বয়স পঞ্চাশ পেরোলে খাদ্যাভ্যাসে যা বারণ

বয়স যখন পঞ্চাশ ছুঁয়েছে তখন শরীরের কোনো সমস্যাকেই আর অবহেলা করার সুযোগ নেই।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2021, 05:50 AM
Updated : 30 August 2021, 05:50 AM

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ধুমপান, মদ্যপান বর্জন, নিয়মিত ব্যায়াম, প্রয়োজনীয় টিকা নেওয়া সবটাই করতে হবে নিয়ম মাফিক। সেই সঙ্গে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা হল এই বয়সের দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে সুরক্ষিত থাকা কিংবা তা নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যতম প্রধান বিষয়।

নিউ ইয়র্কভিত্তিক পুষ্টিবিদ মেলিসা রিফকিন বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ‘ডাইভার্টিকুলোসিস’ আর ‘ওস্টিওপোরোসিস’- এই শারীরিক সমস্যাগুলো পঞ্চাশের কোঠায় পৌছালে বেশ আশঙ্কাজনক হয়ে উঠে। বংশগত একটা যোগাযোগ আছে সবগুলো রোগেরই, তবে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনতে পারলে এই রোগগুলোকে সামলে রাখা যায়।”

‘ওস্টিওপোরোসিস’ বা হাড় ক্ষয়ে যাওয়া রোগ নিয়ে রিফকিন’য়ের মন্তব্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইটদিস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরেক সনদস্বীকৃত পুষ্টিবিদ সিডনি গ্রিন বলেন, “বয়স যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হাড়ে ফাটল ধরার আশঙ্কা। তাই এসময় হাড়ের দরকার ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি’য়ের পর্যাপ্ত যোগান।”

“আবার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভিটামিন বি টুয়েলভ শোষণ করার ক্ষমতাও কমতে থাকে। শরীর এই ভিটামিন প্রস্তুত করতেও পারেনা। তাই খাবার থেকে শোষণ করার ক্ষমতাও যদি কমে যায় তখন উপায় ‘সাপ্লিমেন্ট’।”

‘ভিটামিন বি টুয়েলভ’য়ের অভাবে অবসাদ, বুক ধড়ফড়ানি, খাওয়া রুচি হারানো, ওজন কমে যাওয়া, বন্ধ্যাত্ব্য ইত্যাদি দেখা দিতে পারে বলে জানায় ‘যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’।

পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ‘মোর রেজাল্টস’য়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পুষ্টিবিদ ড. ক্রিস্টোফার মোর বলেন, “পুষ্টি নিয়ে আলোচনায় ভোজ্য আঁশ অবহেলিত রয়ে যায় অনেকসময়। তবে জরিপ বলে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তাদের দৈনিক চাহিদার অর্ধেক ভোজ্য আঁশ গ্রহণ করেন না। আশার কথা হলো, এই সমস্যা সমাধান করতে কোনো খাবার বাদ দিতে হবে না কিংবা মানতে হবে না কোনো বিশেষ খাদ্যাভ্যাস।”

প্রক্রিয়াজাত খাবার

রিফকিন বলেন, “সকল প্যাকেটজাত খাবারই যে খারাপ তা নয়। তবে অধিকাংশ প্যাকেটজাত খাবারই তৈরি হয় প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে। ফলে তাতে থাকে আলাদাভাবে যোগ করা চিনি, লবণ, ‘ট্রান্স ফ্যাট’। এই উপাদানগুলো হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস’য়ের ঝুঁকি বাড়ায়। এজন্য এই খাবারগুলো কেনার সময় প্যাকেটের গায়ের ‘ইনগ্রিডিয়েন্ট লিস্ট’ বা উপাদানের তালিকা পড়ে দেখার অভ্যাস করতে হবে।”

বাইরে খাওয়া কিংবা প্যাকেটজাত এই খাবারগুলো খাওয়াকে নিয়মিত অভ্যাস বানানো যাবে না। আর যেদিন খাবেন তারপর কয়েকদিন ঘরের স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ভারসাম্য আনতে হবে।

গভীর রাতে খাওয়া

গ্রিন বলেন, “রাতে যদি কারও পর্যাপ্ত ঘুম না হয় তবে তার বিভিন্ন রোগ দেখা দেবেই। আর রাতের ঘুম নির্ভজাল হওয়ার উপায় হল ঘুমানোর দুতিন ঘণ্টা আগেই সকল খাওয়া বন্ধ করা। এতে হজমতন্ত্রে সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাবেন।”

গভীর রাতে ঘুমানোর আগেভাগে কিছু খেলে তা ওজন বাড়াবে। দেখা দেবে গ্যাস, পেট ফোলাভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া ইত্যাদি। ঘুম হল শরীরের নিজেকে মেরামত করার সময়, খাবার হজম করার নয়। শরীরকে সেসময় হজমে ব্যস্ত থাকতে হলে মেরামতের কাজ থমকে যাবে।

পানির অভাব

রিফকিন বলেন, “বয়স বাড়ার সঙ্গে তৃষ্ণা টের পাওয়া ক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে পানি পানের কথা ভুলতে থাকবেন। কারণ তৃষ্ণাই অনুভূত হচ্ছে না। একারণে বয়স যাদের পঞ্চাশের কোঠায় তাদের পানিশূন্যতা দেখা দেওয়া আশঙ্কা থাকে বেশি। এর প্রেক্ষিতে রক্তচাপ কমে, শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে, বমিভাব ও বমি হয়। আর পানিশূন্যতার সমাধান করা না হলে তা ডেকে আনতে পারে কোনো দূরারোগ্য ব্যধি, যেমন ‍বৃক্ক নষ্ট হওয়া।”

তিনি আরও বলেন, “বয়স বাড়ার সঙ্গে মানুষের পেশি কমতে থাকে, ফলে শরীরের পানি ধরে রাখার স্থান কমতে থাকে। এতে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়া আশঙ্কা আরও বাড়ে। এজন্য তৃষ্ণা না পেলেও নিয়ম করে পানি পান করতে হবে প্রতিদিন নুন্যতম দুতিন লিটার। প্রস্রাবের রং দেখে পানিশূন্যতা ইঙ্গিত বুঝতে হবে। সকালের প্রথম প্রস্রাবের রংটা কিছুটা গাঢ় হবে, তবে পরে তা হালকা হতে থাকবে। সারাদিন প্রস্রাবের রং স্বচ্ছের কাছাকাছি থাকবে।”

আঁশ কম এমন খাবার খাওয়া

ক্রিস্টোফার মোর বলেন, “খাদ্যাভ্যাস থেকে কোন খাবার বাদ দিতে হবে সেটা না ভেবে, বরং ভাবা উচিত কোন খাবারগুলো যোগ করতে হবে। ভোজ্য আঁশ আছে এমন সবজি ও ফল খাদ্যাভ্যাসে যোগ করতে হবে। এই খাবারগুলো পেট ভরা রাখে লম্বা সময়। যা ওজন নিয়ন্ত্রণ ও কমানো দুটোতেই সহায়ক।”

রিফকিন বলেন, “আঁশের অভাবে হজম, ওজন, রক্তে শর্করার মাত্রা বা কোলেস্টেরল সবকিছুতেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।”

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন