ভ্রমণে যে অভ্যাসগুলো বিরক্তির কারণ ঘটায়

নিজেই যেন বিরক্তিকর ভ্রমণ-সঙ্গী না হন, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2021, 05:16 PM
Updated : 9 Sept 2021, 05:16 PM

দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর রোমাঞ্চ কার না ভালো লাগে। তবে বেড়াতে গিয়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে যেমন পরিচয় হয় তেমন তাদের বিভিন্ন বিরক্তিকর অভ্যাসও চোখে পড়ে।

আর আপনার নিজেরও কিছু অভ্যাস থাকতে পারে যা অজান্তেই অন্যদের বিরক্তির কারণ হয়।

ভ্রমণে বের হয়ে একজন ভ্রমণকারীর যে অভ্যাসগুলো অন্যদের বিরক্তির কারণ হতে পারে তার কয়েকটি নমুনা দেওয়া হল ‘বেস্টলাইফ’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে।

ভাষার বিড়ম্বনা: দেশের মধ্যেই কোনো অঞ্চলে বেড়াতে গিয়ে ওই এলাকার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার চেষ্টা কমবেশি সবাই করেন। আর বিদেশি ভাষায় ক্ষেত্রে মাতৃভাষার বাংলার পর ইংরেজি আর হিন্দিতেই আমাদের দখল বেশি।

তবে কথায় আছে এক দেশের গালি আরেক দেশের বুলি। বেড়াতে গিয়ে সামান্য জ্ঞান নিয়ে আঞ্চলিক ভাষা বলা কিংবা বিদেশি ভাষা বলার সময় এই প্রবাদটা ভালোভাবে মাথায় রাখা উচিত।

কারণ আপনার উচ্চারণের ভুলের কারণে আপনার নিষ্পাপ কোনো কথাও অপরজনের জন্য অপমানজনক হতে পারে। 

বেড়ানো নিয়ে গালগল্প: দলবেঁধে বেড়াতে গেলে দলের অন্যান্যদের অভিজ্ঞতার গল্প শুনতে সবসময়ই যে খারাপ লাগে তা নয়। নতুন কিছু দর্শনীয় স্থানের কথা জানা যায় ওই গল্প থেকে, শেখাও যায় অনেক কিছু।

তবে কারও গল্পের উদ্দেশ্যটা যদি এমন হয়, মানুষকে জোর করে শোনাচ্ছেন যে আপনি অনেক দেশ বিদেশ ঘুরেছেন, তবে মানুষ আপনার প্রতি বিরক্ত হবে। আপনি হয়ত ভাবছেন আপনার ঘুরে বেড়ানোর গালগল্প শুনে সবাই আপনাকে দারুণ কিছু ভাবছে।

তবে আসলে তারা আপনার প্রতি রাগান্বিত হচ্ছে।  

সেলফি: বেড়াতে গিয়ে ছবি তো তুলবেনই। তবে সেসময় আশপাশের মানুষগুলোর অসুবিধা হচ্ছে কি-না সেদিকেও নজর রাখা উচিত।

যেমন- কোনো দর্শনীয় স্থানের একটি বিশেষ অংশ যেখানে অধিকাংশ মানুষই একটা ছবি তুলতে চান ঠিক আপনার মতোই। এসব স্থানে চট করে একটা দুটো ছবি ‍তুলে নিয়ে বাকি মানুষগুলোকেও ছবি তোলার সুযোগ দেওয়া উচিত। আর ছবি তোলারও একটা সীমা থাকা উচিত।

বেড়াতে গিয়ে মুহুর্মুহু ছবি তুলতে থাকলে আপনি নিজে যেমন ওই স্থানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন না তেমনি সঙ্গীরাও আপনার জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বে।

পোশাক: বেড়াতে যাওয়া সময় মানুষ ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক পরবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সেই পোশাকটাও ভদ্র হওয়া সম্ভব।

যা পরে ঘুমিয়ে ছিলেন তাই পরে বেরিয়ে যাওয়াটা মোটেও ‍বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যানবাহনে অনেকগুলো মানুষ একটা লম্বা সময় একটি নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ থাকেন।

সেই পরিবেশে পরিষ্কার ও ভদ্র পোশাক পরা জরুরি।

বাড়ির সঙ্গে তুলনা: প্রতিটি মানুষ তার বাড়ি ও আশপাশের পরিবেশের সঙ্গে অভ্যস্ত। সেখানেই সে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। আর সেকারণেই দিনশেষে সবাই নিজ এলাকাতেই ফিরতে চায়।

তবে বেড়াতে গিয়ে যদি নতুন স্থান ও পরিবেশের সঙ্গে নিজের এলাকার সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে মানুষ আপনার প্রতি বিরক্ত হবেই।

শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে গিয়ে শহরের সুযোগ সুবিধাগুলো নেই বলে অভিযোগ করেন, তবে আপনার সেখানে বেড়াতে না যাওয়াই শ্রেয়।

ভিন্ন খাবারে অনিহা: আমেরিকায় বেড়াতে গিয়ে যদি আপনি বলেন যে আপনার ডাল দিয়ে ভাত খেতে না পারলে চলবে না তাহলে তো বিপদ। আবার পাহাড়ে বেড়াতে দিয়ে যদি আপনি বার্গার খেতে চান তো সেখানেও বিপত্তি।

নতুন জায়গায় গিয়ে শুধু সেখানকার পরিবেশ নয় সেখানকার ভিন্ন ধরনে খাবার চেখে দেখার মধ্যেও রোমাঞ্চ লুকিয়ে আছে। 

অতিরিক্ত মালপত্র: বেড়াতে যাওয়া সময় ব্যাগ যত হালকা হবে ততই আপনার জন্য সুবিধা। বিদেশে বেড়ানো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মালপত্রের জন্য বাড়তি পয়সাও গুনতে হতে পারে।

তাই যে জিনিসগুলো না নিলেই নয়, শুধু সেগুলোই সঙ্গে নিন। মনে রাখতে হবে আপনি বেড়াতে যাচ্ছেন, সংসার পাততে নয়।

যানবাহনে জুতা মোজা খোলা: শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যানবাহন মানেই বদ্ধ জায়গা। সেখানে সামান্য গন্ধ হতে পারে বিপজ্জনক। কারণ তা সেখানেই ঘুরতে থাকবে পুরো সময় জুড়ে।

তাই বিমান কিংবা অন্যান্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যানবাহনে চড়ার পর জুতা মোজা খুলে ফেলাটা বোকামি হবে। তবে যদি আপনি নিশ্চিত থাকেন আপনার পায়ে দুর্গন্ধ হয় না সেক্ষেত্রে কথা ভিন্ন।  

যানবাহনের লোকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার: ব্যবহারেই বংশের পরিচয়, আর একটা যানবাহনে সব বংশের মানুষই থাকতে পারে।

বাসের সুপারভাইজার থেকে বিমানের ‘ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট’ পর্যন্ত সবাইকেই যাত্রী ফরমায়েশ মেটাতে হয়। তাই এই মানুষগুলোর সঙ্গে দুর্ব্যাবহার করবেন না। ধৈর্য্য রাখতে হবে, গলা উঁচু করা যাবে না।

আর এই মানুষগুলোর কথাও শুনতে হবে। বাসের জানালা দিয়ে হাত বের না করা থেকে শুরু করে বিমানের বিধিনিষেধগুলো মানতে হবে।

হোটেলে বসে থাকা: নতুন স্থানে বেড়াতে গিয়ে যদি হোটেলেই বসে থাকেন তো শহরেই কত হোটেল ছিল, সেখানে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হত।

দেশে হোক কিংবা বিদেশে, বেড়াতে গিয়ে হোটেলেই বসে থাকলে এর থেকে বোকামি হয়ত আর কিছু নেই। আর সঙ্গে আসা মানুষগুলোও এতে আপনার ওপর বিরক্ত হবেন।

কারণ এমন যদি হয় আপনার কারণে তারাও বাইরে ঘুরতে যেতে পারছে না। তবে নিজের বেড়ানো তো মাটি হলোই, সঙ্গে তাদেরটাও হলো পণ্ডশ্রম।

অতিরিক্ত পরিকল্পনা: বেড়াতে গিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ যদি হয় পূর্ব নির্ধারিত তবে সেখানে আর রোমাঞ্চ থাকে না। নতুন কোনো অভিজ্ঞতা আপনাকে চমকে দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। কারণ সবকিছুই আপনি আগে থেকেই জানেন।

তাই বেড়াতে যাওয়া ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিকল্পনা না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

অসুস্থ অবস্থায় বেড়ানো: আপনার শরীর যদি ভালো না থাকে তবে পরে বেড়াতে যান। কারণ আপনার অসুস্থতা ভ্রমণসঙ্গীর জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

আর যানবাহনের অন্যান্য মানুষগুলোও তাতে অসুবিধায় পড়বে। যাদের ভ্রমণ করলেই বমি হয় বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয় তাদের উচিত আগেই তার ব্যবস্থা নেওয়া। 

স্থানীয়দের সঙ্গে দুর্ব্যাবহার: বেড়াতে যাওয়া মানেই ভিন্ন পরিবেশ, সংস্কৃতি ও মানসিকতার মানুষের সঙ্গে মেলামেলা হবে। সেই ভিন্ন পরিবেশে গিয়ে ওই পরিবেশের মানুষগুলোকে নিয়ে হাসি তামাশা করাটা হবে প্রচণ্ড অপমানজনক।

আবার ক্ষেত্রবিশেষে তা আপনার নিজের জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন