যে মতবিরোধে বিচ্ছেদের সম্ভাবনাই বেশি

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক যতই নিবিঢ় হোক, মতবিরোধ হবেই।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2021, 02:49 PM
Updated : 7 August 2021, 02:49 PM

বেশিরভাগ সমস্যাই দিনশেষে ভালোবাসার কাছে হার মানে। তবে কিছু মতবিরোধ থাকে যায় শিকড়ের অনেক গভীরে। ফলে বিচ্ছেদের সম্ভাবনা সেখানে ক্রমেই প্রবল হতে থাকে।

‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া-স্যান ডিয়োগো’ সম্প্রতি এই বিষয়ে জরিপ চালায়।

‘দ্য ইকোনমিক জার্নাল’য়ে প্রকাশিত এই জরিপে মোট ৫,৩শ’ জন জার্মান দম্পতির ২০০৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দাম্পত্য জীবনের তথ্য বিশ্লেষণ করে।

প্রতি বছরই এই দম্পতিদের বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়, যার সারমর্ম হল কর্মজীবন, খেলাধুলা, আর্থিক পরিস্থিতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে তারা কতটুকু ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক।

পরবর্তী সময়ে জরিপে বিবেচনায় আনা হয় শিক্ষাগত যোগ্যতা, সাংস্কৃতিক অবস্থান, ধর্ম ইত্যাদির ভিন্নতা।

দেখা যায়, স্বামী আর স্ত্রী দুজন কোনো বিষয়ে ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক আর কোনো বিষয়ে ঝুঁকি নিতে নারাজ- এই বিষয়ে যে মতবিরোধ থাকে সেটাই তাদের সম্পর্ক টিকবে কী টিকবে না, সেটা বড় নির্ধারক।

আর এর মধ্যে আর্থিক বিষয়ে ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছায় ভেদাভেদ থাকাটাই সম্পর্কের জন্য সবচাইতে ভয়ঙ্কর। কারণ এই মতোবিরোধের পরিণামে বিচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা অন্য সব কারণের তুলনায় দ্বিগুন।   

‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া-স্যান ডিয়োগো’র ‘র‌্যাডি স্কুল’য়ের ‘ইকোনমিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটেজি’র সহযোগী অধ্যাপক ড. মার্থা সিরা-গারসিয়া, এই জরিপের নেতৃত্ব দেন।

তিনি বলেন, “সংসারে অর্থ নিয়ে কলহ বাঁধলে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিচ্ছেদে গড়ায়। এর পেছনে প্রধান কারণ হল একজন সাবধানে খরচ করতে চায়, আরেকজন চায় তার উল্টোটা।”

বেস্টলাইফ ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “আর্থিক ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছা থেকে আসে বিনিয়োগের চিন্তা। যেমন পরিবারের জন্য বাড়ি কেনা হবে কি হবে না। এই ব্যাপারে স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে মতের মিল না হলে তা স্বভাবতই ধ্বংসাত্মক।”

তিনি আরও বলেন, “আর্থিক বিষয়ে মতবিরোধের কারণে অনেকসময় একটি পরিবার কোনো বিনিয়োগেই যেতে পারে না। আর সেটাও একসময় সম্পর্কে টানাপোড়ন সৃষ্টি করে। এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত যদি ভবিষ্যতে নিরাপত্তা বয়ে আনার মতো হয় তবে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই উচিত হবে তার জন্য অর্থ জোগাড় করার সম্মিলিত চেষ্টা করা। দুজনার চেষ্টায় ভালো একটা বিনিয়োগ সম্পর্কের ভিত্তিকেও জোরদার করে।”

“মনে রাখতে হবে, সংসারের সকল জিনিস তার সদস্যদের সবাই ব্যবহার করেন। তাই সেগুলো কেনা, রক্ষণাবেক্ষণের খরচে সদস্যদেরও অংশগ্রহণ থাকা উচিত। আবার সংসারে দুটো আয়ের উৎস থাকলে সেগুলো সমান নিরাপদ হয় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। ফলে যার আয়ের উৎসে নিরাপত্তা কম, তার ঝুঁকি নিয়ে ভয়টাও থাকবে বেশি।” বলেন এই অধ্যাপক।

এভাবেই ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষেত্রে দুজনার মানসিকতায় পরিবর্তন আসে। এক্ষেত্রে একে অপরকে নিরাপত্তা দেওয়া সদিচ্ছা থাকাটাই সমস্যার সমাধান।

সময়ের সঙ্গে ঝুঁকি নেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলায়।

জরিপে দেখা যায়, দাম্পত্য সম্পর্কে থাকা দুটো মানুষ ক্রমেই একে অপরের মতো হতে থাকে। দুজনার দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনের পরিক্রমায় একসময় ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা মিলে যেতেও দেখা যায়। একে অপরের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে যে দম্পতি মতবিরোধ থেকে মতের মিল ঘটাতে পারেন তাদের সম্পর্কের বন্ধনটা হয় অত্যন্ত মজবুত।

আরও পড়ুন