ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট সবার জন্য হয়ত কার্যকর না

ক্যালসিয়াম ক্যাপ্সুল বা ট্যাবলেট সবার ক্ষেত্রে কাজ নাও করতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2021, 05:15 PM
Updated : 4 Sept 2021, 05:15 PM

ছোটবেলা থেকেই শুনে আসা- দুধ আমাদের ক্যালসিয়াম যোগায়, আর সেই ক্যালসিয়াম হাড়কে শক্তিশালী করে। সেজন্য খেতে ভালো না লাগলেও মায়ের চোখ রাঙানির ভয়ে গ্লাস ভরে দুধ পান করা হত।

বড় হওয়ার পর খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আর কেউ চোখ রাঙায়নি। ফলে নানান সমস্যার মাঝে দেখা দিয়েছে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও। সেই ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেছে না নিয়ে বরং জোর দেন ‘সাপ্লিমেন্ট’য়ের দিকে।

তবে ওই ‘সাপ্লিমেন্ট’ কি আসলেও হাড়ের উপকার করতে পারে?

ক্যালসিয়াম যে কারণে দরকার

ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতার তালিকার প্রথমটাই হল হাড়ের সুস্বাস্থ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর অস্টিওপোরোসিস’য়ের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, শরীরের কঙ্কালতন্ত্রের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখার প্রধান উপাদান এই ক্যালসিয়াম।

তবে আরও অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজেও এই খনিজ প্রয়োজন। যেমন- হৃদযন্ত্র, পেশি, হরমোন, স্নায়ু সবই সঠিকভাবে চলার জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়।

‘অস্টিওপোরোসিস’ বা হাড় ক্ষয়ে যাওয়া রোগ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও ‘কোলন ক্যান্সার’য়ের ঝুঁকি কমাতেও ক্যালসিয়ামের ভূমিকা আছে।

তবে এই খনিজ শরীরে নিজে উৎপাদন করতে পারে না। আর শরীর তার প্রয়োজন মাফিক যোগান না পেলে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম টেনে নেয়। আর তখনই হাড় দুর্বল হতে শুরু করে।

৫০ বা তার কম বয়সি একজন নারীর প্রয়োজন প্রতিদিন ১০০০ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম। পুরুষের ক্ষেত্রে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন চাই ১০০০ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম। আর বয়স বাড়লে লাগবে ১২০০ মি.লি. গ্রাম প্রতিদিন।   

সাপ্লিমেন্ট’য়ের ঘটনা

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিকের তথ্যানুসারে, ভোজ্য উৎস থেকে ক্যালসিয়ামের যোগান নেওয়ার তুলনায় ‘সাপ্লিমেন্ট’ নেওয়া সহজ। তবে তা সবার ক্ষেত্রে কাজ করে না।

অধিকাংশ মানুষই দৈনিক পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে পারেন না। তবে ‘সাপ্লিমন্ট’ সবচাইতে উপকারী তাদের জন্য যাদের ‘সাপ্লিমেন্ট’ দেওয়া হয়েছে ‘অস্টিওপোরোসিস’য়ের চিকিৎসা হিসেবে কিংবা যাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি অনেক বেশি।

যেমন রজঃবন্ধ হয়েছে এমন নারী কিংবা দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যারা খেতে পারেন না। যাদের ঘাটতি সামান্য তাদের জন্য ‘সাপ্লিমেন্ট’ নিরাপদ নাও হতে পারে।

কারণ ব্যাখ্যা করছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ অফিস অফ ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট (ওডিএস)’।

এই সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ক্যালসিয়াম যত বেশি ততই ভালো এই তত্ত্ব মানে না। ক্যালসিয়াম যদি প্রয়োজনের বেশি গ্রহণ করা হয়, তবে শরীরের তা শোষণ করার হার কমবে দ্রুত গতিতে। আর অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম শরীরের বিভিন্ন কোষে গিয়ে জমতে থাকে, যাকে বলা হয় ‘সফ্ট টিস্যু ক্যালসিফিকেইশন’। যা একাধিক সমস্যার প্রধান হোতা।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যানুসারে, ক্যালসিয়ামের এমন আচরণের জন্য পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের মাত্রার পাশাপাশি দিনে সর্বোচ্চ কতটুকু ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা যাবে সেটাও ঠিক করে দেওয়া হয়।

১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সিরা দিনে ২৫০০ মি.লি. গ্রামের বেশি ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে পারবেন না। বয়স যাদের আরও বেশি তাদের সর্বোচ্চ গ্রহণ করা যাবে ২০০০ মি.লি. গ্রাম পর্যন্ত।

২০১৬ সালে ‘জার্নাল অফ আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে সঙ্গে ‘করোনারি আর্টারি’তে ক্যালসিয়াম জমে যাওয়ার সম্পর্ক আছে। এটা যে শুধু ‘সাপ্লিমেন্ট’ নিলেই হয় তা নয়। তবে যারা ‘সাপ্লিমেন্ট’ নেন না তাদের এই সমস্যা হতে দেখা যায় না।

এছাড়াও ‘কোলন পলিপ্স’, বৃক্কে পাথর, হৃদরোগের পেছনেও ক্যালসিয়ামের যোগাযোগ আছে।

তাই যেকোনো ‘সাপ্লিমেন্ট’ নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষত ক্যালসিয়াম। 

ক্যালসিয়ামের ভোজ্য উৎস

ফ্লোরিডাতে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ‘এক্সিকিউটিভ হেল্থ প্রোগ্রাম’য়ের পুষ্টিবিদ ক্যানড্যান্স ও’নিল বলেন, “সিংহভাগ মানুষই পারেন খাবার থেকে দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে। ক্যালসিয়াম বলতেই সবার আগে দুধের কথা মাথায় আসে। কারণ দুধ, দই আর পনির হল সবচাইতে সুপরিচিত এবং সমৃদ্ধ ক্যালসিয়ামের উৎস।”

“তবে যারা দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে পারেন না, তারা বেছে নিতে পারেন বাদামের দুধ, সীম, কৌটাজাত সার্ডিন কিংবা স্যামন মাছ, ‘শিয়া সিডস’ ইত্যাদি। গাঢ় সবুজ রংয়ের শাকসবজিও ক্যালসিয়াম যোগায়, তবে সবগুলো নয়।”

বেছে নিতে পারেন ‘কেইল’, ব্রকলি, পালংশাক ইত্যাদি। পালংশাকের ক্যালসিয়াম আবার শরীরে শোষণ হয় কম। যার কারণ ‘অক্সালেটস’ নামক একটি উপাদান।

ও’নিল আরও বলেন, “ক্যালসিয়াম আছে এমন খাবার খেলেই যে শরীর ক্যালসিয়াম পেয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। কারণ শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ হওয়ার জন্য দরকার ভিটামিন ডি। এই ভিটামিন পাওয়াও সহজ নয়। খুব কম খাবারেই এটি মেলে।”

আর এই পুষ্টি উপাদানের অভাবেও ভোগেন অসংখ্য মানুষ। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি’য়ের অন্যতম প্রধান উৎস।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন: