান্নায় অথবা সালাদ পরিবেশনের সময় জলপাইয়ের তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

আরও পড়ুন